শাহরিয়ার সাকিব।
কিছু সময়ের জন্য মনে পড়ে গেল বাংলার সেই ঐতিহ্যের কথা। যে ঐতিহ্য মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশ গানের দেশ বাংলাদেশ সোনার দেশ বাংলাদেশ ইতিহাস-ঐতিহ্যের দেশ। যে দেশের মূল শিকড় ছিল ভাওয়াইয়া ভাটিয়ালি জারী সারী মুর্শিদি গান। যে গানগুলো পালতোলা নৌকা চালানোর সময় মাঝি-মাল্লারা সুর তুলতো। গ্রাম এলাকায় বর্ষাকালে যখন বিলের পানিতে কানায় কানায় ভরে যেত। ছোট নৌকা নিয়ে মাঝি-মাল্লারা গান গাইতো।
সেই গ্রামের ঐতিহ্য কিছু সময়ের জন্য চলে এসেছে ঢাকা শহরে। রাজধানী ঢাকাকে সাজানো হয়েছে এক অন্য রকম পরিবেশে। যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে শনিবার রাজধানী ঢাকা শহরকে সাজানো হয়েছে এক বর্ণাঢ্য পরিবেশে। তার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভাবে সাজানো হয়েছিল রাজধানীর হাতিরঝিল।
আনন্দ যেন আকাশ বাতাস মাঠ-প্রান্তর ছেড়ে এসে পড়েছিল শহরের বুকে। অ্যাম্ফিথিয়েটারে দর্শকের আসন যেন বই ছিল আনন্দর মেলা। হাতিরঝিলকে সাজানো হয়েছিল লাল নীল সবুজ এলইডি বাতির মাধ্যমে। ঝুলেছিল অনেকগুলো নৌকা। ঝিনুকের মধ্যে চলে গিয়েছিল এলইডি বাতির আলো। ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল শহরে রূপ নিয়েছিল হাতিরঝিল। আর বাংলাদেশের বুকজুড়ে আনন্দ অনাবিল। জাতির জনকের জন্মশতবর্ষের আনন্দের শুভক্ষণের অপেক্ষায় সবাই। অ্যাম্ফিথিয়েটার মঞ্চে শতাধিক তরুণ শিল্পীর কণ্ঠে গান ও নৃত্যশিল্পীদের কোরিওগ্রাফিতে উদ্দীপ্ত হন হাজারো অতিথি-দর্শক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের আয়োজনে ‘সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে একটি আনন্দ উদযাপনের আয়োজন করেছিল গানবাংলা চ্যানেল। সেখানে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ গানটি গেয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও সুরের ধারার শিল্পীরা। তাঁর সঙ্গে যন্ত্রসংগীতে সংগত করেন তাপস অ্যান্ড ফ্রেন্ডস। সুজিত মোস্তফা গেয়ে শোনান ‘ও আমার দেশের মাটি’ গানটি।
আনন্দ আয়োজন বলে এখানে কোরিওগ্রাফি ছিল অনেকগুলো। উদ্দীপনা জাগানো বেশ কয়েকটি নতুন দেশের গানের সঙ্গে নাচ করেছেন আধুনিক নাচের ঝাঁক ঝাঁক শিল্পী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিনেমার তারকা বিদ্যা সিনহা মিম, নুসরাত ফারিয়া, তমা মির্জা। এগিয়ে চলো আবারো জয় বাংলা বলে, ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশ নাও চিনে’ গানগুলোর সঙ্গে চোখধাঁধানো এসব কোরিওগ্রাফিতে ছিল চমকজাগানো আলোর খেলা। ফাঁকে ফাঁকে বড় পর্দায় দেখানো হয় বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে তথ্যচিত্র।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শতাধিক শিল্পী মিলে গেয়েছেন পাঁচ গানের একটি মেলডি। গানগুলো ছিল ‘শোনো একটি মুজিবরের, ধনধান্য পুষ্পভরা, তাকদুম তাকদুম, জয় বাংলা বাংলার জয় ও আমরা করব জয়। গানগুলো তৈরি হয়েছে পাঁচজন সংগীত পরিচালকের তত্ত্বাবধানে। এতে ভারত থেকে যুক্ত হয়েছেন আনন্দম শিবমনি। এ আয়োজনের সংগীত পরিচালক ছিলেন গানবাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৌশিক হোসেন তাপস। দুই ঘণ্টার অনুষ্ঠানটি দেশের ৪৯১টি উপজেলায় এলইডি পর্দায় দেখানো হয়। পাশাপাশি এটি সম্প্রচার করে বিটিভি ও গানবাংলা। অনুষ্ঠানে গান করেন তরুণ শিল্পীদের প্রায় সবাই। একক কণ্ঠে গান শোনান সামিনা চৌধুরী, হৃদয় খান, আরিফিন রুমী।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার শতবর্ষ উপলক্ষে হাজার বছরের চোখ ধাঁধানো একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্মরণ করেছেন এই অনুষ্ঠানের আনন্দঘন মুহূর্তের মাধ্যমে।