– মোশারফ হোসেন মুন্না।
যাচ্ছে নিবে দিনে দিনে তাজা তাজা প্রাণ,
যে দেশেতে ছড়িয়েছে করোনারই ঘ্রাণ।
মানুষ তো নয় বন্দি পাখি, থাকবে খাঁচাতে
গোটা দেশেই এই আইন চলছে জীবন বাঁচাতে।
লও মানিয়া, নাও জানিয়া, চিনিয়া লক্ষণ
আর কটা দিন থাকতে হবে ঘরেই সর্বক্ষণ।
হ্যাঁ বলছিলাম মানুষ খাঁচার বন্ধি পাখি নয়। চাইলেই ঘরে থাকা সম্ভব না। তবে গোটা বিশ্বে মানুষের জীবন বাচাঁতে এই হোম-কোয়ারেন্টাইন বা ঘরে একঘেঁয়ে জীবন কাটানোটা ধরে নেওয়া যায় মেডিসিন। এই ঘরে বন্ধিটাই বাঁচাতে পারে জীবন। কমাতে পারে করোনা। করোনার এটাই মহাঔষধ। করোনার কবলে কত তাজা প্রাণ যাচ্ছে ঝরে। যে দেশেই তার ছোঁয়া লেগেছে। যে যে ভাবে পারছে সচেতনার আহব্বান করে যাচ্ছে সব সময়। আর এর সাথে শিল্পীমহলও।
করোনা নিয়ে গান নয় শুধু, সচেতনতার প্রচার করাই মূল লক্ষ। গানে তারা বুঝাতে চেয়েছেন যে, মানুষ চাইলেই এই মহামারীর মোকাবিলা করতে পারবে, আর করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে জরুরি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। করোনা নিয়ে বাংলার মানুষকে সচেতন করতে গানটি গাইলেন সাদী মোহাম্মদ, সুমি, তাহসান খান, এলিটা করিম, মিলন মাহমুদ, জাহিদ হাসান নীরব, সন্ধি। গ্রামীণ ফোনের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ‘একসাথে দূরে থাকি’ গান। যার কথা লিখেছেন গাউসুল আলম শাওন এবং সুর দিয়েছেন চিরকুট ব্যান্ডের শারমিন সুলতানা সুমি, গানের সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আরিন। গত ২৬ মার্চ ইন্টারনেটে প্রকাশ্যে এসেছে এই গান। তারপর থেকেই দুই বাংলাতে ঢেউ তুলছে ‘একসাথে দূরে থাকি, দেশটাকে ভালো রাখি’। ইতিমধ্যেই প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ ফেসবুকে দেখে নিয়েছেন এই গান। করোনা নিয়ে এখনও বাংলাদেশি জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে, সেটাই সবচেয়ে চিন্তার বিষয় বলে মনে করছেন তাহসান।
করোনা নিয়ে আরো এক গানে কন্ঠ দিলেন জনপ্রিয় শিল্পী মমতাজ। তার গানের কথা,-
প্রিয় দেশবাসী, আমি আপনাদের সবার প্রিয় শিল্পী মমতাজ বলছি।
দেশে ফেরত বন্ধু যখন চোদ্দ দিন বাইরে না গিয়া
সবার ভালর কথা ভাইবা একলা রয়
ঘরে একলা রয়
মনটা ভইরা যায়
ও মনটা ভইরা যায়।- এমন কথায় নতুন একটি গান গাইলেন কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। ব্র্যাকের উদ্যোগে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তার এ গান। মমতাজের বহুল প্রচারিত ও অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘বুকটা ফাইট্যা যায়’ শীর্ষক গানটির সুরের ওপর নতুন এ গানটি সাজানো হয়েছে। প্রখ্যাত শিল্পী মমতাজ সুরে সুরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাত ধোঁয়া এবং নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ও হাঁচি-কাশি দেওয়ার নিয়মগুলো তুলে ধরেছেন।
