কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ইং, সন্ধ্যা ছয়টায়, জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে দেশবরেণ্য গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর-এর ৭০তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হয় ‘আনন্দ আয়োজন’ নামক এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এই প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী থেকে শুরু করে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, সাংস্কৃতিকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও শিল্পীর ভক্ত শ্রোতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি দুই পর্বে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্বে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বক্তব্য ছিল, যেখানে শিল্পীর শৈশব সহ তাঁর নানান কর্মকাণ্ডের কথা তাঁরা তুলে ধরেন। এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন-সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিত, রাশেদ খান মেনন, হাসান ইমাম, লায়লা হাসান, সাংবাদিক বুলবুল, শিল্পীর সহধর্মিণী এবং শিল্পী নিজেও বক্তব্য রাখেন। তাছাড়া গণসংগীত শিল্পীর জন্মদিনের শুভেচ্ছা স্বরূপ নাচেরও আয়োজন করা হয়।
দ্বিতীয় পর্বে ছিল, শ্রদ্ধেয় গনসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরের একক পরিবেশনার গান। যদিও তিনি প্রথমেই বাঁশী শুনিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। তারপর তিনি পতাকা নিয়ে গান করেন ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ এই গানটি। তারপর একে একে তিনি গান করেন- মুজিব আমার সপ্ন সব, মুজিব জাতির পিতা, কামেলিরা কাম করিয়া কোথায় যেন লুকাইছে, ও সখিনা গেছোস কিনা ভুইলা আমারে, ঘর করলাম নারে, সংসার করলামনা, স্কুল খুইল্লাছেরে মওলা, কাল কাল মানুষের দেশে নেলসন ম্যান্ডেলা তুমি… শুভ হোক তোমার জন্মদিন’ এই গানটি দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরের গানের সাথে যন্ত্রশিল্প বাজিয়েছেন যারা, তাঁরা হলেন, কিবোর্ড – সজীব, গীটার – সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক মনোয়ার হোসেন টুটুল, অক্টোপ্যাড – মানিক, বেসগীটার – টিঙ্কু, তবলায় – মিলন। অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল ‘ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী’। ফকির আলমগীর এই ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি। অসাধারণ! একটি অনুষ্ঠান হয়েছিল। সকলে শিল্পীর গানের সাথে নেচেগেয়ে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেছেন। ৭০ বছর বয়েসে এসেও শিল্পী ফকির আলমগীর ছিলেন প্রাণবন্ত এক তরুনের রুপে। সকলেই তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
ফকির আলমগীর ১৯৫০ সালের ২১ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম মোঃ হাচেন উদ্দিন ফকির, মা বেগম হাবিবুন্নেছা। শিল্পী কালামৃধা গোবিন্দ হাইস্কুল থেকে ১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে স্নাতক ডিগ্রী নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় এমএ পাস করেন। তিনি ১৯৬৬ সালে ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় সদস্য হিসেবে ষাটের দশকে বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে এবং ‘৬৯-এর গনঅভ্যুত্থানে গণসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শিল্পী ফকির আলমগীর একজন শব্দ সৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে যোগ দেন। ১৯৭৬ সালে তিনি গঠন করেন তাঁর ‘ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী’। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে এই গোষ্ঠী ও গণসংগীতের মাধ্যমে সমাজের কথা তুলে ধরেন। তিনি গানের পাশাপাশি একজন লেখকও বটে। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে আছে-মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও বিজয়ের গান, গণসংগীতের অতীত ও বর্তমান, গণসংগীত ও মুক্তিযুদ্ধ, পপসঙ্গীতের একাল সেকাল ইত্যাদি। জনপ্রিয় এই কণ্ঠ শিল্পী সঙ্গীতে অবদান রাখার জন্য একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, যেমন – একুশে পদক, শেরে বাংলা পদক, ভাসানী পদক, সিকোয়েন্স অ্যাওয়া্র্ড অব অনার, জসীমুদ্দিন স্বর্ণ পদক, মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ পুরস্কার, বাংলা একাডেমীর সম্মানজনক ফেলোশিপসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
দেশবরেণ্য গণসংগীত শিল্পী শ্রদ্ধেয় ফকির আলমগীর-এর ৭০তম জন্মবার্ষিকীতে ‘সঙ্গীতাঙ্গন’ এর পক্ষ থেকে রইল অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।