মোশারফ হোসেন মুন্না।
সঙ্গীত আর সঙ্গীতের সাথে থাকা সঙ্গীত প্রেমীদের সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে জানাই সঙ্গীতের সুমদুর সুরে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আজ সঙ্গীত প্রেমীদের জন্য সঙ্গীতাঙ্গনের সেরা প্রতিবেদন রয়েছে সঙ্গীতের আরেক ঘরনা তথা রক মিউজিক নিয়ে। যেখানে আমরা জানবো পৃথিবীখ্যাত ব্যান্ড সঙ্গীতের কথা। যখন একটা সময় ছিলো পল্পীগান, জারিসারি, মুর্শিদী সহ বাউল গানের রমরমা। যুগের বিবর্তনে পাল্টে গেছে ধারা। পাল্টে গেছে মানুষের চাহিদার ধরণ। বদলে গেছে বিনোদনের মাত্রা। সেই সঙ্গীত যখন ইতিহাস বা যাদুঘর হয়ে গেছে। ঠিক তখনই শূন্যস্থান পূরণ করতে ব্যান্ড সঙ্গীত এসেছে সঙ্গীতের পূজক হয়ে। তাদের মিউজিক, কম্পোজিশন, ইন্সট্রুমেন্ট প্লেয়িং জাগিয়েছে হাজারো সঙ্গীতপ্রেমীদের মনে বিনোদনের ঝড়। ভাবতে শিখিয়েছে সঙ্গীত নিয়ে। মনে স্বপ্ন বুনেছে অনেকে সেই ধরনের ব্যান্ড সঙ্গীতের শিল্পী হতে। সেই শূণ্য থেকে আজ অবধী অনেক ব্যান্ডের জন্ম হয়েছে পৃথীবিতে। আজ আমরা জানবো এই পর্যন্ত যত ব্যান্ড জন্ম নিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে নামীদামী ব্যান্ডের কথা ও তার মধ্যে কাজ করা একজন ব্যাক্তির সম্পর্কে।
আমরা যারা রক মিউজিকের পাগল তারা হয়তো দ্যা বিটলস্ ব্যান্ডের নাম শুনে থাকবেন। তবে এই বিটলসই যে বিশ্বসেরা ব্যান্ড হয়তো এর কথা সবাই জানেনা। এই পপ রক ব্যান্ড ‘দ্য বিটলস’ এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৬০ সালে। পপ রক ধারাকে সর্বপ্রথম বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় ব্যান্ডটি। বিটলসের জনপ্রিয়তা রয়ে গেছে এই প্রজন্মেও। এই সময়ে এসেও রাজমুকুট হয়ে বসে আছে অন্য সব ব্যান্ডের মাথার উপর। এমন কি প্রায় সব শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা দেখা যায় তাদের। যুগে যুগে জনপ্রিয় হয়ে থাকা এই ব্যান্ড এখন পর্যন্ত হায়েস্ট সার্টিফাইড মিউজিক আর্টিস্টের অবস্থান ধরে রেখেছে। ব্যান্ডের বয়সকাল ১০ বছর হলেও অ্যাক্টিভ ভাবে কাজ করেছে তিন বছর।
ব্যান্ডটিতে যারা সদস্য ছিলেন তারা হলেন, গিটারে ও ভোকালে জন লেনন। পল ম্যাকার্টনি যিনি ভোকাল, পিয়ানো, গিটার সব দিকে পারদর্শী। তাদের ড্রামারিষ্ট রিঙ্গো ষ্টার। তারপর যিনি আছেন তিনি আমাদের সবার পরিচিত একজন মানুষ। যিনি বাংলাদেশের একজন অতি আপনজন। যার অবদান আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীনতার যুদ্ধকালীন সময়ে ছিলো। হয়তো আপনারা চিনে গেছেন এতোক্ষনে আমি বলছি বিটলস এর গিটারিস্ট ও ভোকালিষ্ট জর্জ হ্যারিসনের কথা। এই ব্যান্ডের অন্যতম ভোকালিষ্ট জজ হ্যারিসন। জানবো তার সংক্ষিপ্ত জীবনী। পপ সঙ্গীতের জনপ্রিয় ইংল্যান্ডের এই শিল্পী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পন্ডিত রবি শংকরের অনুরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে ১৯৭১ সালের ১লা আগষ্টে এক বেনিফিট সঙ্গীত অনুষ্ঠানের কনসার্ট ফর বাংলাদেশ, এর আয়োজন করেছিলেন। এই কনসার্ট হতে সংগৃহীত ২,৫০,০০০ ডলার বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের জন্য দেয়া হয়েছিল।
লীড গিটারিস্ট হলেও বিটলসের প্রতিটি এ্যালবামেই জর্জ হ্যারিসনের নিজের লেখা ও সুর দেয়া দু’একটি একক গান থাকতো যা তাঁর প্রতিভার পরিচায়ক ছিল। বিটলস্ এর হয়ে এ সময়ের গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল – ইফ আই নিডেড সামওয়ান, ট্যাক্স ম্যান, হোয়াইল মাই গীটার জেন্টলী উইপস, হেয়ার কামস দ্য সান, এবং সামথিং বিটলস্ ভেঙ্গে যাবার পরও তাঁর জনপ্রিয়তা কমেনি। সত্তুরের পরবর্তী সময়ে তাঁর অনেক গান প্রচন্ড জনপ্রিয় হয়েছিল। এ সময় কালের গানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল – মাই সুইট লর্ড, গিভ মি পিস অন আর্থ, অল দোজ ইয়ার্স এগো, গট মাই মাইন্ড সেট অন ইউ, কনসার্ট ফর বাংলাদেশ।
১৯৬০ এর মাঝামাঝি সময় থেকে হ্যারিসন ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন এবং বিটলস এর অন্যান্য সদস্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ১৯৬৬ সালে হ্যরিসন তার স্ত্রী প্যাঁটিকে নিয়ে মুম্মাই সফরে যান। সেখানে তিনি বেশ কিছু ধর্গুমরুর সাথে দেখা করেন, সেতার নিয়ে পড়াশুনা করেন এবং কিছু তীর্থ স্থান পরিদর্শন করেন। ১৯৬৮ সালে উত্তর ভারতের হৃষীকেশ পরিদর্শনে যান বিটলসের অন্যান্য সদস্যদের সাথে নিয়ে এবং সেখানে মহর্ষি মহেশ যোগীর কাছে শিক্ষা নেন। ১৯৬০ সালে হ্যারিসন নিরামিষাশী হয়ে যান এবং পরমহংস যোগাননাদের কাছে ক্রিয়া যোগের দীক্ষা নেন। ১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি সময় লন্ডনের রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে হরেকৃষ্ণ মন্ত্র জপ শুরু করেন। এরপর থেকে হ্যারিসন হরেকৃষ্ণ সম্প্রদায়ের সাথে যুক্ত হন যা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল। তিনি তার বিশ্বাস সম্পর্কে বলেন, সকল মতবাদই একটি বৃহৎ বৃক্ষের শাখা। তুমি তাকে কি নামে ডাকবে এটা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বেচেঁ থাকবে বেচেঁ থাকুক বিটলস ও তাদের গান যুগান্তরের মাঝে। শুভ কামনা জানাই সময় নিয়ে আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনের সাথে থাকার জন্য। অভিনন্দন সবাইকে। আমরা এই ব্যান্ড নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখবো। জানাবো অনেক না জানা কথা। সাথে থাকুন।