asd
Saturday, November 23, 2024

বিভিন্ন বিভাগে ছায়ানটের ভর্তি কার্যক্রম…

শাহরিয়ার সাকিব।
সঙ্গীতকে অবলম্বন করেই বাঙালির সংস্কৃতি সাধনার সমগ্রতাকে বরণ ও বিকশিত করতে উদ্যোগী হয় ছায়ানট। সঙ্গীত শিক্ষাদান কার্যক্রমের সুবাদে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কীর্তিমান গুণী শিল্পীরা সমবেত হন ছায়ানটে; পর্যায়ক্রমে তাঁরা বিকশিত করতে থাকেন অগণিত নবীন প্রতিভা। বাঙালির শাশ্বত সংস্কৃতিরূপ প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় নিয়ে ছায়ানট পরিবেশিত অনুষ্ঠানমালা জাতির প্রাণে জাগায় নতুন উদ্দীপনা, সঙ্গীত-সংস্কৃতির চর্চাসূত্রে জাতিসত্তার চেতনা বলবান হতে থাকে। ছায়ানটের উদ্যোগে জাতির শৈল্পিক ও মননশীল মেধার সম্মিলন ও অনুশীলন জাতিকে যোগায় বিকাশের বিবিধ অবলম্বন। প্রতিবছরই ছায়ানটের বিভিন্ন সংস্কৃতির সূচনা লগ্ন শুরু হয়। নতুনদের আগমন ঘটে ছায়ানট প্রাঙ্গণে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে ছায়ানট। চারশত টাকা মূল্যের ভর্তি ফরমের মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি করা হচ্ছে সীমিত আসনে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে। চিন্তাবিদ, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, নাট্যশিল্পী, চলচ্চিত্র সংসদকর্মী, বিজ্ঞানী, সমাজব্রতী নানা ক্ষেত্রের মানুষের সৃজনচর্চার মিলনমঞ্চ ছায়ানট এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সাংস্কৃতিক অভিযাত্রায় ব্যাপ্তি ও গভীরতা সাধনে পালন করে বিশিষ্ট ভূমিকা। ছায়ানট প্রতিষ্ঠার পরই বাঙালিকে তার গানের ঐতিহ্য স্মরণ করিয়ে দিতে ঘরোয়া পরিবেশে আয়োজন করে সুরুচিসম্মত সঙ্গীত অনুষ্ঠান ‘শ্রোতার আসর’। ছায়ানটের মূল অনুষ্ঠানের মধ্যে- রমনা বটমূলে বর্ষবরণ, জাতীয় দিবস (শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস), রবীন্দ্র-নজরুল জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী, ঋতু উৎসব (বর্ষা, শরৎ, বসন্ত), লোকসঙ্গীতের উৎসব, নাট্যেৎসব দেশঘরের গান, শুদ্ধসঙ্গীত উৎসব, রবীন্দ্র-উৎসব, নজরুল-উৎসব, নৃত্যোৎসব এবং মাসিক নির্ধারিত বক্তৃতামালা। এই ধরনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নতুন দিনের সংগীতের কর্ণধার তৈরি করতে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত। বিভিন্ন ক্যাটাগরির মধ্যে সঙ্গীত-সূচনা শিশু বিভাগ, সঙ্গীত-সূচনা রবীন্দ্র-নজরুল, লোকসংগীত শুদ্ধসঙ্গীত,
কন্ঠ, তবলা, সেতার, বেহালা, বাঁশি এবং নিত্যকলা বিভাগে ভর্তি চলছে। সঙ্গী সূচনা শিশু বিভাগে যে সকল শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবেন তাদের বয়স অন্তত ১০ বছর হতে হবে। এবং সঙ্গীত-সূচনা রবীন্দ্র-নজরুল লোকসংগীত এর ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অন্তত ১৪ বছরের হতে হবে। শুদ্ধসঙ্গীত, কন্ঠ, তবলা, সেতার, বেহালা, বাঁশি এদের নির্দিষ্ট বয়স ১০ বছর। তবে নৃত্যকলা বিভাগের অন্তত ছয় বছর বয়সের সকল শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়। আবেদনপত্র পাওয়া যাবে ছায়ানটের ওয়েবসাইট থেকে এবং বুধবার ও ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ছায়ানটের সংস্কৃতি-ভবনে।

