– কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।
এই পৃথিবীতে যত মানুষ জন্ম নিয়েছে সবাই কেঁদে কেঁদে আগমণ করেছেন এই পৃথিবীতে এবং অনেকেই নিজের আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তবে এমন কিছু মানুষ আছেন তাঁরা শুধু নিজের আত্মীয় স্বজন বন্ধুবান্ধবকেই না, দেশের অনেক মানুষ এমনকি দেশের বাইরেরও অনেক মানুষকে কাঁদিয়ে চলে যান। কারণ তাঁরা পৃথিবীতে এমন কিছু কাজ রেখে যান, সেই কাজের জন্য অনেক মানুষ তাঁদেরকে মনের গভীরের সিক্ত ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখেন আজীবন। এই রকমই একজন ভালোবাসার মানুষ ছিলেন কিংবদন্তি রক ব্যান্ড শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। গত বছর ১৮ই অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যখন তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করে এই পৃথিবী থেকে চলে যান, তখন দেশের আনাচে-কানাচে থেকে শুরু করে দেশের বাইরে শত শত মানুষ বা তাঁর ভক্ত শ্রোতারা খবরটি জেনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। স্তব্ধ হয়ে যায় সঙ্গীত জগত! এত অল্প বয়সে তাঁর এই আকস্মিকভাবে চলে যাওয়া অনেকেই মেনে নিতে পারেননি তখন। গত ১৮ই অক্টোবর ছিল কিংবদন্তি রক ব্যান্ড শিল্পীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর অনেক কাছের মানুষ চেষ্টা করেছেন মন থেকে কিছু করতে তাঁর জন্য। আবার অনেকেই হয়তো তাঁকে সামনে রেখে নিজেকে প্রচার করতে চেয়েছেন! যা আমরা বিভিন্ন অঙ্গনেই দেখি কেউ মারা গেলে তাঁকে নিয়ে হইচই ফেলে দেন কিন্তু বেঁচে থাকতে কোনো খবরই রাখেন না। হয়তো আইয়ুব বাচ্চুর অনেক কাছের মানুষ এই কথা ভেবেই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কিছু করেননি তাঁকে নিয়ে, যদি কেউ মনে করেন যে তাঁকে নিয়ে বিজনেস করছেন! অনেক নতুন নতুন শিল্পী তাঁর গান কভার করেছেন। তবে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার থেকে একটি চাওয়া আছে সেটা হল-শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর সম্পদ হল তার সৃষ্টি করা সঙ্গীত। এই সঙ্গীতের যেন অপমান না করা হয়। আইয়ুব বাচ্চুর মত গুণী শিল্পীকে সবাই সম্মান জানাবে, তার গান গেয়ে তাকে ট্রিবিউট করবে কিন্তু সুর যেন না বিকৃত হয়। তার মৃত্যুর পর অনেকেই তার গান বিকৃত সুরে গেয়েছে। বিষয়টা দুঃখজনক এবং একজন প্রয়াত শিল্পীর জন্য অপমানজনক! তারা তাইই ভাবেন।
এই মৃত্যুবার্ষিকীতে যা যা ঘটেছে তা তুলে ধরার চেস্টা করা হয়েছে এই লেখায়। তাই আইয়ুব বাচ্চুর ভক্ত শ্রোতাদের উদ্দেশে সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদন। –
প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার থেকে আইয়ুব বাচ্চু বেঁচে থাকতে তাঁর জন্মদিনে যা যা করতেন যেমন-গরীবদের খাওয়ানো, এতিম শিশু কিশোরদের জন্য আহারের ব্যা্বস্থা করা, দোয়া-মোনাজাত করা ইত্যাদি করেছেন। তাছাড়া ঢাকায় মগবাজারের একটি কমিউনিটি হলে মিলাদ-মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল ঢাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম মিউজিশিয়ান। এছাড়াও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলো, রেডিও ও বিভিন্ন সংবাদ পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনগুলোতে আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করা হয়।
গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পীগণ বিভিন্ন গানের মাধ্যমে আইয়ুব বাচ্চুকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছেন। যেমন –
১। না নাহ এভাবে মেনে নেয়া যায়না – এই গানটির কথা ও সুর করেছেন লন্ডন প্রবাসী তিতাস কাজী। সঙ্গীতায়োজনে ছিলেন মীর মাসুম। গানটির প্রথম শিল্পী প্রিন্স মাহফুজ, পরের দু’জন শিল্পী এস আই টুটুল ও ফাহমিদা নবীও গানটি করেছেন।
২। গিটার মানেই তুমি আর তুমি মানেই গিটার – এই গানটির কথা, সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন শফিক তুহিন এবং গানটির শিল্পী তিনি নিজেই।
৩। রুপালী গীটার পড়ে আছে – এই গানটির কথা লিখেছেন রাইফিউজ্জামান রাফি, সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন সুমন কল্যাণ এবং গানটির শিল্পীও সুমন কল্যাণ।
৪। তুমি ছিলে প্রেরণা – গানটির কথা লিখেছেন আসিফ ইকবাল, সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ফুয়াদ আলমুক্তাদির এবং শিল্পী শুভ।
৫। যেখানে থাকো, ভালো থেকো – এই গানটির কথা, সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন তরুন মুন্সী এবং শিল্পী আসিফ আকবর।
৬। সবার প্রিয় এবি – গানটির কথা লিখেছেন আশিক বন্ধু, সুর ও সঙ্গীতায়োজন করেছেন সজীব দাস এবং শিল্পী মামুনুল ইসলাম।
৭। ঈশ্বর!তুমি সযতনে রেখো তাকে সে বড় অভিমানি – ভাইকিংস ।
৮। ওয়ান ইয়ার উইথাউট ইউ – মীর মাসুম ও মিনহাজ মাহের।
উপড়ে উল্লেখিত গান ছাড়াও অনেক নতুন শিল্পী কিংবদন্তি রক ব্যান্ড শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে শ্রদ্ধা জানান তাঁর গান গেয়ে। সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে আমরাও অসীম শ্রদ্ধাভরে তাঁকে স্মরণ করছি, তিনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।