প্রিয় পাঠক,
অভিনন্দন এবং ভালোবাসা নিবেদন করছি আপনাদের প্রতি। সঙ্গীতাঙ্গন এর উদ্দেশ্য সবসময়ই দেশের সকল সুরকার, গীতিকার, শিল্পী এবং সব ধরনের মিউজিসিয়ানদের পাশে থেকে আমাদের দেশীয় সঙ্গীতকে অনেক দুর এগিয়ে দুর নিয়ে যেতে। আমরা চাই সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে যেকোনো গানের আসল স্রষ্টা সম্পর্কে জানুক। এ জন্য আমরা সব সময় আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি।
কারণ দেশের একাধিক চ্যানেলে এ প্রজন্মের শিল্পীরা গানটির স্রষ্টাদের নাম না বলতে পেরে সংগ্রহ বলে থাকেন। এতে গানের মূল স্রষ্টা ব্যথিত হোন, এমন অনেক অভিযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই একটি গানের মূল স্রষ্টাকে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে আমরা বহুদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি, শুধুমাত্র সঙ্গীতকে ভালোবেসে। এবারের বিষয় ‘একটি গানের পিছনের গল্প’ আমাদের অনেক প্রিয় একজন সঙ্গীতপ্রেমী ভাই জনাব মীর শাহ্নেওয়াজ সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে জানাবেন আমাদের প্রিয় গানের পিছনের গল্প। এবং দেশের বরেণ্য সকল শ্রদ্ধাভাজন শিল্পীগন আপনারাও নিজ দায়িত্বে সঙ্গীতাঙ্গনের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনার নিজ সৃষ্টি অথবা আপনার প্রিয় গানের গল্প। এতে আর এ প্রজন্মের শিল্পীরা ভুল করবেন না গানের স্রষ্টাকে চিনতে।
আসুন সবাই গানের সঠিক ইতিহাস জানতে একতা গড়ি। – সম্পাদক
– তথ্য সংগ্রহে মীর শাহ্নেওয়াজ…
সত্যজিৎ রায়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা (১৯৬২) আর ঠাকুর বাড়ির মেয়ে তথা বউমা এবার মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল। আমরা যখন ছবির চরিত্রাভিনেত্রী করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শুনি সেই প্রাণঢালা গান – ‘এ পরবাসে রবে কে’ তখন জানতেও পারি না যে এরই মধ্যে ঘটে গিয়েছে এক বিদুষীর ঘরোয়া পর্দার আড়াল থেকে চলচ্চিত্রের পর্দার অন্তরালে গান নিয়ে ফিরে আসার এক অম্ল-মধুর ঘটনা পরম্পরার কাহিনী।
জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির বউ হয়ে অমিয়া যখন চলে গেলেন তখন থেকেই বলতে গেলে তিনি চোখের আড়ালে নিজেকে সরিয়ে নিলেন। তার আগে পর্যন্ত ঠাকুর বাড়ির অন্য শরিকের মেয়ে হিসেবে বিবিধ অনুষ্ঠানে নাচে, গানে নাটকে কোথায় নেই অমিয়া। বলতে গেলে রবিদাদার মায়ার খেলা-র সূত্রেই তো ঠাকুর বাড়ির দু-পুলিয়া পাটে বউ হয়ে এলেন অমিয়া। কিন্তু প্রকাশ্যে অভিনয় কিম্বা গানে তাঁর স্বামীর আগ্রহ ছিল না বলে অন্তঃপুরের জীবনকে সাদরেই গ্রহণ করেছিলেন অমিয়া ঠাকুর। যদিও এই মেয়ে তাঁর বাবার আগ্রহে গান শিখেছিল বিষ্ণুপুর ঘরের গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তাছাড়া চিরকাল এমনটাই তো হয়েছে যে, হিন্দি ভাষার গান যখনই শুনতে ইচ্ছে করেছে, তখনই রবিদাদা ডেকে পাঠিয়েছেন অমিয়াকেই। গান পরিবেশনের অমন ধ্রুপদী চাল ওবাড়িতে আর ক’জনের ছিল তা হাতে গুণে বলা যায়। ওদিকে ভেতরে ভেতরে শাশুড়ি-মা কিন্তু উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন অমিয়াকে গান করার জন্য। তাই গানের চর্চাটা হারিয়ে গেল না।
এসব কোনও খবরই অজানা ছিল না সত্যজিৎ রায়ের। তিনি চাইলেন তাঁর সিনেমায় রবীন্দ্রনাথের গানটিকে ঠাকুর বাড়ির আঙিনার সঙ্গে জুড়ে নিতে। তাই সটান হাজির হলেন অমিয়ার বাড়িতে। উদ্দেশ্য কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবির জন্য একটা গান চাই। খালি গলায় গাইতে হবে সে গান। সেই দৃশ্য তোলা হবে দার্জিলিঙের ম্যালে। এর আগে মাসতুতো বোনেরা মানে লীলা দেশাই, মনিকা দেশাইরা অনেকবার অনুরোধ করলেও ফিল্মে কণ্ঠ দেওয়ার ব্যাপারে নিজেকে সরিয়েই রেখেছিলেন অমিয়া ঠাকুর। এই বোনেরাও ছিলেন হিন্দি ছবি জগতের দুরন্ত অভিনেত্রী। কিন্তু এবার গড়পাড়ের সুকুমার বাবুর ছেলেকে ফেরালেন না অমিয়া। মনে মনে ভাবলেন রবিদাদার গান কত নাটকেই তো গেয়েছেন ঘরোয়া ভাবে। তাহলে ছবিতেই বা নয় কেন? তাও আবার এটা যখন মানিকবাবুর ইচ্ছে তাঁকে ফেরানোটা কোনও কাজের কথা নয়। তাই এবার দীর্ঘদিনের আঁকড়ে থাকা সিদ্ধান্তটিকে এক লহমায় বদলে নিলেন তিনি। ঠাকুর বাড়ির বউ গান গাইলেন সিনেমায়। বিরক্তও হলেন না সিনেমায় গান দেওয়ার সময়ে ‘এখানে থামুন’, ‘আবার করুন’ ইত্যাদি হঠাৎ হঠাৎ নির্দেশের জন্য। দরদ ঢেলে গানটি খালি গলায় গাইলেন পর্দার অন্তরালে, গৃহ-পর্দার আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে। তৈরি হল একটি ঐতিহাসিক দৃশ্য, সঙ্গে গান, ‘এ পরবাসে রবে কে’…।
১) কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবিতে গেয়েছেন অমিয়া ঠাকুর
https://www.youtube.com/watch?v=ZE4FllhFSSc
২) শিল্পীঃ অমিয়া ঠাকুর
https://www.youtube.com/watch?v=4vTF3ZCRHNg