– মোশারফ হোসেন মুন্না।
সূর্য আসবে দিনের আলো নিয়ে, চলে যাবে রাতের আঁধার। আবার দিনের ঝলমলে আলো হারিয়ে যাবে রাতের গহীনে। পৃথিবীটা আবারো আঁধারে ঢেকে যাবে। এমনি করে পূর্ণ হবে একটি দিন, একটি সপ্তাহ, একটি মাস, একটি বছর কখনো একটি যুগ। কখনো কেটে যাবে জীবনের সবটা সময়। নশ্বর পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত সবকিছু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, শেষ হয়ে যাচ্ছে, আবার নতুন কিছু জন্ম হচ্ছে। নিভৃত নয়নে প্রকৃতির এই পরিবর্তন শুধু দেখে যাওয়া ছাড়া আমাদের কারো কিছু করার থাকে না। লীলা বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় অতল গহীনে হারিয়ে যায় কত না মূল্যবান জীবন। কিছু মানুষের আগমন হয় পৃথিবীতে মানুষকে হাসাবার জন্য। কিছু মানুষের আগমন হয় পৃথিবীতে মানুষকে কাঁদাবার জন্য। আবার কিছু কিছু মানুষের আগমন ঘটে মানুষকে হাসাতে কাঁদাতে দুটোতেই। যে মানুষগুলো মানুষকে হাসাতে জানে কাঁদাতে ও জানে সেই মানুষগুলো যখন পৃথিবীর বুক থেকে চিরদিনের জন্য বিলীন হয়ে যায়, রেখে যায় তার জীবনের অমর স্মৃতির পাতা, সে মানুষগুলোকে সত্যিই কখনো ভুলে থাকা যায় না। তাঁর কর্ম মনে করিয়ে দেয় তাকে। তাদের সম্মানে কি লিখব কাগজের পাতায় কি লিখব খবরের পাতায় এ যে নিছক অবান্তর। তারাতো আমাদের জন্য রেখে গেছে অপরিমেয় কর্ম। তাকে স্মরণ করে খবরের পাতায় কিছু শব্দ লেখা তার কর্মের প্রতিদান নয়। কিন্তু তারপরও আমরা তাকে মনে করতে চাই, মনে করি। সম্মান দিতে চাই, সম্মান দেই, তার কর্মকে।
তেমনি একজন মানুষ, যার কথা, যার কর্ম, যার জীবনের ইতিহাস বলে শেষ করার মত না। তাঁর সম্মানে খবরের কাগজের একটা প্রতিবেদন কিছুই না। তবুও আমরা চাই, ক্ষুদ্র হলেও সম্মান জানাই সেই মহান মানুষটির প্রতি যে মানুষটি আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনে দিয়ে গেছেন ইতিহাসে অমর কালজয়ী অসংখ্য গান। যে গানের সুর গানের কথা আজীবন রয়ে যাবে মানুষের মনে। সেই মহান কিংবদন্তি মানুষটি হলো সঙ্গীত জগতের পুরোধা সরল-সহজ মহান উদার একজন ব্যক্তি লাকী আখন্দ। ১৭ই জুন এই প্রিয় মানুষটির জন্মদিন। তিনি পৃথিবীর বুকে নেই, কিন্তু তারপরও তার জন্মদিন কিভাবে পালিত হচ্ছে জন্মদিনে কি হচ্ছে বড় জানতে ইচ্ছে হলো তার পরিবারের কাছে। মাটির মানুষের পরিবারগুলোর সদস্য সেই মাটির মানুষের মতোই হয়। মিসেস লাকী আখন্দ এর সাথে কথা বলে তেমনি ধারণা হলো। যে নাম্বারে ফোন দেওয়ার পর লাকী আখন্দ নরম গলায় জবাব দিত হ্যালো, আজ সেই একই নাম্বারে ফোন দেওয়ার পর সেই লাকী আখন্দের কণ্ঠস্বর আর শোনা যায় না। আর কেউ বলে না যে আমি লাকী আখন্দ বলছি। এখন ফোন দিলে শোনা যায় আমি মিসেস লাকী আখন্দ। বিভিন্ন সূত্রে তার জন্মদিনের দুইটি তারিখ পাওয়া যায় । কেউ ৭ই জুন পালন করেন, আবার কেউ ১৭ই জুন। এ বিষয়ে মিসেস লাকী আখন্দ বলেন যে, লাকী আখন্দ আমাকে বলেছিল যে, আমার সঠিক জন্মদিন ১৭ই জুন। আমি যদি নাও থাকি আমার জন্মদিন পালন করতে হলে ১৭ই জুন এই করো। মিসেস লাকী বলেন আমিও জানি ৭ই জুন এবং ১৭ই জুনে অনেকে পালন করে থাকেন। কিন্তু আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে সব সময় ১৭ই জুনে পালন করে থাকি। মিসেস লাকী আখন্দ এর কাছ থেকে জানা যায় যে এ বছরও লাকী আখন্দ এর জন্মদিন ১৭ই জুনে পালিত