asd
Friday, November 22, 2024

লকডাউনে গায়িকারা কেমন আছে…

– শাহরিয়ার খান সাকিব।

বহুবার সভ্যতা ও শান্তির সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে বিশ্ব। কখনো যুদ্ধ, কখনো ঝড়-ঝাপটা, মহামারি, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, তবুও এগিয়ে চলেছি আমরা। বসন্ত, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, প্লেগ, ওলাওঠা, ডেঙ্গু, মার্স, সার্স -আরও কতো রকম রোগ-শোকে বিশ্বের একেক অঞ্চল একেক সময় উজাড় হয়েছে, জনপদ ভীত হয়েছে। অনেকবার অনেক কিছুতেই শঙ্কিত হতে হয়েছে আমাদের। সংকট আসে, সংকট আবার চলেও যায়। কষ্টগুলো বহুদিন ধরে আঁকড়ে থাকে না। কিছুটা ভোগায়, কিছু জীবন কেড়ে নেয়। আবার শান্তি ফিরে আসে। এইতো চলছে দুনিয়াজুড়ে। এখন চলছে করোনা ভাইরাসের ঝড়। অদৃশ্য করোনার ভয়ে কাঁপছে গোটা দুনিয়া। করোনা যেন আমাদের সুখ কেড়ে নিয়েছে। ভীতিকর অবস্থা সবখানে। বিশ্বের কোথাও যেন কোনো সুসংবাদ নেই। দুঃসংবাদ আর দুঃস্বপ্নে কাটছে সবার জীবন। এভাবে আর চলে না। আমাদের হাসতে হবে। নইলে আমরা যে অসুস্থ হয়ে যাব। না হলে মনোরোগ পেয়ে বসবে আমাদের। এই চিন্তা করে খবর নিতে গেলাম সঙ্গীত শিল্পীদের। জানতে মনে চাইলো কি ভাবে কাটছে তাদের বন্দিদশার জীবন।

সাবিনা ইয়াসমিনঃ বর্তমান সময়ে বলতে গেলে কেউ ভালো নেই। তবুও ভালো আছি বলতে হয়। কারণ যারা করোনায় আক্রান্ত তারা এক অবস্থায়। আবার যারা মারা গেলে তারা আর এক অবস্থায়। তাদের থেকেতো ভালো আছি। সুতরাং ভালো আছি বলা যায়। করোনা ভাইরাসের ভয়ে পৃথিবীর সবাই ভীত। জীবনের লাইফস্টাইল পরিবর্তন হয়ে গেছে। যারা কর্মযুক্ত মানুষ তারাতো কর্মে ব্যাস্ত থাকবে সারাক্ষণ। কিন্তু তা হচ্ছেনা। সারাক্ষণ থাকতে হচ্ছে ঘরের মধ্যে বন্দি। সময় যাচ্ছে না। মানুষ এখন স্বাভাবিক পৃথিবীর আশা করছে। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি নিজেও এখন আর এই পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারছিনা। তারপরও কিছুতো করার নেই। মানতে হবে। আর ভরসা করতে হবে আল্লাহর উপর। হয়তো সব ঠিক করে দিবেন তিনি।

সামিনা চৌধুরিঃ বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রতিটি দেশ আজ করোনা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার। সারা বাংলাদেশের মানুষ আজ গৃহবন্দি। একঘেঁয়েমি আর কুঁড়েমিতে ধরেছে সবাইকে। প্রতিবন্ধীদের মতো কাটাতে হচ্ছে জীবন। সত্যিই কঠিন সময় চলছে এখন। হয়তো একদিন করোনা বিদায় নিবে। আমরা ফিরে আসবো স্বাভাবিক জীবনে। ততদিন এভাবেই নিজেদের করোনার হাত থেকে বাচাঁতে বন্দি থাকতে হবে।

আঁখি আলমগীরঃ সরকারি নির্দেশনা আসার আগে থেকেই আমি সন্তানদের নিয়ে বাসায় বন্দি জীবন কাটাচ্ছি। যদিও এখন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে, তারপরেও খুব বেশি দরকার না হলে বাসা থেকে বের হচ্ছি না। ঈদের দিনেও বের হইনি। বাচ্চাদের সময় দিচ্ছি। ঘরের কাজ করছি। বিকেলের দিকে একটু ছাদে যাই। এছাড়া টিভি দেখে এবং ভালো না লাগলে কখনো কখনো ফেসবুকে ঢুকি। ফেসবুকে থাকলেও লাইভে আসা হয় না। এটা আমার খুব একটা পছন্দও না। তবে হঠাৎ করেই লকডাউনের শুরুর দিকে ফেসবুকে লাইভে এসেছিলাম। দেশ-বিদেশের ২ লাখ ফলোয়ার লাইভে ছিল। সবাইকে আমি করোনার সচেতনতা নিয়ে পরামর্শ দিয়েছি। কিছুটা খারাপ লাগে আবার নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। কারণ এই খারাপ লাগাটাতো আমার একার নয়। সবারই হয়। তবুও এর মধ্যেই নিজেকে সুখি রাখতে হবে। ভালো থাকতে হবে সবাইকে।