স্বাধীনতার পূর্বে বাংলা একাডেমী, ইংলিশ প্রিপারেটরি স্কুল বর্তমান উদয়ন বিদ্যালয়ের পুরাতন অস্থায়ী গৃহ, আজিমপুর কিন্ডারগার্টেন বর্তমান অগ্রণী বালিকা বিদ্যালয় এবং কলাবাগানের লেক সার্কাস হাই স্কুলে স্থানান্তরিত হয়ে কাজ চালিয়ে এসেছে ছায়ানট। স্বাধীনতা উত্তর তিন দশকের জন্য ঠাঁই পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুল ভবনে। ছায়ানটের সাড়ে চার দশকের সংস্কৃতি-সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিষ্ঠানকে স্বীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৯৯৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এক বিঘা জমি বরাদ্দ দেন ধানমন্ডিতে। এ জমিতে নির্মিত ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে ব্যাপকতর অবদান রাখার লক্ষ্যে কাজ করে চলছে। কেবল সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় বরং দেশের সংস্কৃতি কর্মকান্ডের সহায়ক কেন্দ্র হিসেবে রূপ নিচ্ছে ছায়ানট সংস্কৃতি-ভবন। ভবনের নিয়মিত কর্মকান্ডের মধ্যে সঙ্গীতবিদ্যায়তন, সংস্কৃতি-সমন্বিত সাধারণ শিক্ষার বিদ্যালয় ‘নালন্দা’, শিশুদের মনন বিকাশের কার্যক্রম ‘শিকড়’, অটিস্টিক শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশের সহায়ক কর্মকান্ড ‘সুরের জাদু রঙের জাদু’, বাংলা ভাষা-সাহিত্য চর্চার জন্য ‘ভাষার আলাপ’ কার্যক্রম, গানের মাসিক অনুষ্ঠান ‘শ্রোতার আসর’ এবং সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক ত্রৈমাসিক পত্রিকা বাংলাদেশের হূদয় হতে ছাড়াও রয়েছে দেশ-জাতি-সংস্কৃতি বিষয়ের নানা শিক্ষা কার্যক্রম। ভবনে ৩০টি শ্রেণিকক্ষের বাইরেও রয়েছে ‘রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনকেন্দ্র’, সঙ্গীত-সংস্কৃতিবিষয়ক গ্রন্থাগার ‘কবি শামসুর রাহমান পাঠাগার’, শ্রবণ-দর্শন কেন্দ্র ও রেকর্ডিং স্টুডিও সম্বলিত ‘সংস্কৃতি-সম্ভার’ এবং আধুনিক সুবিধাদিসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৩০০ আসন-বিশিষ্ট মিলনায়তন। সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির পথপরিক্রমণের গৌরবের অংশ ছায়ানট। স্বাধীনতার পর সংস্কৃতি ও সঙ্গীতচর্চাকে আরও ব্যাপক ও নিবিড় করে তোলার সৃষ্টিশীল সাধনায় নিমগ্ন রয়েছে ছায়ানট। দীর্ঘ সাড়ে চার দশক ধরে ছায়ানট বাঙালি সংস্কৃতির নবজাগরণের
লক্ষ্যে গান, নৃত্য, যন্ত্রসঙ্গীত প্রশিক্ষণ ও প্রসারে নিয়োজিত রয়েছে। সাংস্কৃতিক সাক্ষরতা ও সংস্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং সাংস্কৃতিক বিকৃতি ও সংস্কৃতিহীনতা প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে ছায়ানট বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ভাষা, সঙ্গীত, সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র, কারুশিল্প, নৃত্যসহ শিল্পকলার যাবতীয় ক্ষেত্রে এবং সংস্কৃতিচর্চার ভিত্তি হিসেবে যথাযথ সাধারণ শিক্ষায় ছায়ানটের কার্যক্রম প্রসারিত হয়ে চলবে বলে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ২০২০ সালে যে সকল শিক্ষার্থীরা ছায়ানটের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হবে, তাদের আবেদনপত্র সীমিত এবং বিভাগ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সংখ্যার। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে দেওয়াা হবে, তবে কবে থেকে আবেদনপত্র বন্ধ হয়ে যাবে তার নির্দিষ্ট কোনো দিন নেই যে কোনো একদিন ফুরিয়ে যাবে। একজন শিক্ষার্থী কেবল একটি বিভাগেই ভর্তি হতে পারবে। তবে একাধিক বিভাগের জন্য ভর্তির আবেদনপত্র নেওয়া যাবে। একই শিক্ষার্থী যদি দুই বিভাগে ভর্তি হয় তাহলে যে কোন একটি ভর্তি বাতিল বলে গণ্য হবে। ভর্তির আবেদন পত্র লিখিত দিনক্ষণে পূরণকৃত আবেদন পত্রের সাথে সদ্য তোলা দুই কপি পাসপোর্ট আকারের রঙিন ছবি, জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্মনিবন্ধন
সনদের অনুলিপি এবং আবেদনকারী অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে অভিভাবকের জাতীয়় পরিচয় পত্রের অনুলিপিসহ সাক্ষাৎকারের জন্য। উপস্থিত হতে হবে এবং পূর্বে আবেদনপত্রর জমা নেয়া হবে না। সুবিধার্থে অনলাইন আবেদন পত্রের মূল্য পরিশোধ করা শিওর ক্যাশ মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টট এর মাধ্যমে। বাংলা সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে বাংলা গানকে বিশ্বদরবারে উন্মোচন করতে বাংলাদেশকে গানের দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে অবশ্যই আমাদেরকে সঙ্গীতচর্চা করতে হবে। আর সেই সংগীত চর্চার জন্য চাই একই ভাল প্রতিষ্ঠান আর তা হল ছায়ানট। সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles