– সালমা আক্তার।
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষের এই দিনকে ঘিরে চারদিকে নানা আয়োজন, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাঠে বৈশাখ যেন এক মায়াবী নকশা এঁকে দিতে আসে ফিরে ফিরে, এই নকশার ভাঁজে ভাঁজে অংকিত রয় সংস্কৃতি প্রেমী মনের সুপ্ত চাওয়ার নানা রঙ্গরস। আবেগী মনের স্পর্শ নিয়ে এভাবেই হারিয়ে যেতে চায় সঙ্গীতাঙ্গনের নানা রকম কর্মকাণ্ডে শিল্পীর মন ও সংগীত কেন্দ্রীয় ব্যস্ততা। তারকা কথনে আজ রয়েছে সেসব ব্যক্তিদের জল্পনা কল্পনার চিত্র।
বাংলা সাহিত্যের জীবন্ত কিংবদন্তী বরেণ্য গীতিকবি শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সীমাহীন প্রতিভার উজ্জ্বল নক্ষত্র, একসাথে বহুগুনে গুণান্বিত, তিনি একাধারে-কবি, গীতিকবি, চলচ্চিত্রের কাহিনীকার, পরিচালক, বেতার ও টিভি নাটকের অভিনেতা, আবৃত্তিকার এবং সৌখিন চিত্রশিল্পী, তিনিই একমাত্র গীতিকবি, যিনি বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে নতুন প্রজন্মকে বাংলা গান রচনা কলাকৌশল বিষয়ে নানা উপায়ে নিঃস্বার্থভাবে শিখিয়ে যাচ্ছেন।
স্যার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের হাতে অসংখ্য অমর লিখুনীর সৃষ্টি হয়েছে, সেই রেল লাইনের ধারে, আমার মন পাখিটা যায় রে উড়ে যায়, যদি মরণের পরে কেউ প্রশ্ন করে, তুমি এমনই জাল পেতেছ, ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়, কিছু কিছু মানুষের জীবনে, দুঃখ আমার বাসর রাতের পালঙ্ক, বন্ধু হতে চেয়ে তোমার, এমন অসংখ্য সৃষ্টি বাংলা গানের ভুবনকে করেছে সমৃদ্ধ। তিনি সত্যিকারের মানুষ হয়ে মানুষের প্রাণের কথা ছুঁয়ে যেতে চান, একজন সত্যিকার সাধক হয়ে হুসকে ভেতরে পুষতে চান, যিনি পরপর তিনবার শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় পুরষ্কার পাওয়ার পর নতুনদের পুরষ্কার প্রাপ্তির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আর পুরষ্কার গ্রহণ করবেন না বলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রদান করেন, যা খুবই বিরল ঘটনা। শিল্প সাহিত্য অঙ্গনে যার পদচারণ উজ্জ্বল নক্ষত্রের সমতুল্য, তিনি স্যার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে তিনি একখন্ড চিরকুট তুলে দিয়েছেন পাঠক স্রোতাদের সামনে…
বৈশাখী কিসসা –
আয়রে কিষাণ আয় কিষাণী আয় চলে আয় ঢাকাতে
দেখবি কেমন ফুর্তি ওড়ে লক্ষ কোটি টাকাতে ।।
তোদের) বাপ-দাদা চৌদ্দপুরুষে যা দেখেনি কোনোদিন,
তোদের নামেই চালাচ্ছে তা, ভণ্ড লজ্জ্বা-শরমহীন।
যখন) খাজনা দিতে বাপ-দাদারা
থাকতো ব্যকুল দিশেহারা
তখন নাকি নাচতো তারা এমনি ঝাকা-নাকাতে ! !
তারাই) শোভাযাত্রা করতো সে কোন মহাজনের মঙ্গলে?
[(ধাক কেটে ধিন) বল না সে কার ?
(ধিন তেটে ধিন) বল না সে কার ?
