– সালমা আক্তার।
জীবনের সার্থকতা সুন্দর কর্মের মাঝে, উদার ও উন্নত মনের মানুষগুলো জীবনের বড় পাওয়া বলতে শান্তির নাগাল পাওয়াকে বোঝেন, কেননা সারা জীবন মানুষ যা খুঁজছে বা করছে তার মূল হলো শান্তির নাগাল পাওয়া, ভেতরে ভেতরে প্রতিটা মানুষই একজন সাধক, কেউ জাগতিক জীবন নিয়ে সাধনায় ব্যস্ত, কেউ কেউ আধ্যাত্মিক জীবন নিয়ে সাধনায় ব্যস্ত। কাউকে অস্বীকার করে কাউকে গ্রহণ করা সম্ভব নয়, দিন আর রাত, দুই রূপ, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দেখলে দুই গুরুত্বপূর্ণ। কর্মের এই খেলা ঘরে সঙ্গীত পূর্ণ চন্দ্রের জ্যোৎস্নার মতো, প্রতি নিয়ত মায়ার বন্ধনে বেঁধে রাখে,মানুষ যতই ব্যস্ত হোক, শত ব্যস্ততার মাঝেও সঙ্গীতের সাথে প্রেম করতে ভুলে না। নিজের অজান্তেই হারিয়ে যায় সঙ্গীতের মধ্যে, সুরের সাগরে স্নান করে মানুষ শান্তির ছোঁয়া পেতে চায়। আজ আমরা হারিয়ে যাব একজন সঙ্গীত প্রেমিকের কথার ঢেউয়ে। গীতিকবি ও সুরকার মোঃ আশরাফ হোসেন মনে-প্রাণে ভালোবাসেন সঙ্গীত, তাঁর মতে সংগীত শব্দটির অর্থ এত ব্যাপক যে এই সীমিত পরিসরে তাকে সঞ্জায়িত করা কঠিন। কন্ঠশৈলী, যন্ত্রবাদন এবং নৃত্যকলা, এই তিনের সমন্বিত মেলবন্ধন – মোটা দাগে তাই হলো সঙ্গীত। সঙ্গীত সংক্রান্ত গুণীজনদের বিভিন্ন গ্রন্থে সংগীতকে এভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। তবে এই সংজ্ঞা আমার মনপুত হয়না। কারণ এই সংজ্ঞায় গীতিকবিতার উল্লেখ নেই যা লঘু সংগীতের মেরুদন্ড। এই মেরুদন্ডর পরে ভর করেই দাঁড়িয়ে থাকে একটি গানের শরীর।
আমার ভাবনায় সংগীতের সীমনা অনেক ব্যাপৃত। আমি সুর শুনি সাগরের গর্জনে, পাহাড়ের নিরবতায়, পাখিদের গুঞ্জনে। আবার মানুষের গাওয়া মেলডি নির্ভর গানও ভালবেসেই শুনি। তবে গান দেখা আমার মোটেই ভালো লাগেনা।
ওটা শ্রবন ইন্দ্রীয় দিয়েই উপভোগ করার বিষয় এবং তাই করি। ‘শুদ্ধসংগীত’ বলতে তিনি বোঝেন, শব্দটি শুধু শুদ্ধ উচ্চারণ আর বাণীর নির্ভুল ছন্দ বিন্যাসেই পার পেয়ে যাবে তা কখনোই নয়। এ ক্ষেত্রে শ্রোতাও একটি শুদ্ধতার উপাদান। সুতরাং শুদ্ধতার প্রশ্নে শ্রোতা এবং গানের অগ্র-পশ্চাতে যে সকল মানুষ সম্পৃক্ত থাকেন তাদের সকলের রুচি, মনন এবং শ্রবন ইন্দ্রীয় একই পর্দায় টিউন্ড হতে হবে। তখনই জন্ম নেবে একটি শুদ্ধ সঙ্গীত।
জীবনের সার্থকতা বলতে তিনি বোঝেন মানব জীবন ধন্য হওয়া! জীবন ধন্য হওয়ার মতো এমন কোনো কাজ করিনি তো এই আটপৌরে জীবনে। সৃজনশীল কাজে তৃপ্ত হয়ে গেলে তার যাত্রাপথ রুদ্ধ হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
তবে ভালো লাগে যখন মনে পড়ে এই অশ্রুতের গান কন্ঠে ধারণ করেছেন ওপার বাংলার কিংবদন্তী শিল্পী শ্যামল মিত্র, হৈমন্তী শুক্লা, অরুন্ধতি’র মত শিল্পীরা। আবার বাংলাদেশের রফিকুল আলম, আবিদা সুলতানা, সুবীর নন্দী, মনির খান, শাম্মী আকতার, পারভীন সুলতানা, রুখসানা মমতাজ আর এ প্রজন্মের কণা, কোনাল, মুক্তি সহ আরো শিল্পীবৃন্দ আমার লেখা এবং সুর করা গানে কন্ঠ দিয়েছেন- ভাবতেও ভালো লাগে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা বলতে তিনি জানান, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়েই উদ্বিগ্ন আমি।
ওদের কিছু জানা-বোঝার বাকি আছে নাকি ?
জীবনের বেলা তো প্রায় শেষ। ঘাটের কিনারে দাঁড়িয়ে আছি মাঝির প্রতিক্ষায়। তবুও যতখন আছি, ভালো কিছু সৃষ্টি হোক, সেই প্রত্যাশা করি অন্তর থেকে সর্বদা।