– শাহরিয়ার সাকিব।
ইস্কুলে গেলি না হড়ালেয়া করলি না…
ঢাকা শহর গেলি না ব্যাগের কাম করলি না।
বাড়ির ভিত্তে হাদাই রইলি আরে ঠগাইতি,
বাবা তোরে লাগাইদিমু রিক্সা চালাইতি
বাবা তোরে লাগাইদিমু ভ্যান চালাইতি।
রিক্সা চালাই…ভ্যান চালাই চুডলে গায়ের ঘাম…
হেত্তে বুঝিবি হড়ালেয়ার কেমন আছিল দাম…
জমি কিনতে পারবি না, সরকার রিলিফ পাবি না।
টিবের কাম চলে না, সই ছাড়া আর পারবি না…
টিভির পর্দায় বই বই তোরা ইগিন না দেখলি…
বাবা তোরে লাগাইদিমু রিক্সা চালাইতি…
বাবা তোরে লাগাইদিমু ঠ্যালা চালাইতি…
বাংলাদেশের প্রায় জেলার’ই নিজস্ব কিছু স্বকিয়তা আছে যা অন্য কোনো জেলার সাথে আংশিক মিলে বা মিল খুঁজে পাওয়া যায় না, যেমন আঞ্চলিক ভাষা। এক এক অঞ্চলের এক এক রকম স্বাদ কারন সবই আমাদের মাতৃভাষা। আগে আমাদের দেশে লোকগীতি, পল্লীগীতি খুবই জনপ্রিয় গানের মধ্যে ছিল কিন্তু উন্মুক্ত বাজারে এসব আর পেরে উঠছে না। হয়ত একটা সময় হারিয়ে যাবে কালের গর্ভে। আমাদের প্রজন্ম যত অল্প হোক এই সম্পর্কে জানে বা জানার চেষ্টা করে কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কি হবে ? তারা জানতেও পারবে না এসব সংস্কৃতির কথা। এই সব আঞ্চলিক ভাষা, ভাষার গান কবিতা খুবই মজার। উপরে যে গানটি আছে তা নোয়াখালীর ভাষায় লেখা। ইতিমধ্যে দেখেই আপনারা বুঁজে গেছেন। সেই নোয়াখালীর একজন আঞ্চলিক গানের সুরকার, গীতিকার, ও শিল্পী ও অধ্যাপক মোঃ হাশেম। যার নাম নোয়াখালীর অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে। তিনি নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় গান করে গেছেন বহু। তার গানের মধ্যে নোয়াখালীর সংস্কৃতি জড়িয়ে আছে। সেই শিল্পী হাশেম চলে গেছেন না ফেরার দেশে। গত সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকার আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি জীবনের শেষ নিশ্বাষ ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। ফুসফুসের সংক্রামণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে ছিলেন। হাশেম মিয়ার বিষয়ে গোলাম কুদ্দুস বলেন, ঢাকা সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন হাশেম। তিনি শিক্ষকতাও করেছেন বলে জানা যায়। এই পেশায় নিযুক্ত হয়ে নোয়াখালী সরকারি কলেজ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ, কবিরহাট সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন।
অধ্যাপক হাশেম নোয়াখালীর নিজস্ব সংস্কৃতি, লোকজ বিভিন্ন আচার নিয়ে অজস্র গান রচনা করেছেন, যেগুলো বেতারেও প্রচার হয়েছে। নোয়াখালীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জনপ্রিয় মুখ ছিলেন হাশেম। আজ তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আমরা তাকে ভুলতে পারিনা। তার রেখে যাওয়া কর্ম দিয়ে আমরা তাকে মনে করবো চিরদিন। শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।