– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।
আবুল হাসান ইয়ামিন উদ-দিন খসরু যাকে সবাই আমির খসরু বলে জানেন ও চিনেন। একজন সুফি কবি। তিনি ফার্সি ও হিন্দি দুই ভাষায় লিখেছিলেন। তিনি ছিলেন নিজামুদ্দিন আউলিয়ার আধ্যাত্মিক শিষ্য। ইনি কেবল কবি ছিলেন না, ছিলেন এক অনন্য গায়ক। তাকে তবলা ও সেতার যন্ত্রের উদ্ভাবক বলে মনে করা হয়। তিনি প্রাচীনতম জ্ঞাত মুদ্রিত অভিধান “খালীক-ই-বারি” লিখেছিলেন। তাকে “কাওয়ালির জনক” বলে গণ্য করা হয়। তিনি প্রথম ভারত ও পাকিস্তানে গজল গানের প্রথা চালু করেন। তা আজ ও চলে আসছে। তিনি ফার্সি, আরবি এবং তুর্কি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে সমৃদ্ধ তোলেন।
তিনি উত্তর প্রদেশের পাতিয়ালা এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল আমির সাইফ উদ-দিন মাহমুদ, একজন তুর্কি। তার মা ছিলেন এক রাজপুত কন্যা। তিনি প্রথম আট বছর বয়েসে প্রথম কবিতা লেখেন। ১২৭১ তার দিদা ১১৩ বছর বয়েসে মারা যাবার পর তিনি দুঃখিত হয়ে পড়েন। ১২৯৮ সালে তার মা ও ভাই মারা যান। এই ধাক্কাটি তার উপর বিভীষিকার মতো আছড়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে তাকে সঙ্গীত থেকে বের হতে সাহায্য করে। তিনি সুলতান বলবানের সৈনিক হিসেবে যোগদান করেন। অত্যন্ত সম্মানিত রয়েল কোর্টের বিধানসভার আশ্রয়ে তিনি তার কবিতার দিকে মনোযোগ করেন। বলবানের পুত্র বুঘ্র খান তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে অসংখ্য সোনার কয়েন দিয়ে পুরস্কৃত করেন। তাকে তিনি বাংলার শাসনকর্তা বানান কিন্তু তিনি দিল্লিতে ফিরে আসেন। জালালুদ্দিন খিলজি ক্ষমতায় আসার পর তাকে “আমারত” উপাধিতে সম্মানিত করেন। তখন থেকেই তার নাম হয় “আমির খসরু”। পরে তিনি আলাউদ্দিন খিলজি ও তার পুত্র এর জন্য বেশ কিছু কবিতা ও গান লেখেন। তার জন্ম ১২৫৩ সালে। ১২৬০ সালে তার বাবার মৃত্যুর পর মায়ের সাথে দিল্লি যাত্রা করেন।
আমির খসরু ছিলেন প্রখ্যাত সুফি-সাধক বা আরেফ নিজামউদ্দিন আওলিয়ার ছাত্র ও তার অন্যতম খলিফা। তাকে ‘ভারতের তোতা ‘ উপাধি দেয়া হয়েছিল। খসরু ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতে নানা ধরনের পারসিক, আরবি ও তুর্কি রীতি যোগ করেন এবং সঙ্গীতে ‘খেয়াল’ ও ‘তারানা’ জাতীয় ধারার প্রবর্তন করেন। তিনি সেতার ও তবলার আবিষ্কারক।
দিল্লির সুলতানরা সাধারণ মানুষদের সাথে যোগাযোগের জন্য তাকে একটি ভাষা তৈরি করতে বলেন। তারই ফল আজকের উর্দু ভাষা। ফার্সি, আরবি, তুর্কি ও সংস্কৃত ভাষায় পটু খসরু এই ভাষাগুলির সাথে খারিবলি ভাষা মিশিয়ে তৈরি করেন এই ভাষা। ফার্সি, আরবি, তুর্কির সাথে উর্দু ভাষাতেও তিনি প্রচুর লিখতেন।
সুরের জাদুকর খসরু তৈরি করেন তবলা। আরবি ভাষায় “তাব্ল” কথার অর্থ “ড্রাম”। সেতার যন্ত্রও তার তৈরি। ফার্সি ভাষায় সেতার শব্দের অর্থ “তিন তার”। তবলাকে মধ্য এশিয়া থেকে আসা যন্ত্র বলে মনে করা হয়। এই দুই যন্ত্রই হিন্দুস্থানি সঙ্গীতের সাথে ব্যবহৃত হয়। গানের সাথে এই গুলি ব্যবহার করলে তা আরও মধুর হয়।