Tuesday, September 16, 2025

শিল্পীরা দুস্থ নয়; তারা দেশের জাতীয় সম্পদ…

মোহাম্মদ আমিন আলীফ।

শিল্পী কাকে বলে ?

আমরা কি কখনো জানার চেষ্টা করেছি শিল্পী কি ?

শিল্প কি ?

মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে খাওয়ার গলা দিয়ে গাইলেই কি শিল্পী হয়ে যায় ?

নাকি খাওয়ার গলাটাকে গাওয়ার গলা বানাতে হয়!

বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক শ্রদ্ধেয় আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল বলেছিলেন, গানের জন্য যতো যন্ত্র আছে সবচেয়ে প্রাচীনতম দামী যন্ত্রটার হচ্ছে কণ্ঠ। কঠিন অধ্যবসায়, সঠিক চর্চায়, তীব্র সাধনায় কণ্ঠটাকে যিনি তাল লয়ের সাথে সঠিকভাবে, শ্রুতিমধুরভাবে পরিবেশন করতে পারে তিনিই সঙ্গীতশিল্পী।

ঠিক এভাবেই যারা গীতিকবি, সুরকার, সঙ্গীতপরিচালক সুর-সঙ্গীতকে নিজের অস্তিত্বের সাথে মিশিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, শ্রোতাদের বিশুদ্ধ সঙ্গীত উপহার দিয়েছেন তারাও শিল্পী। যারা সাধনার মাধ্যমে কোন শিল্পকে আবিষ্কার করে বা বাঁচিয়ে রাখে তারাই শিল্পী।

আমাদের দেশে এমন অজস্র শিল্পীর মাঝে এমন কিছু শিল্পী আছেন যারা বাংলা সঙ্গীতের অভিভাবক; বাংলা সঙ্গীতের প্রাণ। উনারা সেই ৭১ এর মুক্তিযোদ্ধ থেকে দেশ স্বাধীনে অংশগ্রহণ সহকারে দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলা গানকে সারাবিশ্বের শ্রোতাদের কাছে পৌছিয়ে দিতে, বাংলা গানকে বাঁচিয়ে রাখতে যারা যুদ্ধ করে আসছে তারা সঙ্গীত যোদ্ধা এবং দেশের জাতীয় সম্পদ।

মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সুন্দর ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য অনেক কিছুর মধ্যে অন্যতম হলো বিনোদন।

আর এই বিনোদন এর শ্রুতিমূল সঙ্গীত।

জীবন জগত, নিজ অন্তরলোক, আধ্যাত্মিক সাধনা, দেশপ্রেম, মা-বাবা, প্রেম-ভালোবাসা সহ শত আনন্দ বেদনার সংমিশ্রণ সঙ্গীতে। মানুষ সঙ্গীতের মাধ্যমে নিজের মনের কথা খুঁজে পায়, তাই মানুষ গান শোনে। যুগে যুগে এই দেশে অজস্র কালজয়ী গান আবিষ্কার করেছেন দেশের সঙ্গীতজ্ঞরা কিন্তু কিছু সেবক নামের শোষক, কিছু বিবেকহীন প্রতিষ্ঠান সেই গান বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মহল গড়েছেন অবশেষে এই মহান শিল্পীরাই জনগণের কাছে, দেশের কাছে, সমাজের কাছে হয়ে যায় দুস্থ।

কারণ আমরা প্রকৃত শিল্পীদের সঠিক মর্যাদা দিতে পারি না; উনাদের মূল্যায়ন করতে পারিনা। উনাদের সঠিক সম্মানী শোষণ করে খায় একদল।

অথচ উনারা সারাজীবন সাধনার মাধ্যমে কোটি হৃদয়কে সুরের সুখ দিয়েছেন।

আমরা অনেক পূর্বে সঙ্গীতাঙ্গনের মাধ্যমে  একাধিক মানুষের কাছে এই প্রশ্ন রেখেছিলাম ‘মানুষ কেন গান শোনে ?

সাধারণ মানুষের মতামত এমন ছিল-
গানে মনের প্রশান্তি, গানে শান্তি পাওয়া যায়। তাই মানুষ গান শোনে।
দেহের ক্ষুধার জন্য যেমন খাদ্য, তেমনি গান মনের খোরাক। মানুষ গানের কথা নিজেকে খুঁজে পায়, গানে দেশের কথা মানুষের কথা, মাটির কথা, মায়ের কথা অনেক সুন্দর ভাবে হৃদয় জুড়ানো সুরে তুলে ধরে সুরকার, গীতিকার এবং শিল্পীরা তাই মানুষ গান শোনে।