(নাক কেটে দিন) বল না সে কার মঙ্গলে? ]
আয় দেখে যা, কী দেখায় এ ভাংড়া নাচের দঙ্গলে।
দাদায়) ভিটে-মাটি বাঁধা রেখে
বাঁচতো ঋণের বোঝা থেকে
নইলে সবই কেড়ে নিতো রাজ-জমিদার ডাকাতে ।।
তোরা) ”সংস্কৃতি” নাম শুনেছিস? জানিস কেমন রঙ্গ তার?
আয় দেখে যা, গঞ্জিকাতেই রঙ-বাহারি অঙ্গ তার।
এবার) একটু নাহয় তোরাও খাবি
গাঁও-গেরামে কোথায় পাবি?
দু’টান দিলেই দেখবি কেমন পারবি কোমর ঝাঁকাতে ।।
– মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান
এমন করে যেজন বলতে পারেন তিনিই একজন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান…
গীতিকবি নীহার আহমেদের বর্ণনায় ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পালন করার একটাই মাত্র সামাজিক উৎসব পহেলা বৈশাখ। এই উৎসবকে আমি সাম্যের উৎসবও বলে থাকি। প্রত্যেক বাঙালির মনে এই উৎসব স্বপ্নের রঙ মেখে যায়, আত্মশুদ্ধি ও নতুন ভাবনার বিশেষ বার্তা দিয়ে যায়। “পহেলা বৈশাখে” গীতিকবির ভাবনা হলো-আমরা যেনো নিজস্ব সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলকে আরো বেশী সমৃদ্ধ করার কাজে প্রত্যেকেই নিয়োজিত হতে পারি। তাহলেই ভালো থাকবো আমরা, ভালো থাকবে প্রিয় বাংলাদেশ।
উৎসবমূখর এই দিনকে কেন্দ্র করে থাকছে বেশ কিছু গান “পাগলামী” গানটি সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন এসকে সমীর, লেবেল গানবক্স, ইমন খানের “স্মৃতির জাদুঘর” গানটি সুর ও সংগীত পরিচালনা করেছেন আল আমিন খান, লেবেল সাউন্ডটেক। দুটো গান থাকছে মিউজিক ভিডিও কেন্দ্রিক।
কথা ও সুরের খেয়ায় ভাসিয়ে নিয়ে যায় বাংলা সরল প্রাণের মানুষের প্রাণ। হারিয়ে যায় সুখ অনুসন্ধানী মন সুরের ভুবনে।
২০১০, ২০১১ ও ২০১৬ ইং সালে চ্যানেল আই মিউজিক আ্যওয়ার্ড প্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ গীতিকার রবিউল ইসলাম জীবনের কাছে পহেলা বৈশাখ মানে সাম্য, সম্প্রতি ও ভ্রাতৃত্ববন্ধনের উৎসব, রবিউল ইসলাম জীবন ভাষার অলংকারে অলংকৃত করে বলেন, প্রতিটি মানুষের একটা ধর্মীয় উৎসব থাকে, ধর্মানুসারে ঈদ, পূজা, বড় দিন ইত্যাদি, ধর্মীয় উৎসবগুলো ধর্ম যার যার, উৎসব তার তার কিন্তু পহেলা বৈশাখ এমন এক উৎসব যেটাতে ধর্ম, গোত্র, জাতি ভেদাভেদ নেই, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র সর্বলোকের উৎসব আনন্দের দিন, এদিনের আয়োজনে যা থাকে সে সব সবার জন্য উন্মুক্ত, মেলা, খেলা, অনুষ্ঠান, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের জন্য পহেলা বৈশাখ আনন্দ ঢেউয়ের খেলায় হারানোর দিন। এবারের পহেলা বৈশাখ উপভোগ করতে তিনি যাচ্ছেন নোয়াখালী জেলার বেগম গঞ্জে, নিজ গ্রামে, পরিবার প্রিয়জনের সাথে কাটানোর তাগিদ অনুভব করেই বেগম গঞ্জে যাওয়া, এই বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হচ্ছে সাতটি গান, তিনটি গান নাটকের জন্য, বাকি চারটি মিউজিক ভিডিও। নাটকের গানে কন্ঠ দিচ্ছেন তামিম মৃধা, শাওন গানওয়ালা, ফরহাদ, অন্যদিকে মিউজিক ভিডিওতে ‘আবদার’ শিরোনামের গানে কন্ঠ দিয়েছে ইমরান ও পড়শি, ‘একলা হলেই বুঝতে পারি’ গানে কন্ঠ দিয়েছে মাহমিত সাকিব, এছাড়া থাকছে ইমন খানের কন্ঠে গান। রবিউল ইসলাম জীবনের শ্রোতাদের ভালোলাগার অনুভূতি ছুঁয়ে লিখে যেতে চান আজীবন।
