– কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।
হে মানুষ! তুমি কি শুদ্ধ হয়েছ ? মহাশক্তির এই বিপর্যয়ে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন কর! যে ধ্বংস লীলায় তুমি মেতে উঠেছিলে তা কি আজ বিদীর্ণ হয়েছে ? তোমার মনের পশুত্বকে যে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মত উদ্বেলিত করেছিলে, তা কি আজ নিস্তেজ হয়েছে ? হে মানুষ! তোমরা পাহাড়, গাছপালা, বনজঙ্গল কেটে পশুপাখিদের বসবাসকে করেছিলে অযোগ্য। ধ্বংস করেছিলে ওদের অভয়ারণ্য। নদী, নালা, খাল-বিল ভরাট করে বানিয়েছিলে আলিশান বাড়িঘর! যার ফলে নদী হারিয়েছে তার পথের দিশা। ধ্বংস করেছিলে মাছ আর ডলফিনের বসবাস এবং নষ্ট করেছিলে ওদের জলকেলি। ভাবোনি, মাত্র সাড়ে তিন হাত মাটি! সৃষ্টিকর্তা তোমাদের সকলের জন্য বরাদ্দ করে রেখেছেন।
হে মানুষ! আইয়ামেজাহেলিয়া যুগের চেয়েও তোমরা অনেক নিকৃষ্টভাবে কলুষিত করেছিলে, ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রকে, তোমাদের ডান বাম হাতের খেলায়। ভুলে গিয়েছিলে! তোমাদেরকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে এই পৃথিবীতে। তাই তো তুমি ধর্ষণ, খুন, রাহাজানি থেকে শুরু করে চালিয়েছ লুটপাট আর বাটপারি। আইয়ামেজাহেলিয়া যুগে মেয়ে হলে, হত্যা করা হয়েছে মাটিচাপা দিয়ে কিন্তু মা বোনদের ইজ্জৎ নিয়ে ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটেনি! যা তুমি করেছ দিনের পর দিন, ছোট্ট শিশুও রেহাই পায়নি তোমাদের হিংস্র করাঘাত থেকে। ভুলে গিয়েছিলে তখন! তুমি তোমার মা, বোন আর মেয়েকে অপমান করছ। সামান্য কারণে রাস্তাঘাটে অপমান করেছো তোমার বাবার বয়সী মানুষকে! ভুলে গিয়েছিলে সেই মানুষটাকে আঘাত করার সময় যে, তুমি তোমার বাবাকে অপমান করছ। কোন মানুষকে গুম করে বা অন্য কোনো কারণে হত্যা করার সময় ভাবোনি! সে তোমার বাবা, ভাই, পুত্র অথবা তোমার মা, বোন বা মেয়েও হতে পারতো। সত্যকে মাটি চাপা দিয়ে মিথ্যার চর্চায় ছিলে উন্মুক্ত। বিচার আচারের উর্ধ্বে ছিল কিছু মানুষ। যারা ভুলে গিয়েছিল যে, সবচেয়ে বড় বিচার তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে।
আইয়ামেজাহেলিয়ার যুগের মত চালিয়েছ বদ, নারী আর ধ্বংসযজ্ঞের তাণ্ডব! তেমনি, কিছু নারী খুলে বসেছিল, নিস্পাপ কিছু মেয়েকে নিয়ে প্রমোদবালাদের আস্তানা! সেই সুযোগে কিছু পুরুষ ঘরের ভাত রেখে বাইরের বিরয়ানীর পেছনে ছুটে চলেছে অহরহ। কিছু মানুষকে শিক্ষার পেছনে অশিক্ষার মত আচরণ গ্রাস করেছিল। ভদ্র পোশাকের নিচে প্রকাশ পেতে শুরু করেছিল নগ্নতা! মদ, নারী আর জুয়ার আড্ডায়। সেই সাথে পুরো পৃথিবীতে প্রভাহিত হচ্ছিল ক্ষমতার লড়াই। সেই ক্ষমতাধারণ করার জন্য শুরু হয়েছিল এক দেশের সাথে আরেক দেশের যুদ্ধ। আন্তর্জাতিকভাবে, উন্নতদেশগুলো অনুন্নত দেশগুলোর ওপর বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টায় অবতীর্ণ হয়েছিল। যেভাবে ধনী মানুষগুলো গরিবদের ওপর তাঁদের রোলারমেশিন চালাচ্ছিল। ভুলে গিয়েছিল তাঁরা! পৃথিবীতে কার মাধ্যমে তাঁদের আগমন এবং কিভাবে তাঁদের গমন। তাইতো এই ধ্বংসযজ্ঞের তাণ্ডব থামাতে টেনে ধরেছে সে, যে কিনা পুতুল নাচের দড়ির মত দড়ির একপাশ নিজের হাতে রেখে আমাদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন এই পৃথিবীতে। যখন পৃথিবীর মানুষের অস্বাভাবিক নাচ দেখেছেন তখনি দড়ির লাগাম টেনে ধরেছেন, করোনা ভাইরাসের মত ভাইরাস দিয়ে। সমস্ত পৃথিবীতে থামিয়ে দিয়েছেন মানুষের