অনেক গানে জীবনের গল্পের মিল পাওয়া যায়, ভালোবাসার প্রতিধ্বনি শোনা যায় তাই মানুষ গান শোনে। এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে মনোবল এবং মানুষিক শক্তি সঞ্চয় করে সঙ্গীত। তার উদাহরণ দেশাত্মবোধক গান। এছাড়া বিবেক জাগ্রত করে গান, যেমন সাধক লালন সাইজী, হাসন রাজা, বিজয় সরকার, রাধা রমন, বাউল আব্দুল করিম উনারা আধ্যাত্মিক ও দেহতত্ত্বর গানে মানুষেরকে অনেক দিক নির্দেশনা দিয়েছেন  এবং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার হামদ-নাত ও ইসলামী গানের মাধ্যমে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি জাগিয়ে তুলেছেন। ….
কবি জসীম উদ্দিন সহ লোকজ গানের অনেক খ্যাতিমান সাধক আছেন যারা সাধারণ মানুষের জীবনকথা তুলে ধরেছেন গানের মাধ্যমে।

সঙ্গীত মানুষের হৃদয়ের সাথে সম্পৃক্ত। তাই মানুষ মাত্রই সংগীত বা গানের জন্য এক ধরণের ভালোবাসা বুকে রাখে। এ-ভালোবাসা কোনো লাভ-ক্ষতির হিসেব মিলিয়ে নয় বরং এটা স্বত:স্ফুর্ত এক বহমান গতি যা প্রত্যেক যুগে, প্রত্যেক কালে মানুষকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। অবশ্য প্রশ্ন উঠতে পারে, কেনো সঙ্গীতের প্রতি মানুষের এমন দুর্বার আকর্ষণ। কেনো সংগীতের জন্য মানুষের হৃদয়ে বিনিময়হীন ভালোবাসা বিরাজ করে এর জবাবও রয়েছে এবং তা অত্যন্ত যুক্তিসংগত। এবং তা হলো গানের মর্মবাণীর সাথে মধুময় সুরের ব্যবহারই মানুষকে সংগীতের দিকে প্রবল আকর্ষণ করে থাকে। সুতরাং এ-কথা বলা যায় যে, গানের কথা এবং সুর এ-দুয়ে মিলে যখন মানব মনের স্বপ্ন-আশা ও সম্ভাবনার কথা
উদ্ভাসিত হয় তখনই গান বা সঙ্গীত হয়ে যায় মানুষের আত্মার স্পন্দন। মানুষ গানের মাধ্যমেই নিজেদের দু:খ বেদনার কথা প্রকাশ করে। প্রত্যেক মানুষের আলাদা আলাদা পছন্দের বিষয় থাকে। গান তেমনই একটি বিষয়।
যাঁরা গান পছন্দ করেন, গান শুনলে তাঁদের ভালো লাগে। অনেকে গানের মাঝেই শক্তি ও উদ্যম খুঁজে পান। আবার অনেকে গানকে তাঁর নিঃসঙ্গতার সঙ্গী করে নেন। গান মানুষের দুশ্চিন্তা, যেকোনো শারীরিক ও মানসিক ধকল সামলাতে সাহায্য করে। বাস্তব জীবনে চাকরি, সংসার, সম্পর্কসহ নানা কিছু নিয়ে থাকে দুশ্চিন্তা ও ধকল। তখন গানের সুর, বাজনা, ছন্দ ও গানের কথা মনকে স্থির করতে সাহায্য করে। তাই অনেক গবেষণায় গানকে ‘রিলাক্সজেশন’-এর একটি অংশ হিসেবে দেখা হয়।

গানের মাধ্যমে যারা এমনভাবে মানুষের জীবনকে সাজিয়ে তোলে, জাগিয়ে তোলে, প্রেরণা দেয়, আনন্দ দেয়। মনে- প্রাণে দোলা দেয় তারা সাধারণ কেউ না।

শিল্পীরা কেন অসহায় হয়ে পড়বে ?

তারা কখনোই দুস্থ নয়; শিল্পীরা দেশের জাতীয় সম্পদ।

গান দেশ-বিদেশ সহ সব জায়গায় অর্থনীতির উন্নয়ন করে। শিল্পীরা দেশের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখেন।

আসুন আমরা শিল্পীদের সঠিক মর্যাদা দেই

শিল্পীরা সম্মানী সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেই।

জেগে উঠুক গানে গানে বাংলাদেশ

মেতে উঠুক শ্রুতিমধুর সুরের রেশ।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles

// DEBUG: Processing site: https://shangeetangon.org // DEBUG: Panos response HTTP code: 200 ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş betwinner melbet megapari megapari giriş betandyou giriş melbet giriş melbet fenomenbet 1win giriş 1win 1win