করোনা ভাইরাস থেকে মানুষকে সচেতন করতে একটি গান করেছেন কুদ্দুস বয়াতি। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সতর্ক হওয়ার জন্য গানে গানে দেশবাসীকে সচেনতার কথায় বলেছেন এই লোকসঙ্গীত শিল্পী। গানের কথাগুলো হলো, জাইনা চলেন, মাইনা চলেন, বুইঝা চলেন রে, সবাই মাইনা চললে করোনা থাকবে যে দূরে, সাবান পানি দিয়ে দুই হাত ধোবেন নিয়মিত, বিশ সেকেন্ড সময় নিয়ে হাত যে ধুঁয়ে নিব, নিয়ম মেনে চলব সবাই রাখব কথা মনে, চোখে নাকে মুখে হাত দেব না অকারণে। জাইনা চলেন, মাইনা চলেন’ শিরোনামে এই গান ফেসবুকে প্রকাশ করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। ভিডিও পরিবেশনায় ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোঁয়ার পাশাপাশি হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলার কথা গানে গানে তুলে ধরেছেন জনপ্রিয় এই শিল্পী।
আসবে বিজয় -শিরোনামে একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন জনপ্রিয় শিল্পী আসিফ আকবর। এতে তার সঙ্গে আরো কণ্ঠ দিয়েছেন মুহিন, হৈমন্তী, রাজীব প্রমুখ। গানটি লিখেছেন জামাল হোসেন। এর সুর-সঙ্গীত করেছেন মুহিন খান। করোনা নিয়ে গান গাওয়া প্রসঙ্গে আসিফ আকবর বলেন, অন্য সব দেশের পাশাপাশি এ ভাইরাসটির ব্যাপকতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সবাইকে অনুরোধ করছি আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য। সঠিকভাবে নিয়ম মেনে চলুন। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তারা নিজেদের মতো করেই নিরাপদে থাকুন। আপনার পরিবারের ভালোর জন্যই আপনাদের সাবধানে থাকতে হবে। ভবিষ্যতে বড় দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে আমাদের নিজেদেরকে নিজেদেরই প্রস্তুত করতে হবে। গুজবে কেউ কান দেবেন না। গুজব এড়িয়ে চলবেন। আবার গুজব ছড়ানোর কেউ চেষ্টা করবেন না। হঠাৎ করে বিশ্বব্যাপী নতুন এক ভাইরাস করোনার আতঙ্কে মানুষগুলোর হৃদয়জুড়ে অজানা এক হাহাকারের বসবাস। চীন থেকে শুরু করে আজ বিশ্বের প্রায় সবগুলো রাষ্ট্রে এই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আনাচে-কানাচে । মানুষগুলো এখন খোদার কাছে অতীতের সকল পাপ মোচনে প্রার্থনায় রত। সবাই মহান রবের কাছে দু’হাত তুলে ক্ষমা চাচ্ছেন যেনো এই অশুভ বাতাস থেকে নিজের রক্ষা মেলে।
তাই বাংলাদেশের জনপ্রিয় গীতিকার ও লেখক অনুরূপ আইচ এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে প্রভুর কাছে লিখলেন ‘ক্ষমা করো আল্লাহ’ শিরোনামের একটি প্রার্থনামুলক ইসলামী গান। গানটি ডেইলি মিরোর বাংলা চ্যানেল থেকে প্রকাশ পেয়েছে। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী তানিম আহমেদ। সুর ও সঙ্গীত আয়োজন করেছেন এ আর সারোয়ার।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে, করোনা সংক্রমণ রোধে সাধারণ মানুষকে নানাভাবে সচেতন করার চেষ্টা করছেন তারকারা। এবার করোনা নিয়ে গান বাঁধলেন মীরাক্কেলখ্যাত তারকা অভিনেতা জামিল হোসেন। ‘ওরে করোনা থেকে বাঁচতে চান’ শিরোনামের গানটি রচনা করেছেন কলকাতার কৃষ্ণেন্দ্রু চ্যাটার্জি। সুর ও কণ্ঠ দিয়েছেন জামিল। শুধু গিটারের সঙ্গে গানটি কণ্ঠে তুলেছেন তিনি। তার গানের কথা গুলো,- ওরে করোনা থেকে বাঁচতে চান/ সবাই যে যার ঘরে যান/ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে সাবধানের নাই মার গো/ সাবান দিয়া হাত ধুবেন/ চৌদ্দ দিন ঘরে থাকবেন/ অযথা বাইর হইলে হবে সর্বনাশ -এমন কথায় কথায় করোনা সংক্রমণ রোধে সচেতনতামূলক কথা তুলে ধরেছেন এই অভিনেতা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যেসব বিষয় মেনে চলা প্রয়োজন, সে সম্পর্কে গান লিখেছেন সমাজ সচেতন ও মানবতাবাদী কবি, গীতিকার ও সুরকার মাহবুবুল এ খালিদ। ‘করোনাকে ভয় করো না’ শিরোনামের ওই গানটির সুরও দিয়েছেন তিনি।
