– শাহরিয়ার খান সাকিব।
জীবনের শেষ সন্ধ্যার আঁধারের সাথে অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো সঙ্গীতের রাজমুকুট কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোর। তার নিজের শহর রাজশাহীতে একটি ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন তিনি। সন্ধ্যা সাতটায় মারা গেছেন তিনি। মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছেন শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। চলে গেলেন বাংলাদেশের গর্ব। শূন্য করে গেলেন সঙ্গীতাঙ্গনকে। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কন্ঠশিল্পী দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে আসছিলেন। টানা ৯ মাস সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়ে গত ১১ জুন তিনি একটি বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরেন। তারপর থেকে রাজশাহীতে বোন শিখা বিশ্বাসের সঙ্গে বসবাস করছিলেন তিনি। শারীরিক অস্থার অবনতি হওয়ায় তিনি বোনের পরিচালিত ক্লিনিকে ভর্তি ছিলেন। এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুতে সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে। কেনই বা শোকের কালো ছাঁয়া নামবে না। তিনি অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন সেই জন্মভূমির মাটিতেই।
জন্মের পর রাজশাহীতেই কেটেছে এন্ড্রু কিশোরের শৈশব ও কৈশোর। এন্ড্রু কিশোর প্রাথমিকভাবে সঙ্গীতের পাঠ শুরু করেন রাজশাহীর আবদুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। একসময় গানের নেশায় রাজধানীতে ছুটে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলসঙ্গীত, আধুনিক গান, লোকগান ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতীজ্ঞা চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানে প্রথম দর্শক তার গান শুনে এবং গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর আর চলচ্চিত্রের গানের জন্য পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেন বাংলা চলচ্চিত্র প্লেব্যাক সম্রাট।
এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেঁয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যে খানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায়, পড়ে না চোখের পলক, পদ্মপাতার পানি, ওগো বিদেশিনী, তুমি মোর জীবনের ভাবনা, আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল প্রভৃতি। আমরা তার আত্নার শান্তি কামনা করি।