মোশারফ হোসেন মুন্না।
এবারের চলচ্চিত্রে সঙ্গীতে যারা পুরস্কার পেলেন তারা হলেন –
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক : এম ফরিদ আহমেদ হাজরা (তুমি রবে নিরবে)
শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক : ইভান শাহরিয়ার সোহাগ (ধ্যাত্তেরিকি)
শ্রেষ্ঠ গায়ক : মাহফুজ আনাম জেমস (সত্তা-তোর প্রেমেতে অন্ধ)
শ্রেষ্ঠ গায়িকা : মমতাজ (সত্তা-না জানি কোন অপরাধে)
শ্রেষ্ঠ গীতিকার : সেজুল হোসেন (সত্তা-না জানি কোন অপরাধে)
শ্রেষ্ঠ সুরকার : বাপ্পা মজুমদার (সত্তা-না জানি কোন অপরাধে)
শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক : ইমন সাহা (জান্নাত)
শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক : মাসুম বাবুল (একটি সিনেমার গল্প)
শ্রেষ্ঠ গায়ক : নাইমুল ইসলাম রাতুল (পুত্র)
শ্রেষ্ঠ গায়িকা : সাবিনা ইয়াসমিন (পুত্র) ও আঁখি আলমগীর (একটি সিনেমার গল্প)
শ্রেষ্ঠ গীতিকার : কবির বকুল (নায়ক), জুলফিকার রাসেল (পুত্র)
শ্রেষ্ঠ সুরকার : রুনা লায়লা (একটি সিনেমার গল্প)
সঙ্গীত এর জন্য শিল্পীদের সাধনা প্রাচীন থেকেই। তাদের জীবনটা যেন সৃষ্টি হয়েছে সংগীতের জন্য সংগীতের ভালোবাসার জন্য। সেই ভালোবাসা তাদেরকে প্রমাণ করেছে সঠিক শিল্পী সুরকার ও গীতিকার হিসেবে। ফোক সম্রাজ্ঞী শিল্পী মমতাজ। যার গানের কন্ঠে কথা বলে মাটি ও মানুষের। লাখো শ্রোতা তার গানে মাতোয়ারা। শ্রেষ্ঠ শিল্পী হিসেবে সত্তা ছবি থেকে তিনি পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি বলেন, এটা আমার জন্য নয়, এটা আমার ভক্তদের জন্য যারা আমাকে এবং আমার গানকে ভালবাসে তাদের জন্য। নিঃসন্দেহে এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। গানের জগতে এসে গানকে ভালোবেসে গান করেছি সেই ভালবাসার একটা রূপরেখা হয়তো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। কোন কাজের বিনিময়ে তার সম্মানে পাওয়াটা খুবই আনন্দের। তেমনি আমার কাছেও এ প্রাপ্তিটা বড়ই আনন্দের।
বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের গায়ক মাহফুজ আনাম জেমস যাকে সবাই নগর বাউল জেমস হিসেবে চেনে। সত্তা সিনেমার জন্য তিনিও নির্বাচিত হয়েছেন শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে। ব্যান্ডসঙ্গীতকে অপসংস্কৃতি হিসেবে আখ্যা দেওয়ার পর সেই অপসংস্কৃতিকে সংস্কৃতিতে পরিবর্তন করতে যাদের অবদান অমূল্য তারমধ্যে মাহফুজ আনাম জেমস একজন। সংগীতের জন্য এই প্রাপ্তি তার কাছে গৌরবের বলে ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন যারা গানকে ভালবাসে বাংলা গান শোনে তাদেরকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাই। আরো বেশি বেশি বাংলা গান শুনবে, বাংলা সংস্কৃতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে এটাই আমার কাম্য এবং তাদের বাংলা গানের আকুতি ও টান থেকেই তৈরি হবে নতুন নতুন বাংলা গান।
দুই বাংলার জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রুনা লায়লা। ১৯৭৬ সালে দি রেইন চলচ্চিত্রের মাধ্যমে, প্রথম চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। তারপর থেকে ১২ বার এই পুরস্কার অর্জন করেছেন। এই প্রথম তিনি সুরকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেলেন।
২০১৮ সালের সেরা গায়িকার পুরস্কার পেলেন যৌথভাবে নন্দিত গায়িকা সাবিনা ইয়াসমিন ও আঁখি আলমগীর। পুত্র সিনেমার ‘ভুলে মান অভিমান’ গানটির জন্য সাবিনা ইয়াসমিন ও ‘গল্প কথার ঐ’ গানটির জন্য পুরস্কার পেয়েছেন আঁখি আলমগীর। শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, সবার কথা জানিনা, কিন্তু আমি গর্বিত। শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে আমাকে নির্বাচন করায় আমি খুবই আনন্দিত। আঁখি আলমগীর বলেন, আমার ভালো লাগাটা সবার থেকে
আলাদা। আমি চলচ্চিত্র গান খুব কম করেছি। যাই করেছি তার জন্য আমার এই প্রাপ্তি সত্যি অনেক হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার। যা বলে বুঝাতে পারব না। প্রথমবারের মত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের পাতায় নিজের নাম যুক্ত করেছেন বাংলাদেশের সংগীত জগতের জনপ্রিয়তম কণ্ঠশিল্পী ও সুরকার শুভাশীষ মজুমদার বাপ্পা পুরস্কার-২০১৭ এর শ্রেষ্ঠ সুরকার ক্যাটাগরিতে তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন। জনপ্রিয় বাংলা সিনেমা ‘সত্তা’ সিনেমার ‘না জানি কোন অপরাধে’ গানটির সুরকার হিসেবে ২০১৭ সালের শ্রেষ্ঠ সুরকার নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এছাড়াও ‘সত্তা’ সিনেমা থেকে আরও নির্বাচিত হয়েছেন, মাহফুজ আনাম জেমস – শ্রেষ্ঠ গায়ক, মমতাজ বেগম – শ্রেষ্ঠ গায়িকা, সেজুল হোসেন শ্রেষ্ঠ গীতিকার।
এবার মোট ২৮টি বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। সেগুলো হলো আজীবন সম্মাননা, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী খল চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ অভিনেতা/অভিনেত্রী কৌতুক চরিত্রে, শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী, শিশু শিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক, শ্রেষ্ঠ নৃত্য পরিচালক, শ্রেষ্ঠ গায়ক, শ্রেষ্ঠ গায়িকা, শ্রেষ্ঠ গীতিকার, শ্রেষ্ঠ সুরকার, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার, শ্রেষ্ঠ চিত্র নাট্যকার, শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা, শ্রেষ্ঠ সম্পাদক, শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক, শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক, শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক, শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা এবং শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান। যাদের ভাগ্যে এই পুরস্কার এসেছে সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে তাদের সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। শুভকামনা রইল আগামীর পথ চলতে।