সুরের হরষে দোলায়িত প্রাণ, সুরকার মাহফুজ ইমরানের অভিমত বৈশাখ এলেই মনে পড়ে ছেলেবেলার স্মৃতিচারণ। ছেলেবেলার গান। নতুন জামা, দই চিড়া, মন্ডা মিঠাই, সাজ বিন্নি খইয়ের কথা। মাঠে-মাঠে সোনালী ধান। কৃষকের গলা ছেড়ে গান, আর ফসল কাটার ব্যাপক ধুম। মা-খালা, মামী-চাচীদের নতুন ধানের পিঠা তৈরী। নকশী পিঠা, ক্ষীর, পোলাও ও পায়েশ। হাজার বছরের বাঙালীয়ানা আমাদের মনে গেঁথে আছে আজন্মকাল ধরে। বৈশাখে প্রকৃতির নবরূপ সাজ। বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, সংক্রান্তি, পুতুল নাচ, গাছ ঘুরানী, রাধা চক্কর, আজো হৃদয়ে দোলা দেয়।
বৈশাখ এলেই নতুন বছর বরণ উপলক্ষে সংস্কৃতি অঙ্গনেও ঝড় ওঠে। কে কার আগে কোন কাজ মুক্তি দেবে। কাজেও দুরন্ত প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় মাহফুজ ইমরান নিজেও একজন, সেই সুবাদেই এই নতুন বছর মাথায় রেখে দর্শক-শ্রোতা ও প্রিয় মানুষদের জন্য যে সব গান গুলি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।
মাহফুজ ইমরানের সুরে, প্রসেনজিত মন্ডলের কথায় গামছা পলাশের ‘ফাঁকি দিলে যাবো মরে’, রিংকু’র ‘দুঃখ বারোমাস’, রিজভী রইজের কথায় সানস্টার মাল্টিমিডিয়ার গান ‘মনচোরা প্রজাপতি’ কম্পোজঃ অপু রায়হান, ভিডিও নির্মান আর এস জুয়েল নীরব। প্রসেনজিত মন্ডলের কথায়, মুনিয়া মুন এর ‘তুই আমার’ এবং রূপসা”র ‘একলা ঘরে মন বসেনা’ কম্পোজঃ এইচ আর লিটন ভাই। সজীব শাহরিয়ার ভাই এর কথায়, মোহাম্মদ মিলন ভাই এর গাওয়া ‘তুমি আমার রানী’, ‘কেমন আছো অভিমানী’ কম্পোজারঃ এম এম পি রনি ভাই।
সালমা আক্তারের কথায়, ইউসুফ রায়হান ও স্বর্ণার গাওয়া গান ‘পাগল আমার মন’ আসার কথা রয়েছে লেবেল শুদ্ধতা চ্যানেল। মোঃ মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার কথায়, রিংকু’র গান দেহ গাড়ী, এছাড়াও বেশ কিছু ভালো মানের কাজ মু্ক্তির অপেক্ষায়…
সব শেষে এটাই বলতে চাওয়া বছরে একটা হলেও ভালো গান করতে চাওয়া। কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটি বজায় রাখতে চাওয়া। সবার ভালোবাসায় ধন্য হতে চাওয়া। শুদ্ধ বাংলা গান করতে চাওয়া। বাংলাকে ভালোবেসে এবং বাংলাদেশকে সম্মানে সমৃদ্ধ দেখার স্বপ্ন। সবার সুস্বাস্হ্য কামনায় ভালোবাসা অন্তহীন।
পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে সুর সাধনে মগ্ন সুরকার ও সংগীত পরিচালক আল আমিন খানের থাকছে নানা চমকপ্রদেয় আয়োজন। ডি পি মিউজিক ব্যনারে এই দিনকে কেন্দ্র করে থাকছে কামরুজ্জামান রাব্বির কন্ঠে প্রসেনজিত মন্ডলের লিখা গান ‘পল্লিবালা’, শশি মাল্টিমিডিয়া এর ব্যানারে কামরুজ্জামান রাব্বীর কন্ঠে ন ন নজরুল ইসলামের লিখা ‘বুকের ভিতর দুঃখ’, একই ব্যনারে ন ন নজরুল ইসলামের লিখা ইমন খানের কন্ঠে গান ‘জীবন সাথী’, শশি মাল্টিমিডিয়া এর ব্যনারে ন ন নজরুল ইসলামের লিখা আল আমিন খানের সুর সংগীতে গান ‘ও সুন্দরী মাইয়া’ শিল্পী প্রমিত, শুদ্ধতা চ্যানেলে আসছে প্রসেনজিত মন্ডলের লিখা গান “কদম মেয়ের কানের দুল” শিল্পী কামরুজ্জামান রাব্বী, সাউন্ডটেক এর ব্যনারে আসছে নিহার আহমেদের লিখা গান “স্মৃতির জাদুঘর” শিল্পী ইমন খান।
প্রিয় সময়টা প্রিয় কিছু মুখের সাথে কাটাতে চান রমনার বটমূলে। দর্শক মনের ভালোবাসা খুঁজে ফিরতে আল আমিন খানের এই পথ চলা, তিনি ভালোবাসেন সঙ্গীতাঙ্গনের সকল কাজ নিষ্ঠার সাথে করতে।
সঙ্গীতাঙ্গনের আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র, কাজী দেলোয়ার হোসেন, তিনি বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের সুরকার ও মিউজিক ডিরেক্টর, তিনি বিশ্বাস করেন পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালীর আনন্দ ও উচ্ছ্বাস উদযাপনের দিন, পুরোনো শোক তাপ পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শুভ সূচনার দিন পহেলা বৈশাখ। এই দিনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ বেতারে সারা মাস ব্যাপী প্রচারিত হচ্ছে কাজী দেলোয়ার হোসেনের সুর ও সংগীত পরিচালনায় গান ‘জাগলো সারা দিকে দিকে’, গানের কথা সাজিয়েছেন গীতিকবি মনিরুজ্জামান পলাশ, শিল্পকলা একাডেমীতে চলছে তিন দিন ব্যাপী পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মোহরা, ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বারে সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠান বাংলার মুখে থাকছে কাজী দেলোয়ার হোসেনের সুর ও সংগীত পরিচালনায় হৃদয়হরণকারি গান। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হবে কাজী দেলোয়ার হোসেন পরিচালনায় সংগীত অনুষ্ঠান। এছাড়া থাকছে সাইফুল আজম বাশারের কথায় গান ‘নববর্ষ’ সুর দিয়েছেন মোখলেছুর রহমান মিন্টু, সংগীত পরিচালনায় কাজী দেলোয়ার হোসেন। ‘এলোরে বৈশাখ’ শিরোনামের গানটির কথা, সুর ও সংগীত পরিচালনায় কাজী দেলোয়ার হোসেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও সংগীত পরিচালক কাজী দেলোয়ার হোসেন ভালবেসেন আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকতে পরিবার ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে, ভালোবাসেন শিল্প সংস্কৃতিকে, ভালবাসেন সংগীতকে কেন্দ্র করে কিছু করতে।
এভাবেই বেঁচে থাক বাংলার বুকে, শিল্প, সংস্কৃতির বুকে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অনুষ্ঠানমালা।