– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।
ভালো লাগা ভালোবাসা এই নিয়েই পৃথিবী। মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষ মানুষকে ভালোবাসে বিভিন্ন কারণে। কারো রুপ গুনে বিমহিত হয়ে। কারো অর্থবিত্তে বিমহিত হয়ে আবার কাউকে ভালোবাসে তার ভালো কর্মের জন্য। মানুষের ভালোবাসা শ্রদ্ধা প্রেম, সম্মান পেতে হলে অনেক যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। সবার দ্বারা সেই যোগ্যতা অর্জন সম্ভব হয়ে ওঠে না। মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে মানুষ আগে স্বার্থহীন ভাবে মানুষকে ভালোবেসে যেতে হবে। তাহলে মানুষ মানুষের প্রতি ভালোবাসা দেখাবে। এমনই একজন মানুষ যে সব সময় ভাবেন কি করে মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়। শিল্পী, সুরকার, এমন কি সঙ্গীত পরিচালকও নন। শুধু হাতের লিখনীর মাধ্যেমে মানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি হলেন লক্ষ ভক্তের চোখের মনি গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়জী।
ভক্তদের ভালোবাসার উচ্ছ্বাসে, প্রতিদিনই নিজেকে সমৃদ্ধ করতে চান, হাজারো ভক্তের ভালোবাসায় সিক্ত গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী। ভাবনার অতল গভীর থেকে নিজেকে তুলে এনে তিনি বলেন, যদি এমন হতো, ভক্তদের সব ভালোবাসা জমাট করে কোনো কফিন বানানো যেতো আর সেই কফিনে আমার মৃতদেহ রেখে আমাকে মাটি চাপা দিতে পারতো, তবে ভক্তদের ভালোবাসা নিয়ে এপার ওপার দু’পারেই মুগ্ধ থাকতে পারতাম আমি।
গানের জগতে ভক্ত শব্দটি জড়িয়ে থাকে শিল্পীর সঙ্গে। একজন শিল্পীর গান শুনে তৈরি হয় তার ভক্ত। শহীদুল্লাহ ফরায়জী শিল্পী নন, সুরকার কিংবা সঙ্গীত পরিচালকও নন, তবু তারও রয়েছে অজস্র ভক্ত-শ্রোতা। শুধু গান লিখে নিজস্ব একটি ভক্ত শ্রেণী তৈরি করা এবং প্রতিনিয়ত তাদের ভালোবাসায় অবগাহন করা বাংলা গানের ইতিহাসে খুব কম গীতিকারের পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। এ ক্ষেত্রে শহীদুল্লাহ ফরায়জী-ই সবচেয়ে সফল ব্যক্তি। দেশে ও দেশের বাইরে হাজারো ভক্ত-শ্রোতা রয়েছে তার। তাদের কেউ চিঠি লিখে, কেউ ফোন করে, কেউ এসএমএসের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত শুভেচ্ছা জানান তাকে। অনেক ভক্ত আবার প্রিয় গীতিকারের জন্য নানা রকম উপহার সামগ্রী পাঠান। এছাড়া প্রতি জন্মদিনে নানা রকম উপহার পান তিনি। সঙ্গীতাঙ্গনের সাথে আলাপ কালে কথা গুলো বলেন গীতিকবি শহিদুল্লাহ ফরায়জী। ভালোবাসায় লক্ষ ভক্তের আপন মানুষ, প্রিয় মানুষ, সেই শহিদুল্লাহ ফরায়জীর শুভ জন্মদিন আজ। তার জন্মদিনে কোন টক শো বা টেলিভিশন আয়োজন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিভি কিংবা বাড়ি কোথাও কোন অনুষ্ঠান করবো না। জীবন চলে যাচ্ছে, চলে গেছে অনেক দিন। আমি ভাবি জীবনে কতটা স্বার্থকতা পেয়েছি। জীবনের দায় বহন করতে পেরেছি কিনা। এগুলো মনে হয়। এই বিষয় গুলো আমাকে খুব পিড়া দেয়। ভাবি জীবনকে কি অনুসন্ধান করতে পেরেছি কিনা। মানুষ ক্রমান্বয় ধ্বংসের দিকে যায়। মৃত্যুর দিকে যায়। জীবনে কিছু করতে পেরেছি কি না সেই কথা ভাবি। জন্মদিন এটা বড় কিছু না। জন্ম সার্থক হয়েছে কিনা সেইটা বড় করে দেখি। গান লিখতে গিয়ে আমি মানুষের অনেক ভালোবাসা সম্মান পেয়েছি। মানুষ যে আমাকে স্বার্থহীন ভাবে ভালোবাসে এটাই আমার জীবনের স্বার্থকতা।
তার গানের কথা আর ভাব মাধুর্যে মানুষ অনেক তাড়াতাড়ি আপন হয়ে যায়। প্রতিভা বলে একটা ব্যাপার থাকে যা পরিপক্ব হয়ে ফুটে উঠেছে গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জীর মাঝে। যার কারণে শ্রোতামহল অতি তাড়াতাড়ি তাকে আপন করে নিয়েছে। গানে হাতে খড়ি কবে থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৯৯০ সালে আমি সর্বপ্রথম গান করেছিলাম টেলিভিশনে। প্রথম গানটি গেয়েছিল জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রফিকুল আলম আর স্বাম্মী আক্তার। এই দু’টি গান টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছিল। এর সুরকার ছিল শাহনেওয়াজ। সেই থেকে আমার গানে যাত্রা শুরু। তার কাছে জানতে চাইলাম বর্তমান সঙ্গীত জগৎ নিয়ে। প্রযুক্তি নির্ভর সঙ্গীতে এখন অনেক পরির্তন এসেছে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে শ্রোতারা কি গান কে মনে রাখছে কিনা ? এখন তো সিডি বা ক্যাসেট নাই এখন ভিডিও চলছে গান শুনার চেয়ে গান হয়ে গেছে দেখার বিষয়। নানান প্রসঙ্গে কথা বলে ভিতরের জমে থাকা আনন্দ বেদনা, ইচ্ছা আকাংখা সব জানা গেল। এই ধরনের মানুষই হলো প্রকৃত মানুষ।
সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে শহীদুল্লাহ ফরায়জীর জন্য জন্মদিনের শুভেচ্ছা, শুভ জন্মদিন।