– মোশারফ হোসেন মুন্না।
পূরনো কথার স্মৃতিচারণায়, সঙ্গীতাঙ্গনের বিশেষ ভাবনায় এলো প্রয়াত হয়ে যাওয়া গুণী ব্যাক্তির কিছু মজার কথা। যা শুনে বুঝতে পারবেন সঙ্গীত চর্চার অতীত পরিবেশ কেমন ছিল। বিশিষ্ট সুরকার রবিন চট্রোপাধ্যায় বলছেন রবিন মজুমদারকে একটি গান গাইতে।
কিছুতেই গানটি গাইবেন না গায়ক নায়ক রবিন মজুমদার। আর জনপ্রিয় সুরকারও ছাড়বেন না। রবিন মজুমদার বলছেন, এই গান আমি গাইবই না। আর সকলের প্রিয় তখনকার গানের পাগল করা সুরকার বলছেন, আপনাকে গাইতেই হবে। আপনাকে এই গানের জন্যই মানুষ মনে রাখবেন। অবশেষে রবিনবাবু রাজি হলেন। গানটি গাইলেন। ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল গানটি। গানটি ছিল ‘আমার আধার ঘরের প্রদীপ যদি নাইবা জ্বলে’। সুরকার ছিলেন রবিন চট্টোপাধ্যায়। গানটির জনপ্রিয়তা আজও সমান।
তৎকালীন সময়ে কলেজ স্ট্রিটে মেগাফোন কোম্পানির বিশাল সেই অফিস। খোলামেলা বিশাল বাড়ির বেশ কয়েকটা ঘর নিয়ে সেখানে দিনরাত সুরকার শিল্পীরা সুর সাধনায় মগ্ন। চেয়ারে বসে থাকতেন সম্প্রতি প্রয়াত কমলকুমার ঘোষ। কে না আসতেন ওই অফিসে। আসতেন নজরুল ইসলাম। তাঁর একখানি ঘর ছিল। সেখানে গান লেখা, সুর করা এবং আড্ডা বসতো। অনেক বিখ্যাত গান এখানে বসেই সৃষ্টি করেছিলেন নজরুল। যখন তখন গান লিখে দিতেন এই কোম্পানিকে। আসতেন গীতিকার প্রণব রায়। ওখানেই লিখেছেন তাঁর জনপ্রিয় অনেক গান। গেয়েছেন অনেকে। নজরুলের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, এখানে বসেই সুর করেছেন অনেক গানের। এখানে বসেই শিখিয়েছেন শিল্পীদের গান। সেই সব গান আজও লোকের মুখে মুখে।
এছাড়াও এখানের একটি ঘরে ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় বসতেন। মূল প্রশিক্ষক হিসেবে ওই ঘরে বসেই সুর সৃষ্টি করেছেন অনেক গানের। এরপরে আসতেন সলিল চৌধুরী, সুধীন দাশগুপ্ত, কমল দাশগুপ্ত, নচিকেতা ঘোষ। আসতেন এবং এখানে বসেই গান লিখতেন সুবোধ পুরকায়স্থ, মোহিনী চৌধুরী, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরী কোন কোন দিন হঠাৎ হাজির হতেন। এসেই বলতেন, কমল খিদে পেয়েছে। কমলবাবু বলতেন, আপনি ও ঘরে সুর সাধনার কাজ করুন। আমি ব্যবস্থা করছি খাবার। সলিলবাবু নিজে খেতে খুব পছন্দ করতেন ডাবের জলের সরবত। কমলবাবুর ভাই অমল ঘোষ বললেন, আমাদের একদিন বললেন, ওসব ঠাণ্ডাপানীয় খাস কেন? ডাবের জলের সরবত খাওয়াচ্ছি। দেখ, কেমন খেতে। খাওয়া হতো। তারপরই ডুবে যেতেন গানে। গুনগুন করতেন। সুর করতেন। এখানে ট্রেনারও ছিলেন।
২০১০ সালে বাংলাদেশের কালি ও কলম পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে কমলবাবু বলেছিলেন, আখতারি বাঈ-এর কথা। কমলবাবুর জ্যাঠামশাই জে এন ঘোষ একবার কোথায় বেড়াতে গিয়ে আখতারির গান শুনেছিলেন। তাঁকে এখানে এনেছিলেন। বহুদিন উনি তালিম নিয়ে এখানে গান গেয়েছিলেন। এই বাড়িতে বসেই বেগম আখতার গেয়েছিলেন ‘দিওয়ানা বানানা হ্যায়…’। কাননদেবী গেয়েছিলেন সেই বিখ্যাত গান ‘আমি বনফুল গো’।
তথ্য সংগ্রহ – কালি ও কলমে’র লেখক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল আহেসান চৌধুরী’র লেখা ও অমল ঘোষের বক্তব্য থেকে।