– শাহরিয়ার খান সাকিব।
গান জীবনের অর্থ। গান মনের প্রশান্তি। গান জীবনের না ভোলা স্মৃতির পাতা। সেই গানকে ভালোবেসে গানের সাথে মিশে অনেকে জীবনে গড়েছে সুখের মিতালী। সেই অনেকের ভীড়ে, কথা ও সুরের নীড়ে একজন মিল্টন খন্দকার। তাকে শিল্পী তৈরির কারিগর বলা হয়ে থাকে।
মিল্টন খন্দকার বলেন, আসলে আমাকে শিল্পী তৈরির কারিগর বলাটা মনে হয় আমার জন্য একটু বেশি হয়ে যায়। তারপরও আমাকে এটাই বলে সবাই। কারণ হলো, আমি সব সময় নতুনদের নিয়ে কাজ করেছি। নতুনদের নিয়ে নিরীক্ষা করতে পছন্দ করি। সাফল্যও পেয়েছি বেশিরভাগ সময়ই। আজকের তারকা শিল্পী ডলি সায়ন্তিনী, মনির খান, মনি কিশোর, বাদশা বুলবুল, পলাশ, এস ডি রুবেল, সাজু, মহসিন খান, নাসির, রোকসানা মমতাজ, সুমন বাপ্পীরা আমার আয়োজনে গান করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এছাড়াও বহু জনপ্রিয় গান লিখেছি ও সুর-সঙ্গীতায়জন করেছি আব্দুল হাদী, এন্ড্রু কিশোর, কনকচাঁপা, আসিফ আকবরের মতো শিল্পীদের জন্য। তিনি মিল্টন খন্দকার। গানের কথা ও সুরের এই ফেরিওয়ালা ১৯৬৭ সালে কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ায় এক প্রগতিশীল, সংস্কৃতিমনা ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা খন্দকার আহমেদুল হক ছিলেন পেশায় পুলিশ কর্মকর্তা। বাবার কাছে গান নিয়ে তিনি তেমন কোন উৎসাহ না পেলেও তার মা তাকে উৎসাহ দিয়েছেন সব সময়।
আট ভাই এক বোনের মধ্যে মিল্টন খন্দকার ষষ্ঠ। সদাহাস্য, নিরহংকারী এই গুণী মানুষটি ১৯৮৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ৩৫০০ গান উপহার দিয়ে আমাদের টেলিভিশন, রেডিও, অডিও ও সিনেমা শিল্পের গানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। কয়েকশত তুমুল শ্রোতাপ্রিয় গানের জননন্দিত এই গীতিকবি ও সুরস্রষ্টা ২০১৩ সালে ‘খোদার পরে মা’ ছবির গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসাবে বাংলাদেশ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। মিল্টন খন্দকার জানান, ছাত্রাবস্থায় অভিনয়ের প্রতি অনুরক্ত হয়ে সম্পৃক্ত হন ‘বোধন কুষ্টিয়া নাট্যসম্প্রদায়’র সাথে। অভিনয় করেন অনেক মঞ্চ নাটকে। নাট্যচর্চা করতে গিয়ে কণ্ঠসাধনার প্রয়োজন হওয়ায় ওস্তাদ খন্দকার মিজানুর রহমান বাবলুর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তার উৎসাহে গানের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে পরে ঢাকায় এসে ভর্তি হন সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ে। ১৯৮৭ সালে তিনি নিজের লেখা ও সুরে হাসান চৌধুরীর কণ্ঠে ‘সেই তুমি’ এ্যালবাম নিয়ে অডিও বাজারে প্রবেশ করেন। ‘বেতার জগত’ থেকে প্রকাশিত সেই প্রথম এ্যালবাম হিট হয়। তারপর ১৯৮৮ সালে দিলরুবা খান এবং ১৯৮৯ সালে ডলি সায়ন্তনীর গাওয়া ‘হে যুবক’ অডিওশিল্পে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করে। সুপার-ডুপার হিট হয় গানটি। মিল্টন খন্দকার বলেন, ১৯৯৬ সালে অডিও বাজারে আরেক বিস্ময় হিসাবে নিয়ে আসি মনির খানকে। ‘তোমার কোন দোষ নেই’ নামের মনির খানের গাওয়া সেই এ্যালবামটিও সুপার-ডুপার হিট হয়। তারপরের ইতিহাস কম বেশি সবার জানা। অঞ্জনা শিরোনামে ৪৩টির মতো গান লিখে মনির খানকে নিয়ে ১৪টি একক এ্যালবাম করে দেশ মাতিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া নতুন গীতিকবি তৈরির জন্য ১৯৯৭ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘গীতি কাব্য চর্চা কেন্দ্র’। সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় দুই হাজার নবীন গীতিকবি হাতে কলমে গান লেখার কলাকৌশল চর্চা করে গেছেন গীতিকাব্য চর্চা কেন্দ্র থেকে। ১৯৯০ সাল থেকে ‘ঘেরাও’ সিনেমা দিয়ে শুরু করেন সিনেমায় গান লেখা। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ সিনেমায় গান লিখেছেন। তার তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া গানগুলোর মধ্যে- মা তুমি আমার আগে যেও না গো মরে, আমি যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি মা, সবুজের বুকে লাল উড়বেই চিরকাল, খুব কাছাকাছি তুমি আমি আছি, রঙচটা জিন্সের প্যান্ট পরা, ও সাথীরে যেও না কখনো দূরে, তোমরা কাউকে বলো না, আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু, তোমার কোন দোষ নেই, চাঁদেরও ঈর্ষা হবে তোমায় দেখে, চিন্তার চেয়ে চিতার আগুন ভালো ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে তিনি গান লেখা ও সুরসৃষ্টির পাশাপাশি সঙ্গীত পরিচালনার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সঙ্গীত নিয়ে ব্যাস্ত এই সহজ-সরল মানুষটির আজ শুভ জন্মদিন।সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
সিনেমা ও অডিওতে তার জনপ্রিয় কিছু গান :
১. খুব কাছাকাছি তুমি আমি আছি
২. রঙচটা জিন্সের প্যান্ট পরা
৩. আমি পাথরে ফুল ফোটাবো
৪. ও সাথীরে যেও না কখনো দূরে
৫. আমি যে তোমার কে কাছে এসে
৬. তোমরা কাউকে বলো না
৭. আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু
৮. তোমার কোন দোষ নেই
৯. খ্রিষ্টান হইলে কফিনে
১০. চাল নেই চুলো নেই
১১. জানি আর কোন দিনও আমার হবে না
১২. সুখে থাকা হলো না আমার
১৩. লাল বেনারসি
১৪. আজকে তোমার গায়ে হলুদ
১৫. ও প্রিয়জন বড় আয়োজন করে
১৬. মা তুমি আমার আগে যেও না গো মরে
১৭. আমি যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি মা
১৮. সবুজের বুকে লাল উড়বেই চিরকাল
১৯. চাঁদেরও ঈর্ষা হবে তোমায় দেখে
২০. চিন্তার চেয়ে চিতার আগুন ভালো