– মোশারফ হোসেন মুন্না।
আসলে যে কোনও সাফল্য বা অর্জনের মূলেই থাকে একটা আকাঙ্খা বা স্বপ্ন। এটাই আসলে মানুষকে দিয়ে পরিশ্রম করায়, এটাই মানুষকে অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা করতে উৎসাহ দেয়। যার মাঝে স্বপ্ন নেই তার মাঝে আসলে আশা বা উৎসাহ নেই। সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা, ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস, ছোট অবস্থায় থেকেও জীবনে বড় অর্জন করার সংকল্প – সবকিছুর উৎসই আসলে স্বপ্ন।
তুমি নিজে না চাইলে তোমাকে কেউ তোমার স্বপ্নের পথ থেকে সরাতে পারবে না। কিন্তু উপরওয়ালা চাইলে যে স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে হয়। তবে বেচেঁ থাকলে স্বপ্ন দেখতে হবে, স্বপ্নের বীজ বুনতে হবে, স্বপ্নকে সত্যি করার জন্য লড়াই করতে হবে। বিশ্বখ্যাত জার্মান কবি ও দার্শনিক জোহান গেথে বলেছিলেন, ‘যদি কাল কিছু অর্জন করতে চাও, তবে আজ থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু করো’, কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নের স্থানেই রয়ে গেল পূরণ হলো না । জীবন সৌন্দর্যে পূর্ণ। মৌমাছির দিকে তাকাও, শিশুদের হাসি মুখের দিকে তাকাও। বৃষ্টির ঘ্রাণ নাও, বাতাসের স্পর্শ নাও। জীবনকে পূর্ণভাবে উপভোগ করো, আর নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রয়োজনে লড়াই করো’ কিন্তু সেই লড়াই প্রকৃতির নিয়মে যেন এক নিমিষেই ক্ষান্ত হয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় দেখা স্বপ্ন গুলো। বাস্তব হয়না সেই স্বপ্নগুলো যা তিল তিল করে মনের গভীরে সাজানো ছিল। কথায় আছে, ‘পথ যেদিকে নিয়ে যায় সেদিকেই যেও না। যেদিকে কোনও পথ নেই, সেদিকে হাঁটো এবং নিজের চিহ্ন রেখে যাও’। লক্ষতো সেদিকেই ছিল নিজের চিহ্ন রেখে যাওয়ার স্বপ্নতো দেখেছেন কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো কোথায়! মাঝরাতে যেন স্বপ্ন ভেঙে গেল! হয়তো ভাবছেন এত গুনকীর্তন, স্বপ্ন নিয়ে ব্যাখ্যা কেন দিচ্ছি কার জন্য দিচ্ছি ? সেই মানুষটি হলো বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের পুরোধা কিংবদন্তি লিজেন্ড জনপ্রিয় শিল্পী লাকী আখন্দ।
মানুষ প্রতিনিয়ত কতভাবে কত জিনিসকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে তেমনি স্বপ্ন দেখেছিলেন লাকী আখন্দ। মিসেস লাকী আখন্দ জানান, আমার স্বামীর সবচেয়ে বড় একটা স্বপ্ন হলো, তার অবর্তমানে তার ছেলে যেন তার জায়গা দখল করে। যদিও ছেলে এখন অনেক ছোট তারপরও তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তিনি তার বাবার গানগুলো কিছু কিছু গাইতে চেষ্টা করেন। লাকী আখন্দ স্বপ্ন দেখেছিলেন তার ছেলে একদিন তার চাইতেও অনেক বড় নামকরা গায়ক হবেন। কিন্তু তিনি স্বপ্ন দেখেছেন, স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা তার নিশ্চয়তা তিনি জানতেন না, কিংবা তিনি দেখে যেতে পারলেন না। মিসেস লাকী আখন্দ বলেন আমিও আমার স্বামীর স্বপ্নকে পূরণ করতে চাই। আমিও চাই আমার ছেলে একদিন আমার স্বামীর স্বপ্ন পূরণ করে বাবার নাম রাখুক। তাই এখনই ছোট বয়স থেকেই সে তার বাবার গানগুলো এর রেওয়াজ করে গাওয়ার চেষ্টা করে, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা যদি আল্লাহ চান তাহলে স্বপ্ন পূরণ হবে ইনশা আল্লাহ। মিসেস লাকী আখন্দ বলেন আমার একটা দাবী থাকবে, আমার স্বামীর গানগুলো যেন নষ্ট না হয়ে যায়। উপযুক্ত শিল্পীর মাধ্যমে যেন আমার স্বামীর গানগুলো গাওয়ানো হয়। আমি প্রায় সময় টিভিতে আমার স্বামীর গানগুলো অনেক শিল্পীদের করতে দেখি। কিন্তু আমার ভাল লাগে না। আমার মনে হয় গানের কথাগুলো গানের সুরটা সবকিছুই যেন বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমার স্বামীর গান। আমি অনেককেই বলেছি যে আমার স্বামীর গান গুলো যেন এমন ব্যক্তিকেই দেওয়া হয় যারা গাইতে পারবে। সবার কাছে আমার একটাই অনুরোধ আমার স্বামীর গানগুলো বাঁচিয়ে রাখবেন। তাঁর গানগুলো যেন নষ্ট না হয়ে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। স্বপ্ন দেখেছেন হয়ত তিনি না বেঁচে থাকলেও স্বপ্ন পূরণ হবে, কিন্তু এমন কিছু স্বপ্ন মানুষ দেখে যা তার চলে যাওয়ার সাথে সাথে স্বপ্নগুলো ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। এমন একটা স্বপ্ন লাকী আখন্দও নিজেও দেখেছেন কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। জনপ্রিয় মিউজিক কম্পোজার পার্থ মজুমদার বলেন, লাকী আখন্দের একটা বড় স্বপ্ন ছিল সেটা হল একটা ব্যান্ড করা। স্বপ্ন দেখেছেন একটা ব্যান্ড করবেন কিন্তু সেই ব্যান্ড তৈরি করার আগেই সেই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাড়ালো মৃত্যু। সৃষ্টিকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে মৃত্যুর হাতে হাত রেখে তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে, আর হলো না সেই স্বপ্ন পূরণ, সেই ব্যান্ড করার নতুন পরিকল্পনা নতুনই রয়ে গেল। বাস্তবে স্বপ্নের রূপ দেওয়া তা আর হলো না। সঙ্গীত নিয়ে লাকী আখন্দ অনেক বেশি ভাবতেন, চিন্তা করতেন একটা কাজ করার আগে। অনেক জনকে দেখাতেন তার কাজের মানটা বিচার বিশ্লেষণ করার জন্য। তিনি নিজে নিজে ডিসিশন নিয়ে ফেলতেন না কোন গানের কাজেই। কিন্তু সেই স্বপ্ন দেখা মানুষটি স্বপ্নের আঁধারেই হারিয়ে গেল। রয়ে গেল তার সেই স্বপ্ন পূরণ না হবার ব্যর্থ কাহিনী। জীবনের সাথে যুদ্ধ করে হেরে গেলেন আর বিদায় নিয়ে নিলেন চিরদিনের জন্য এই পৃথিবী থেকে। আজ সেই মহান কিংবদন্তি মানুষটির শুভ জন্মদিন। জন্মদিনে শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া প্রার্থনা। ভালো থাকুক ওইপারে জনপ্রিয় এই লিজেন্ড গায়ক ও সুরকার লাকী আখন্দ।