– কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী বিভিন্ন পেশার মানুষের জন্য জীবনমুখী গান রচনা করে মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি চার দশকেরও অধিক সময় ধরে লিখে চলেছেন মর্মস্পর্শী গান! তাঁর গান মানুষের হৃদয়ের কথা বলে। তাঁর এই মনমুগ্ধকর গান তাঁকে এনে দিয়েছে দেশজুরে খ্যাতি। পাঁচশ’র উপরে তিনি গান লিখেছেন। চলচ্চিত্র ও অডিও এ্যালবাম এবং রেডিও টিভিতে পুরাতন ও নতুন প্রজন্মের অনেক জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীর কণ্ঠে তাঁর গান, তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। তাছাড়া তিনি গ্রামীণফোনের একটি বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে, সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন! সম্প্রতি ২০২০-এর বইমেলায় এই জনপ্রিয় গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জীর একটি কবিতার বই বের হয়েছে। বইটির নাম- ঐশ্বরিক অক্ষর। বইটি প্রকাশ করেছেন অ্যাডর্ন পাবলিশার্স। পরবর্তীতে তাঁর ইচ্ছে আছে একটি উপন্যাস বের করার। শ্রদ্ধেয় গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জীর সাথে গান নিয়ে আলাপচারিতায় বিভিন্ন প্রসঙ্গ চলে আসে, যেমন- সে তো গান লিখেন কিন্তু তাঁর কি কখনো গান গাইতে ইচ্ছে হয়নি! সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন- তিনি গান গাইতে পারেন না! তাই গান লিখে তৃষ্ণা মেটান।
সে কোন্ ধরণের গান বেশী পচ্ছন্দ করেন, তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন- তাঁর ফোক, আধ্যাত্মিক গান ভালো লাগে। যে গান মহৎ চিন্তার সুযোগ দেয়, যে গান জীবনকে বিভিন্নভাবে দেখার সুযোগ করে দেয় এবং সেই সাথে নিজেকে পরখ করার সুযোগ দেয়, সেই সকল গান তাঁর বেশী পচ্ছন্দ।
কবে থেকে তাঁর গান লেখা শুরু জানার আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি বলেন- যখন তিনি সপ্তম শ্রেনীতে পড়েন তখন থেকেই সে জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে গান লেখার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। সেই থেকে আজবধি সে লেখালেখিতে আছেন এবং লেখালেখিতেই যেন মরণ হয়! এটাই তাঁর চাওয়া।
তাঁর পরিবারে এমন কেউ কি আছেন যিনি লেখালেখি করেন! জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন- না তাঁর পরিবারে তেমন কেউ নেই, তিনিই প্রথম এই জগতে পদার্পণ করেছেন। তবে অনেক সময় কারো কারো লেখা তাঁকে আকৃষ্ট করেছে তাই বলা যায়, সবার থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েই তাঁর লেখালেখিতে আসা। তাছাড়া তিনি মনে করেন, লেখাটা মনের ব্যাপার! তিনি যখন দেখলেন বই পড়লে জ্ঞান আহরণ করা যায়, জীবনের অনেক কিছু জানা যায়,জীবনকে সমৃদ্ধ করা যায়, জীবনে মহৎ কাজ করা যায় তখন তিনি মনে মনে ঠিক করেছেন, লেখালেখির চর্চা করতে হবে। কারণ লেখালখি না করলে জীবনকে বড় করা যায়না! জীবনকে উপলদ্ধি করা যায়না! এমনকি, জীবনের সৌন্দর্য্য বুঝা যায়না! এভাবেই নিজের থেকে তাঁর তাগিদের সৃষ্টি হয়েছে এবং তখন থেকেই সে বই পড়ে আর লেখালেখি করে।
জনপ্রিয় গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জী একজন চিরকুমার মানুষ। তিনি কেন সংসার ধর্ম পালন করেননি এবং সংসার ধর্মের প্রতি তাঁর এত অনিহা কেন! এমন কেউ কি আসেননি, তাঁর কবিতা বা গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে। সেই সাথে তাঁর কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, তাঁর যদি উত্তরাধিকার থাকত, তাহলে তো পরবর্তী সময় তারাই তাঁর কাজগুলো সংগ্রহ করে রাখত!
তিনি জানিয়েছেন যে, প্রথমতঃ তাঁর মনে হয়েছে প্রত্যেকে জীবনটাকে কিভাবে উপভোগ করবে, সে সেইভাবেই জীবন নীতি নির্ধারণ করে নেয়। তাই তাঁর জীবন নীতি হল চিরকুমার থাকা। সেজন্য যারাই তাঁর লেখা পড়ে, তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এসেছেন! তাঁদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, সে আজীবন চিরকুমার থাকবেন।
দ্বিতীয়তঃ সে বিশ্বাস করেননা যে, রক্তের উত্তরাধিকারীরা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে! তাঁর ধারণা তাঁর লেখা যদি মানুষের জীবনে কাজে লাগে, তার লেখায় যদি ভাল কিছুর সৃষ্টি হয় ও মানুষের বিবেককে তাড়িত করে এবং মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয়! তাহলে তাঁর চেতনার উত্তরাধিকারেরাই তাঁকে বহন করবে। রক্তের উত্তরাধিকার তাঁর লেখা বহন করার মত তেমন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়নি তাঁর কাছে। আর টিকেই থাকতে হবে, এটা তিনি মনে করেন না। কারণ টিকে থাকার জন্য যে, উচ্চতম দর্শনের প্রয়োজন তা তাঁর নেই। তিনি মনে করেন, তিনি না থাকলে কিছুদিন হয়তো দু’একটা গান বাজবে! চিরদিন সবার মাঝে বেঁচে থাকবেন, তা তিনি আশা করেন না। তাছাড়া তিনি বিশ্বাস করেন, সবাই তো আর কালজয়ী হয়না! কালজয়ী হয় কিছু কিছু মানুষ। কারণ তিনি মনে করেন তাঁদের কাজের মাত্রা সমসাময়িক। এই সমসাময়িকভাবে তাঁরা কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, কিছু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন এবং আলোচিত হয়েছেন, এটাই পরম পাওয়া। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী না। কোনো না কোনো একদিন বিলীন হয়ে যাবে সব। চিরস্থায়ী যারা তাঁরা অন্যরকম প্রতিভার অধিকারী, তাঁদের মত সাধারণ মানুষের চিরস্থায়ী হওয়ার সুযোগ নাই এবং তিনি মনে করে তাঁদের মত সাধারণ মানুষের চিরস্থায়ী হওয়ার দরকারও নাই। সবকিছু পর্যালোচনা করে দেখা গেল জনপ্রিয় গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়জীর চাওয়া পাওয়া খুবই সামান্য! সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে এই দেশ বরেণ্য এবং মিষ্টভাষী গীতিকবিকে জানাই আমাদের শ্রদ্ধা ও শুভকামনা এবং অভিনন্দন।