তাণ্ডব। থামিয়ে দিয়েছে ঘরে স্ত্রী সন্তান রেখে প্রমোদবালাদের নাচ দেখার সেই অভিলাষ। বাইরে আনন্দ ফুর্তি করে এসে বউকে পেটানোর সেই হাত। অবন্ত করেছে সেই চোখ, যে চোখে ছিল নারীর প্রতি লোলুপ দৃষ্টি। থামিয়ে দিয়েছে মা বাবার প্রতি তোমাদের অসম্মানের বিবেক। থামিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাধরদের অন্যায়ের হাত। ধনী গরীব সবাইকে এক ঝটকায় নিয়ে এসেছে একই কাতারে। যেভাবে, হাশরের ময়দানে দাঁড় করানো হবে ভেদাভেদ ভুলে একই কাতারে।
আমার জানা নেই, কত জন আল্লাহ্’র নাম জপছে! জানিনা, অনেকেই হয়তো এখনও ঠিক হয়নি! তাঁরা অপেক্ষা করছে, কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং আগের মত তাঁদের কাণ্ডকলাপ চালিয়ে যাবে! এই প্রযুক্তির যুগে এখন হয়তো ঘরে বসেই, টিভি, ভাইবার, হোয়াটসআপ, ইমো প্রভৃতির মাধ্যমে তাঁদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, মানে মনের খোরাক মেটাচ্ছে। তাই আমার জানা নেই! কতজন ছেড়েছে তাঁর বদ অভ্যাস। কতজন কোটিপতি এগিয়ে এসেছেন দুঃস্থমানবতার সেবায়! আমার জানা নেই! কতজন তাঁর বিবেককে শুদ্ধ করেছেন। জানা নেই, এই মৃত্যুর মিছিল দেখে কতজন অনুধাবন করেছেন! যে কোনো সময় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। জানা নেই, কতজন তাঁর পাঁপের প্রাশ্চিত্তের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তাঁর সৃষ্টিকর্তার কাছে। আমরা কেউই ধোয়া তুলসীপাতা নই! তাই তো যার যার অবস্থান থেকে ক্ষমা চাই নিজেদের কৃতকর্মের জন্য, মহান আল্লাহ্ তা’য়ালার কাছে। আমরা যেন, আর অপেক্ষা না করি! কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং আবার আগের অবস্থানে ফিরে যাব সেই আশায়। বরং মনে করি প্রতিটি দিনকে, আজই আমার শেষ দিন। মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা ক্ষমাশীল ও দয়াশীল। তাই তিনি আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিবেন। সেই কামনায়, আসুন সবাই মিলে তাঁর উদ্দেশ্যে জায়নামাজে মাথা নত করি। আল্লাহ্ আমাদের সকলের সহায় হউন, আমিন।
২০১৫ সালে আমার লেখা একটি কবিতা সকলের জন্য শেয়ার করলাম। এই কবিতাটি আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ, ‘নানান রঙের কষ্ট’ বইটিতে প্রকাশিত হয়েছিল।
হারানো তাজ –
হে মানুষ!তুমি কেন এত অবহেলিত এই পৃথিবীতে আজ
তোমার মাথায় নেই কেন, সৃষ্টিকর্তার সেরাজীবের অমূল্য তাজ!
আজ তোমার পশুত্ব হার মেনেছে, পশুদের কাছে
নিজেরাই নিজেদের নিষ্পেষিত করিতেছ শত শত অকাজে।
বেঁচে থাকলে লিখে না কেউ মানুষের দু’টি কথা,
মরে গেলে সম্মানে শোকে ভরে উঠে খবরের কাগজের পাতা।
কি ক্ষতি হয়! যারা সুধীজন সম্মানিত ব্যক্তি, একটু যদি সম্মান পায়!
তাহলে তো চলে যাওয়ার আগে, একটু সুখের নিঃশ্বাস নিয়ে যায়।
মরণের পর দেওয়া হয় তাঁকে, বহু মূল্যবান মরণোত্তর পুরস্কার,
এটা তো পুরস্কার নয়! বেঁচে থাকার সংগ্রামে হেরে যাওয়ার তিরস্কার।
আমরা কি পারি না,’মানুষ মানুষের জন্য’ এই কথাটির মূল্য দিতে এ সমাজে ?
পারি না আমরা, পশুত্বকে নির্বাসন দিয়ে মনুষ্যত্বকে গ্রহণ করি ভাল কাজে।
একটু কি পারিনা, বিবেককে ধুঁয়েমুছে বিবেকের আয়নাকে স্বচ্ছ করতে ?
কখনও যেন সেই আয়নায় নিজেকে দেখে ভয়ে হয়না আঁতকে উঠতে।
চেস্টা করিনা কেন! মানুষের মনুষ্যত্বকে ফিরে পেতে আজ!
আবারও যেন ফিরে পাই আমরা, সৃষ্টির সেরা জীবের সেই তাজ।
সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা, শুভকামনা ও ভালোবাসা।