– কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।
বাংলাদেশের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র-জন্মশতবার্ষিকী উৎযাপনের পর একটি প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন কয়েকজন সংগঠক। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন- মোখলেসুর রহমান (সিধু ভাই নামে পরিচিত), শামসুন্নাহার রহমান, বেগম সুফিয়া কামাল, ওয়াহিদুল হক। সাঈদুল হাসানের প্রস্তাবে সংগঠনটির নামকরণ করা হয় ছায়ানট।
১৯৬১ সালে বেগম সুফিয়া কামালকে সভাপতি আর ফরিদা হাসানকে সম্পাদক করে প্রথম কমিটি গঠিত হয়। সহ-সভাপতি জহুর হোসেন চৌধুরী, সাঈদুল হাসান। সহ-সম্পাদক সাইফুদ্দীন আহমদ মানিক, মিজানুর রহমান ছানা। কোষাধ্যক্ষ পদে মোখলেসুর রহমান ও সদস্যরা ছিলেন কামাল লোহানী, ওয়াহিদুল হক, সনজীদা খাতুন, আহমেদুর রহমান প্রমুখ।
১৯৬১ সালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে ছায়ানটের প্রথম অনুষ্ঠান’পুরনো গানের’ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৩ সালে সনজীতা খাতুনের উদ্যোগে বাংলা একাডেমীর বারান্দায় সঙ্গীত শেখার ক্লাস শুরু হয়। সনজীদা খাতুন ও ফরিদা মালিক রবীন্দ্র সঙ্গীত, বজলুল করিম তবলা, মতি মিয়া বেহালা ও সেতার এবং সোহরাব হোসেন নজরুল গীতি শেখাতেন। ১৯৬৩ সালেই ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১লা বৈশাখ, ১৩৭০ বঙ্গাব্দে ওস্তাদ আয়েত আলী খান ‘ছায়ানট বিদ্যালয়’-এর উদ্বোধন করেন।
ইংরেজি ১৯৬৪ সাল, বাংলা ১৩৭১ সালের ১লা বৈশাখ রমনার বটমূলে ‘ছায়ানট’ বাংলা নববর্ষ পালন শুরু করে, তাঁদের প্রভাতী গান দিয়ে। কালক্রমে এই নববর্ষ পালন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়। দুঃখের ব্যাপার হল, এবার করোনা ভাইরাসের কারণে পহেলা বৈশাখের অন্যতম আকর্ষণ রমনার বটমূলে অনুষ্ঠিত ছায়ানট-এর পরিবেশনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠান থমকে গেছে! কারণ সরকার থেকে করোনা ভাইরাসের কারণে লোকসমাগম নিষেধ করা হয়েছে এবং সকলকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ছায়ানটের কার্যক্রমের অন্যতম একটি কাজ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ-কবলিত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। একটু পেছন ফিরে তাকালে দেখতে পাব! ষাটের দশকের শুরুতে দেশের দক্ষিণোপকূলে গোর্কি আঘাত হানার পর কোনো সরকারি সাহায্য ছাড়া উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে ছুটে যায় ছায়ানট। তাছাড়া ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাস ও উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা এবং পরবর্তীকালের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত বিপন্ন মানুষের পাশে ছিল এই সংগঠন।
ছায়ানট এবারও তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে পিছ পা হয়নি! বরং এই সংগঠন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিপন্ন দুঃস্থ মানুষের অন্ন যোগানোর কাজে যুক্ত হওয়ার। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালিদের ঐতিহ্যবাহী প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। রমনা বটমূলে সেই ঐতিহ্যের আয়োজন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুত হচ্ছিল, ছায়ানট। কিন্তু বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব যখন চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন তখন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই বেশি জরুরি মনে করেছে ছায়ানট। সেই মহান লক্ষেই কাজ শুরু করে এবারের মহান স্বাধীনতা দিবসের পর পরই। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দুঃস্থ শিশু, কর্মহীন দিনমজুরসহ দরিদ্রদের ত্রাণসহায়তায় যুক্ত হয়েছে ছায়ানট।
সেই সাথে ছায়ানট শুরু করেছে ইউটিউবভিত্তিক কার্যক্রমঃ গানের নিবিড় পাঠ। এখানে গান শেখানো থেকে শুরু করে ছায়ানটের বিভিন্ন কার্যক্রম চলবে। ছায়ানট করোনা ভাইরাসের এই মহাসংকটের কালে ব্যক্তি পর্যায় থেকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে এবং নিরাপদ থাকতে ও সকলকে নিরাপদ রাখার সনির্বদ্ধ অনুরোধ জানাচ্ছে ‘ছায়ানট’। সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে ছায়ানট এর জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা ও অভিনন্দন।