চলে গেলেন খেয়ালের জনক…

– শাহরিয়ার খান সাকিব।

জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো
এমন করে আকুল হয়ে
আমায় তুমি ডাকো।।

তোমার কথায় হাসতে পারি
তোমার কথায় কাঁদতে পারি
মরতে পারি তোমার বুকে
বুকে যদি রাখো মাগো।।

তোমার কথায় কথা বলি
পাখির গানের মতো
তোমার দেখায় বিশ্ব দেখি
বর্ণ কত শত।
তুমি আমার-খেলার পুতুল
আমার পাশে থাক মাগো।।

তোমার প্রেমে তোমার গন্ধে
পরান ভরে রাখি
এইতো আমার জীবন-মরণ
এমনি যেন থাকি।
বুকে তোমার-ঘুমিয়ে গেলে
জাগিয়ে দিও নাকো মাগো।।

গানটি সারা বাংলায় পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি গান। কথায় আছে আঁদা মরে গেলেও তার ঝাঁজ থেকে যায়। চলে গেলেন কিন্তু রেখে গেলেন তার কর্মের স্মৃতির ডায়রী। মরে গেলো দেহ, আমরণ হয়ে থাকবে তার নাম ও কর্মের অবদান। ভুলে যাবার মত হয়তো কারো ক্ষমতা নেই। বলছি উপরের ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’ গানটির সুরকার আজাদ রহমানের কথা। বাংলাদেশী সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, ও সঙ্গীতশিল্পী। পাশাপাশি তিনি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও খেয়াল গানের চর্চা করেন। তাকে বাংলাদেশের খেয়াল গানের জনক বলা হয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এই সংগীত ব্যক্তিত্ব। ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। এর আগে তার কোলনস্কপি করা হয়। তাতে ধরা পড়ে সিস্ট। শনিবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে শ্যামলীর স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ‘বেশ কয়েক দিন আগে একটা অপারেশন করিয়েছিলেন। সেটার পর আজকে তিনি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন। আজাদ রহমানের বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
তার মরদেহ আপাতত শ্যামলীর স্পেশালাইজড হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আজাদ রহমান ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভারতের রবীন্দ্র ভারতী কলেজ থেকে খেয়ালে অনার্স সম্পন্ন করেন। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন তিনি ফোক গান, কীর্তন, ধ্রুপদী সঙ্গীত, খেয়াল, টপ্পা গান, ঠুমড়ি, রবীন্দ্র সঙ্গীত, অতুল প্রসাদের গান, দিজেন্দ্র গীতি, রজনী কান্তের গান চর্চা করেন। একই সময়ে তিনি একজন ক্রীস্টান পুরোহিতের কাছ থেকে পিয়ানো বাজানো শেখেন। আজাদ রহমান পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন।

আজাদ রহমানের চলচ্চিত্রে আগমন ১৯৬৩ সালে কলকাতার মিস প্রিয়ংবদা চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার মধ্য দিয়ে। সেই চলচ্চিত্রে তার সুরে কণ্ঠ দেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, আরতি মুখার্জি ও প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তার সুরকৃত প্রথম চলচ্চিত্র বাবুল চৌধুরীর আগন্তুক। তার সুরকৃত ও তার নিজেরই কণ্ঠে গাওয়া এপার ওপার চলচ্চিত্রের “ভালবাসার মুল্য কত”, ডুমুরের ফুল চলচ্চিত্রের “কারো মনে ভক্তি মায়ে”, দস্যু বনহুর চলচ্চিত্রের “ডোরা কাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়” গানগুলো সত্তরের দশকে জনপ্রিয়তা লাভ করে। সবাই তার বিদেহী আত্নার শান্তি কামনা করি। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসীব করুন।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest Articles