হচ্ছে। বাসায় মিলাদ পড়ানো হয় যদিও করোনার জন্য তেমন ঘটা করে করা যাচ্ছে না। কোরআন খতম দেওয়া হয়েছে এবং মিলাদের মাধ্যমেই এ বছরের জন্মদিনটা আমরা পালন করছি, তার জন্য দোয়া করছি। ভালো মানুষকে সবাই চিরদিন ভালো বলেন। ভালো মানুষকে কখনো কেউ খারাপ বলে না। তবে প্রকৃত পক্ষে সেই মানুষটি ভালো যার পরিবার তাকে ভালো বলেন, যার চলার পথের সঙ্গীরা তাকে ভালো বলেন। সেই অর্থে লাকী আখন্দ ও নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ সেটা বলা যায়। মিসেস লাকী বলেন, লাকী আখন্দের মতো ভালো মানুষ আর হয় না। আমার স্বামী আমার কাছে সত্যিই একজন ভালো মানুষ একজন আদর্শ পুরুষ।
লাকী আখন্দ গানকে এতটাই ভালোবাসতেন যে সব সময় তিনি গানের মধ্যে ডুবে থাকতেন। গানের নেশায় তিনি সব সময় চিন্তা করতেন ভালো কিছু করার। মিসেস লাকী আখন্দ বলেন, আমি আমার স্বামীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলাম, তার গানের জন্য। আমার স্বামীকে আমি বলতাম তুমি গানের পিছনে সময় দাও, ভালো কিছু করতে হলে, অবশ্যই তোমাকে গানের পিছনে শ্রম দিতে হবে। পরিবারের দিকটা আমি সামাল দিব, তুমি গানকে নিয়ে এগিয়ে যাও। তারপরও প্রায় সময় তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করতেন আমি এমনিতে তেমন সময় দিতে পারি না বলে তুমি কি আমার উপরে রাগ করো ? আমি বলতাম তা কেন হবে ? আমিতো তোমার উপর আরো বেশি খুশি হই একটা গান নতুন গান শুনলে। আমার ভালো লাগে। মিসেস লাকী আরো বলেন, তিনি গানের পিছনে ডুবে থাকলেও যতটা সময় তিনি পরিবারের সাথে কাটাতেন ততটা সময় তিনি হাসি গানে গল্পে মাতিয়ে রাখতেন। কখনো তার অভাব বুঝতে দিতেন না। তিনি আমাদেরকে ভালোবাসতেন। লাকী আখন্দ দেশের একজন লিজেন্ড কিংবদন্তি গায়ক। তার জীবন সঙ্গী হয়ে মিসেস লাকীর অনুভূতিটা সত্যিই অসাধারণ।মিসেস লাকী বলেন আমার স্বামী লাকী আখন্দ তিনি বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য গায়ক। তার সহধর্মিনী হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। তিনি একদিকে যেমন গায়ক তেমনি একদিকে আমার জীবনের নায়ক। স্বামী হিসেবে আমার জীবনে তাকে পেয়ে আমার জীবন ধন্য। আমি কখনো তার সাথে রাগ করতে পারি নি কোন কোন বিষয়ে। তেমনি তিনিও আমার সাথে কখনো রাগ করতে পারেনি কোন কাজে। আমার কোন কথায় তিনি কখনো কষ্ট পেতেন না। আমার স্বামী কখনও আমাকে কষ্ট দিতে চাইতেন না, তেমনি আমিও আমার স্বামীকে কখনো কষ্ট দিতে চাইনি। আমরা দু’জন দুজনকে বুঝতাম তাই আমাদের পরিবারের সব সময় হাসি আনন্দ সুখ দ্বারা পরিপূর্ণ থাকতো। কিন্তু আল্লাহ আমাদের এই সুখের সংসার থেকে আমার স্বামীকে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন আমার স্বামীকে বেহেস্ত দান করেন। মিসেস লাকী আখন্দ বলেন, আমার পরিবারের দিক থেকে যদি আমি বিশ্বাস করি তাহলে তিনি সন্তানের আদর্শ বাবা আর আমার আদর্শ স্বামী। পরিবারের বাহিরেও তিনি মানুষের সাথে অনেক ভালো ব্যবহার করতেন। সবাই তাকে ভালোবাসতো এবং তিনিও মানুষদেরকে খুব ভালোবাসতেন। আমার স্বামীর জন্য সবার কাছে দোয়া চাই আমার স্বামীর জন্য সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাকে সুখে রাখেন শান্তিতে রাখেন। সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে ও দোয়া করি সুখে থাকুক লাকী আখন্দ ঐ পাড়ে।