শোন ভাই বন্ধু প্রিয়জন/ করোনাকে ভয় করো না/ মোকাবেলা করো তারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে/ প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিউর/ নিশ্চয় আছে মনে/ শুধু থেকো সাবধান/ হবে না কিছুই হবে না॥ এমন কথায় গানটি শুরু হয়েছে। সচেতনতামূলক গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন এ প্রজন্মের চার তরুণ শিল্পী। তারা হলেন কিশোর দাশ, মুহিন খান, হাসনাত তাসনিম সংগীতা এবং নওশীন তাবাসসুম স্মরণ। গানটির সঙ্গীতায়োজন করেছেন রোমান রহমান।
সারাবিশ্বেই এখন আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস। বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত হয়েছেন তিন লক্ষাধিক মানুষ। এটির প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। প্রতিদিন একের পর এক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। মৃত্যুও ঘটছে। আর ঠিক সেই সময়েই এই ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে পালা গান নিয়ে হাজির হয়েছেন জনপ্রিয় পপ গায়িকা মিলা। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তিনি গানটি প্রকাশ করেন। শোনেন শোনেন প্রতিবেশী, শোনেন দিয়া মন/ করোনা ভাইরাস আতঙ্ক, বাড়ছে সারাক্ষণ। সচেতন না হইলে, বিপদ আসন্ন/ অবহেলা করলে হবে, জীবন বিপন্ন। হাত মিলানো, কোলাকুলি, বন্ধ করা চাই/ বারে বারে হাত ধোঁয়ার, বিকল্পতো নাই। এমন কথার গান নিয়েই হাজির হয়েছেন তিনি। নিজে সচেতন থেকে ঘরে বসেই এই পালা গানটি করেন মিলা। গানে তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে ছিলেন মিশা ও আরিফিন। মিলা বলেন, আমার প্রিয় বাংলাদেশের ও আমার ভক্তদের উদ্দেশ্যে সুস্থ ও স্বাস্থ্য সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে একজন বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী ও নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ক্ষুদ্র চেষ্টা করলাম। আমি আশা করি, আমাদের দেশবাসী ও আমার ভক্তরা গানের কথাগুলো মেনে চলবে।
যদি প্রশ্ন করা হয় বিশ্বজুড়ে এখন কোন শব্দটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে ?? এক কথায় তার উত্তর হবে ‘করোনা’। বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো এই ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র অবলম্বন সচেতনতা। গানে গানে সে বার্তা দিয়ে চলেছেন দেশ-বিদেশের শিল্পীরা। অনেকে আবার কবিতার পঙ্ক্তিমালায় তুলে ধরেছেন – করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তির উপায়। গানের শিরোনাম ‘এবাউট করোনা’। কথার পিঠে কথা জুড়ে দিয়ে করোনা ভাইরাস নিয়ে গান বেঁধেছেন তাবিব মাহমুদ। যাতে তার সাথে কণ্ঠ দিয়েছেন গাল্লি বয়-খ্যাত রানা।
কথা-সুরের যুগলবন্দিতে দূরে থেকেও কাছে থাকার আহবান শিল্পীদের কণ্ঠে। সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে গানটি তৈরি করেছে মুফোফোন প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন।