কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।
‘আমার বাবার মুখে
প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান,
সেদিন থেকে গানই জীবন
গানই আমার প্রাণ’।
এই গানটি যে কন্ঠে ধারণ করেছিলেন, সেই শিল্পী সবসময়ই মনে করেন ‘গানই তাঁর জীবন এবং গানই তাঁর প্রাণ!’ এতক্ষণে নিশ্চয়ই সবাই বুঝে গেছেন আমি কার কথা বলছি! হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন, আমি বাংলাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের কথাই বলছি। যে কিনা নিজেকে একজন ‘কণ্ঠ শ্রমিক’ মনে করেন। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ সব অনুভূতির গানই তিনি তাঁর কণ্ঠের মাধুর্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর জনপ্রিয় গানগুলি হল- জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যেখানে, ভেঙ্গেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায় ইত্যাদি অসংখ্য জনপ্রিয় গান আছে তাঁর ব্যক্তিগত ঝুলিতে। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে অবদান রাখার জন্য তিনি অসংখ্যবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। বর্তমানে এই প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর দুরারোগ্য ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক লুম সুন থাইয়ের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন।
এন্ড্রু কিশোর বর্তমানে ‘নন-হজকিন লিম্ফোমা’ নামক ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত, যার উৎপত্তি ঘটে দেহের লসিকানালীর অবস্থান থেকে। শরীরে নানা ধরনের জটিলতা নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তাঁর শরীরে নন-হজকিন লিম্ফোমা রোগ ধরা পড়ে। গত তিন মাস একনাগাড়ে তাঁর চিকিৎসা চলে। এন্ড্রু কিশোর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যাওয়ার আগে চিকিৎসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহায্য করেছিলেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ৮ সেপ্টেম্বর গনভবনে তাঁর কাছে ১০লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ওই টাকায় চিকিৎসা শুরু করলেও পরে বিভিন্ন কেমো দেয়ার কারণে চিকিৎসার খরচ অনেক বেড়ে যায়। তখন কোনো উপায় না পেয়ে এবং আর্থিক সংকটে পড়ে এই জনপ্রিয় শিল্পী রাজশাহীতে তাঁর নিজস্ব ফ্ল্যাট বাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। এর মধ্যে এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ৩ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করে। তাছাড়া বিদেশে তাঁর চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহণের জন্য চ্যারিটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়।
তারপরেও তাঁর চিকিৎসার জন্য আর্থিক সংকট থেকেই যায়।
জনপ্রিয় এই ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার আর্থিক সংকটের ব্যাপারে অবগত হওয়ার পরপরই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিজে নিয়ে নিলেন। খবরটি নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রির উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন। তিনি জানান, ক্যানসারে আক্রান্ত এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার পুরো বিষয়টি তদারকি করার জন্য ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে এই সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়বারের মত এন্ড্রু কিশোরের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহমর্মিতা প্রকাশ পেল।
এদিকে জানুয়ারির ১৮ তারিখে এন্ড্রু কিশোরের শিষ্য সঙ্গীত শিল্পী মোমিন বিশ্বাস ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার বর্তমান পরিস্থিতি এইভাবে জানান- গত একমাস যাবত শারীরিক কিছু অসুবিধা দেখা দেওয়ায়,গত একমাসে কেমোথেরাপি সাময়িক বন্ধ ছিল! আল্লাহর রহমতে মানুষের দোয়ায় শারীরিক সমস্যা কাটিয়ে উঠায় গতকাল কেমোথেরাপি প্রস্তুত রাখা হয় এবং আজ সকাল থেকে পুনরায় কেমোথেরাপি শুরু হয়েছে। এটি উনার ১৮তম কেমোথেরাপি, এটি সফলভাবে শেষ হলে ক্রমান্বয়ে বাকিগুলো (আরও ৬টি) দেওয়া হবে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন! তাঁর সুস্থতা ই সকলের একমাত্র কাম্য!
সঙ্গীতাঙ্গন- এর পক্ষ থেকে এই কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের জন্য অনেক অনেক দোয়া রইল। ইনশাআল্লাহ্! তিনি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এসে আবার তাঁর সকল ভক্ত শ্রোতাদের মন ভরিয়ে তুলবেন গানে গানে। এই আশা করছি, আমীন।