– শাহরিয়ার সাকিব।
সুঠাম দেহ, থুতনিতে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি, ইয়া মোটা মোটা হাতের আঙুলওয়ালা একটা তরুণ ছেলের শুধু মাত্র বেজ গীটারের প্রতি ফ্যাসিনেশন থেকে একটি লেজেন্ডারী ব্যান্ড তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যান্ড গুলোরে মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড হলো অর্থহীন। এই ব্যান্ডের শুরুটা হয় ব্যান্ডের কর্নধার বেজবাবা সুমন এর হাত ধরে। যখন তার ৭ বছর বয়স তার মা তাকে একটি হাওয়াইয়ান গিটার উপহার দিয়েছিল, কে জানতো এই গীটারের মাতাল করা সুর দিয়েই এক ইতিহাস রচনা হবে ? ১৯৯০ এর দিকে গভঃ ল্যাব থেকে এসএসসি পাস করে বের হতে না হতেই প্রতিষ্ঠা করেন দুইটি ব্যান্ড। ব্যান্ড দুইটির নাম ছিল রকফ্যান্টম এবং ফ্রিকোয়েন্সি। তবে এই দুইটা ব্যান্ড তৈরী করার মাঝে বেজবাবা সুমন ছিল গুরু জেমসের ব্যান্ড ফিলিংস এ। ১৯৯৩ সালের দিকে বেজবাবা সুমন একা কাজ করার চিন্তা করেন। আর সেই চিন্তাকে বাস্তবায়ন করার লক্ষে তিনি সিদ্ধান্ত নেন গুরু জেমসের ব্যান্ড ফিলিংস থেকে বাহির হবার। তারপর তিনি একা কাজ করা শুরু করেন। তারপর তিনি ১৯৯৪ সালের মধ্যে তার প্রথম সলো প্রোজেক্ট এ্যালবাম ‘সুমন ও অর্থহীন’ এর কাজ শেষ করেন। কিন্তু ১৯৯৪ সালে কাজ শেষ হলেও এই প্রোজেক্ট এ্যালবামটি বাজারে রিলিজ হতে সময় লাগে প্রায় ৩ বছর। দীর্ঘ ৩ বছর পরে বেজবাবা সুমন এর প্রোজেক্ট সুমন ও অর্থহীন বাজারে প্রকাশিত হয়। এই প্রোজেক্ট এ্যালবামটি বাহির হবার পর ‘সুমন ও অর্থহীন’ নাম দিয়েই বিভিন্ন কনসার্টে পারফর্মেন্স করতে থাকেন। তারপর ১৯৯৯ সালের দিকে বেজবাবা সুমনের ব্যান্ডে যোগ দেন পিকলু। আর তারপরই ব্যান্ডের নাম চেঞ্জ করে সুমন ও অর্থহীন থেকে নাম করণ করা হয় শুধু অর্থহীনে। আর এই বছর ১৯৯৯ সালেই গঠিত হয়ে যাত্রা শুরু করে ব্যান্ডটি। আর ঐখানে থেকেই যাত্রা শুরু হয় এক ইতিহাসের। এর পর ১৯৯৯-২০১৭, ১৮ বছরের ইতিহাস হয়তো কারও অজানা নয়। ব্যান্ড গঠিত হবার পরের বছরই ২০০০ সালে অর্থহীন ব্যান্ড তাদের প্রথম এ্যালবাম বাজারে প্রকাশ করেন। তাদের প্রথম এ্যালবাম টির নাম ছিল ত্রিমাত্রিক। তাদের এই এ্যালবাম পায় তুমুল জনপ্রিয়তা। অর্থহীন এর ব্যানারে বের হওয়া এই প্রথম এ্যালবাম এর প্রথম গান অদ্ভুত সেই ছেলেটি। আর বেজবাবা সুমন এর কণ্ঠে করা এই গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায় তখনকার যুব সমাজের মধ্যে। আর তারপরই এই ব্যান্ডের এই গানটি পরিণত হলো ছেলেদের জাতীয় সঙ্গীতে। গানটি বেজে উঠলো সব খানে। তারপর আর পিছে ফিরতে হয়নি এই ব্যান্ডকে। আজ পর্যন্ত এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। অর্থহীন বর্তমানেও অজানা পথে চলছে। তারপরও কোন কিছুই রুখে দিতে পারেনি তাদের। যারা বেজবাবা সুমনকে চেনেন, জানেন কিছুদিন আগে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে ফিরে এসেছিলেন সুমন। থাইল্যান্ডে চিকিৎসা করাতে গিয়েও হয়েছিলেন দুর্ঘটনার শিকার। শরীরে অনেকগুলো অস্ত্রোপচারের পর আবার গানে ফেরেন।
অর্থহীন ব্যান্ডের এই তারকাকে ভালোবেসে ভক্তরা তাকে নাম দেন ‘বেজবাবা’। বেস গিটারে তার চেয়ে ভালো বাংলাদেশে কেউ আছে তাও বলা মুশকিল। সেই বেসবাবা আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আজ ১৯ মার্চ, জার্মানি যাবার কথা ছিল সার্জারির জন্য, যা স্থগিত করা হয়েছে। দুঃখের খবর এই, যদি সার্জারি সঠিক উপায়ে না হয়, তবে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে তার। এমনটাই জানিয়েছেন বেজবাবা নিজেই। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেছেন সুমন। সেখানে তিনি এভাবে বলেন, আমার শরীর ভালো না। আমি সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকি। আমার স্পাইনের অবস্থা খুব খারাপ। ১৯ তারিখে জার্মানি যাবার কথা সার্জারির জন্য, যদিও ডাক্তাররা খুব একটা আশাবাদী নয়। সার্জারি আন-সাকসেস হলে আমার সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। দেখা যাক কি হয়। Happiness is a choice and life is beautiful. সবাই দোয়া করবেন। সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে দোয়া করি বেজবাবা সুমন ভালো হয়ে ওঠুক। সুস্থ দেহে ফিরে আসুক সঙ্গীত জগতে।