ঐশীঃ বাসায়ই আছি। বাসাতেই সময় কাটছে। শুরুতে ভেবেছিলাম, কীভাবে সময় কাটাব! অন্য সময় বাইরে ব্যস্ত সময় কাটাতাম। কিন্তু এখন বাসায় থেকেও সময়টা কাজে লাগাতে পারছি। এই কাজ করব, ওই কাজ করব কিন্তু সময় পাচ্ছিলাম না। এখন সেটা পারছি। অনেক কিছু এখন পরিকল্পনা করে করার সুযোগ হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাবা-মা আমাকে কিছু আইডিয়া দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। নিজেও কিছু আইডিয়া তৈরি করেছি। সেগুলো করার চেষ্টা করছি। আর এই সময়ে আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করার সময়। যা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আমিও করছি। তাছাড়া পরিবারের সঙ্গে গল্প করছি, কখনো মুভি দেখছি, কখনো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একসঙ্গে আলাপ করছি। পাশাপাশি ইসলামিক কিছু নজরুল সঙ্গীত কভার করে প্রকাশ করছি। যেগুলো খুব সময়োপযোগী।

দিলশাদ নাহার কণাঃ করোনা ভাইরাসে দেশের গতি থেমে গেছে। অর্থনীতিসহ দেশের সকল আয়ের চাঁকা থমকে গেছে। বিশ্ববাসীর মনে শুধু একটাই প্রশ্ন কবে মিলবে করোনা থেকে মুক্তি! কারণ গৃহবন্দি হয়ে থাকাটা খুবই কষ্টের। যদিও মেয়েদের বেশিরভাগ সময় বাসার কাজেই চলে যায়। কিন্তু ছেলেরা সারাক্ষণ বাসায় কাটানো খুবই কষ্টকর। তাই এই সময়টাতে ধৈর্য ধরে থাকতে হবে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। হয়তো তিনি সব ঠিক করে দিবেন। আমার তেমন কষ্ট হচ্ছেনা। যদিও ততটা ভালোও না। কারণ গানের সব কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। সঙ্গীতাঙ্গনে একটা স্তব্ধতা বিরাজ করছে। সেই দিক থেকে এই সময়টা চলে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারলে ভালো লাগতো।

সোমনুর মনির কোনালঃ কভিড-১৯-এর কারণে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ ঘরবন্দি। শিল্পীদের শুটিং বা কাজের ব্যস্ততা নেই। তবু তাদের অনেকেই ঘরবন্দি এ সময়টাতে নানা কাজে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন। এ করোনা কালে ঘরে বসে কয়েকটি গানের রেকর্ডিংও করে ফেলেছি। পাশাপাশি ক্রাফটিং আর আঁকিঝুকিতে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছি। লকডাউনে পরে আরো বেশি গান রেকর্ড করেছি। আট-নয়টি গানে কণ্ঠ দিয়েছি। গানগুলো করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত। বাসায় থেকে ভিডিও করে দিয়েছি। আগে যা অসম্ভব মনে হতো, এখন তা সম্ভব হচ্ছে। স্টুডিওতে গিয়ে কণ্ঠ দিতাম। ভিডিও করার জন্য আমাদের আলাদা সেট হতো। এখন বাসায় বসে ফোনে কণ্ঠ দিয়ে দিচ্ছি। অনেক
ডিরেক্টরের বাসায় স্টুডিও আছে। তারা কণ্ঠটা মিক্সিং করে ফেলছেন। আর আমরা বাসায় বসে মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছি। হোম কোয়ারেন্টাইনে আমার ভালোই চলছে। কিন্তু আমার কথা চিন্তা করলেতো হবেনা। দেশের সবার কথা চিন্তা করে বলতে হয়, আল্লাহ যেনো সবার সুখের জন্য এই সময়টা থেকে বের করে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেন।

ইতিহাস সাক্ষী, ২০০৩ সালে সার্স ও ২০১৪ সালে মার্স রোগে কী ভয়ংকর পরিস্থিতিতেই না ফেলেছিল বিশ্ববাসীকে। তখন মারা যায় সাড়ে সাত শতাধিক মানুষ। সার্স ঠিকই মোকাবিলা করেছিল হংকং। আমরা দেখেছি সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় সব ঝড় আবার থেমেও গেছে। পৃথিবী আবার স্বাভাবিক হয়েছে। সভ্যতার চরম বিকাশের এই একুশ শতকে বিশ্বময় মানবসভ্যতার জন্য যে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এবং গভীর সংকট তৈরি করেছে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯, তা যেন নজিরবিহীন। এ ভাইরাসে বিশ্ব থমকে আছে। অতীতের মনুষ্যসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকের সঙ্গেই যেন এর কোনো তুলনা চলে না। বিশ্ব কাঁপিয়ে দিচ্ছে প্রাণবিধ্বংসী এই করোনা ভাইরাস। তবু হতাশ হলে চলবে না। করোনাকেও আমরা জয় করব একদিন। সেই সুখ স্বপ্নই আমরা দেখি। ভালো থাকুক পৃথিবী, ভালো থাকুক পৃথিবীর মানুষ। সেই শুভ কামনায় সঙ্গীতাঙ্গন।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles