– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।
সত্যিই আমি সৌভাগ্যবান।
বাংলাদেশের প্রথম সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে একুশে পদক প্রবর্তন করেন। বঙ্গভবনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে প্রথমবারের মতো একুশে পদক প্রদান করা হয়। পরে কবি জসীম উদ্দীন ও বেগম সুফিয়া কামাল একুশে পদকে ভূষিত হন।
প্রত্যেক পদকপ্রাপ্তকে একটি পদক, একটি সম্মাননা সনদ, একটি রেপ্লিকা এবং পুরস্কারের অর্থমূল্য প্রদান করা হয়ে থাকে। একুশে পদকে ১৮ ক্যারেটের সোনা দিয়ে তৈরি ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি পদক প্রদান করা হয়, যার নকশা করেছেন নিতুন কুণ্ডু। প্রাথমিকভাবে পুরস্কারের অর্থমূল্য ২৫,০০০ টাকা দেয়া হতো; বর্তমানে এটি ২ লক্ষ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এই সম্মানীয় পুরুস্কারে ভূষিত হয়েছেন এ বছর অনেকে। তার মধ্যে সঙ্গীত বিভাগ থেকে জনপ্রিয় শিল্পী সুবীর নন্দী, খাইরুল আনাম শাকিল ও মরহুম আজম খান।
সুবীর নন্দী হলেন একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী। চলচ্চিত্রের সঙ্গীতে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করেন। সঙ্গীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করছেন এই বছর। সঙ্গীতাঙ্গনের সাথে আলাপ কালে তিনি তার অনুভূতির কথা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন সত্যিই এটা আমার সৌভাগ্য। সত্যিই আমি সৌভাগ্যবান। দেশ আমাকে এমন একটি মহান পদকে ভূষিত করেছেন তাতে আমি অতন্ত আনন্দীত ও গৌরবান্বিত। আমি ধন্যবাদ জানাই দেশের বর্তমান প্রধান মন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে। আমাকে এমন মহান পদকে ভূষিত করায়।
সুবীর নন্দী হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং থানায় নন্দী পাড়া নামক মহল্লায় এক কায়স্থ সম্ভ্রান্ত সঙ্গীত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।। তার নানা বাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার বাদেআলিশা গ্রামে, তার পিতা- সুধাংশু নন্দী ছিলেন একজন চিকিৎসক ও সঙ্গীতপ্রেমী। তার মা পুতুল রানী চমৎকার গান গাইতেন কিন্তু রেডিও বা পেশাদারিত্বে আসেন নি। ছোটবেলা থেকেই তিনি ভাই-বোনদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তালিম নিতে শুরু করেন ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে। তবে সঙ্গীতে তার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই। বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশবকাল চা বাগানেই কেটেছে। পাঁচ-ছয় বছর বয়স পর্যন্ত বাগানেই ছিলেন। চা বাগানে খ্রিস্টান মিশনারিদের একটি স্কুল ছিল, সেখানেই পড়াশোনা করেন। তবে পড়াশোনার অধিকাংশ সময়ই তার কেটেছে হবিগঞ্জ শহরে। হবিগঞ্জ শহরে তাদের একটি বাড়ি ছিল, সেখানে ছিলেন। পড়েছেন হবিগঞ্জ গভঃ হাইস্কুলে। তারপর হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সুবীর নন্দী সেকেন্ড ইয়ারে পড়তেন।
১৯৬৩ সালে তৃতীয় শ্রেণী থেকেই তিনি গান করতেন। এরপর ১৯৬৭ সালে তিনি সিলেট বেতারে গান করেন। তার গানের ওস্তাদ ছিলেন গুরু বাবর আলী খান। লোকগানে ছিলেন বিদিত লাল দাশ। সুবীর নন্দী গানের জগতে আসেন ১৯৭০ সালে ঢাকা রেডিওতে প্রথম রেকর্ডিং এর মধ্য দিয়ে। প্রথম গান ‘যদি কেউ ধূপ জ্বেলে দেয়’ -এর গীত রচনা করেন মোহাম্মদ মুজাক্কের এবং সুরারোপ করেন ওস্তাদ মীর কাসেম। ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে
গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গেয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। চলচ্চিত্রে প্রথম গান করেন ১৯৯৭ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত সূর্যগ্রহণ চলচ্চিত্রে। ১৯৮১ সালে তার একক এ্যালবাম “সুবীর নন্দীর গান” ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তিনি গানের পাশাপাশি দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন ব্যাংকে। তার দীর্ঘায়িত জীবন কামনা করি।