– সুব্রত মণ্ডল সৃজন।
মায়ের কথা ভাবতে গেলে,
মায়ের কথা বলতে গেলে
শেষ হয় না কভু…
মায়ের মতো মানুষ এমন
খুঁজলে পরে সারা ভুবন
কেউ পাবে না কভু।
আজ মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার ‘আন্তর্জাতিক মা দিবস’। সকলে মা’কে উৎসর্গ করে লিখছি। বরাবরের মতই সকল মা’কে ভালোবাসা করছি নিবেদন। মা সম্পর্কে লিখতে গেলে কতটুকুই বা লেখা যায়! জীবন ভরে লিখলেও কি এর শেষ হয় ? হয় না। জীবন ভরে মাকে ভালোবাসলেও কি মাকে ভালোবাসার শেষ হবে ? হবে না। আর একদিনে কি এমন ভালোবাসা জানাবো মা! তবুও তুমি তো মা। তোমার সন্তানদের ভালোবাসা গ্রহণ করো মা। তোমার কাছে এই নিবেদন।
দেখা যাচ্ছে, অনেকেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিভিন্ন ধরণের লেখা-লেখি বা ছবি শেয়ার করছেন।
এই দিবসের আছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস, অনেক তাৎপর্য।
মা দিবস বা মাতৃ দিবস হলো একটি সম্মান প্রদর্শন জনক অনুষ্ঠান যা মায়ের সন্মানে উদযাপন করা হয়। এই দিবস বিশ্বের অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন দিনে, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল বা মে মাসে উদযাপন করা হয়।
আনা জার্ভিসের প্রচেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায় ‘মা’ দিবস। ১৯১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে মা দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।
১৯১২ সালে আনা জার্ভিস স্থাপন করেন ‘মাদার’স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন্ (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি)।
১৯১৪ সালের ৮মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।
সরকারি মা দিবস পালনের ন’বছরের মাথায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি এতটাই বাণিজ্যিক হয়ে পরে যে আনা জার্ভিস নিজেই এই তাৎপর্য পাল্টে যাওয়া দিনটির ঘোর বিরোধী হয়ে যান এবং নিজের সমস্ত সম্পত্তি ও জীবন দিনটির এইরকম অবমাননার প্রতিবাদে ব্যয় করেন।
মা দিবসের বাণিজ্যিকরন ও দিনটিকে বাণিজ্যিক স্বার্থে কাজে লাগানোর প্রতিবাদে আনা জার্ভিস তার সময়ে বহু সমালোচনা করেন। তিনি সমালোচনা করেন হাতে লেখা চিঠি না দিয়ে কার্ড কেনার নতুন প্রথাকে যেটিকে তিনি আলসেমি হিসাবে গন্য করতেন। ১৯৪৮ সালে আনাকে গ্রেপ্তার করা হয় মা দিবসের বাণিজ্যিকরণের প্রতিবাদ করাকালীন এবং অবশেষে তিনি বলেন যে, ‘এই দিনটির সূচনা না করলেই ভালো হতো কারণ এটি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে’…।
তিনি আরো বলেছিলেন, ‘মাকে কার্ড দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর মানে নিজ হাতে তার জন্য দুই কলম লেখার সময় না হওয়া। চকলেট উপহার দেয়ার অর্থ হলো- তা নিজেই খেয়ে ফেলা।’ এসব না করে এই দিনটিতে মায়ের জন্য এমন কিছু করতে অনুরোধ করেন তিনি যেন তা অর্থবহ হয়ে থাকে। যাতে চিরদিন মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় থাকে। মায়ের ভালোবাসা যেন চির অমলিন হয়ে রয়।
অন্যদিকে, একটি গোষ্ঠীর মতে, এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে, যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশ্যে পালন করা হত একটি উৎসব।
ক্যাথলিক ধর্মে, মা দিবসটি বিশেষভাবে ‘ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার পূজায় সমর্পিত।’
সনাতনীরা এটিকে বলে ‘মাতা তীর্থ অনুসি’ বা ‘একপক্ষব্যাপী মাতৃ তীর্থ যাত্রা’ বিশেষ করে নেপালে এটি পালিত হয়। উৎসবটিতে মৃত মায়েদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং জীবিত মায়েদের উপহার দেওয়া ও সম্মান জানানো হয়। এছাড়া এই উৎসব নিয়ে আরো অনেক কিংবদন্তী প্রচলিত আছে যা প্রাচীন পুঁথি অনুযায়ী লোকমুখে চলে আসা সব ঘটনা। এমনি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের ইতিহাস ও কিংবদন্তী আছে এই মা দিবস নিয়ে।
তাই বলা যায়, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দিনে মা দিবস পালিত হয়। গুগল অনুসন্ধানের ফলাফলের প্রবণতা পরীক্ষা করে দেখলে দেখা যাবে যে প্রাথমিকভাবে দুই রকমের ফল পাওয়া যায়, ক্ষুদ্রতর ফলটি মাদারিং সানডে-এর ব্রিটিশ প্রথা অনুযায়ী লেন্ট-এর চতুর্থ রবিবার এবং বৃহত্তর ফলটি মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার। আর আমাদের দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারেই মা দিবস পালন করা হয়।
আসুন, আমরা মা দিবস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মায়ের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা অর্পণ করি। যে ভালোবাসা কখনো হয় না মলিন।
কাজী নজরুল ইসলাম তাই বলেছেন,
“যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!”
বি:দ্র: করোনা ভাইরাস (কোভিড ১৯)র কারণে প্রতি বছরের মত এবার এই দিসবটি উৎসব আকারে পালন করা হচ্ছে না। তাই ‘সঙ্গীতাঙ্গন’ পরিবারের পক্ষ থেকে রইলো পৃথিবীর সবার মঙ্গল কামনা ও মায়েদের প্রতি ভালোবাসা নিবেদন –
“মায়েদের প্রতি অর্পণ
মা দিবসের নিবেদন।”