– রহমান ফাহমিদা।
কাঙ্গালিনী সুফিয়া-এই নামটি বাংলাদেশের বাউল শিল্পী হিসেবে লোকসঙ্গীত জগতে একটি জ্বলজ্বলে নক্ষত্রও বলা চলে। আজ তিনি মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণজনিত অসুস্থতায় ঢাকার অদূরে অবস্থিত সাভারের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। গত মঙ্গলবার রাতে তাঁকে সাভারের এনাম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) রাখা হয় পরে তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখে কেবিনে পাঠানো হয়। জানা যায়, মঙ্গলবার রাত আটটায় হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। তারপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা করে চিকিৎসকগন জানান, তাঁর ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে এবং তাঁর হার্ট ও কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাঁর জরুরি সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন। সে জন্য অনেক টাকার দরকার। তাঁর পরিবারের সেই সামর্থ্য নেই তাঁর সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত করার। তাই সকলকে আহবান করছি এগিয়ে আসার জন্যে।
এই শিল্পীর জীবনের অতীতে একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাই অনেক চড়াই উৎরাই পার করে সে গানের জগতে পদার্পণ করেছেন। ছোটবেলা থেকে গান পাগল মানুষ ছিলেন তিনি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে সে তার সঙ্গীত জীবন শুরু করেন। একতারা বাজিয়ে বাউল গান করার পাশাপাশি সে লালনগীতি আর লোকসঙ্গীত গান করেন। অনেক অল্পবয়সে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। যখন তাঁর বিয়ে হয় তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। সুধীর হালদার নামে একজন বাউলের সাথে তাঁর বিয়ে হয় যদিও সেই বিয়ে বেশিদিন টিকেনি। পরবর্তীতে ১৯৭৮সালে তিনি ওস্তাদ হালিম বয়াতির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। সেই সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সুফিয়া খাতুন নাম ধারণ করেন। তাঁর গুরু ছিলেন দেবেন থাপা ও গৌর মহান্ত। কাঙ্গালিনী সুফিয়া নিজেই ৫০০টি গান রচনা করেছেন। তাছাড়া তিনি ‘রাজ সিংহ’ চলচ্চিত্রে প্রথম কণ্ঠ দেন। তিনি অভিনয়ও করেন দেয়াল, নোনাজলের গল্প প্রভৃতি নাটকে। উল্লেখ্য নোনাজলের গল্প নাটকটি তাঁর জনপ্রিয় গান ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’ গানটির অবলম্বনে নির্মিত হয়। যেখানে সুফিয়া প্রধান চরিত্র ‘বাউলের’ ভুমিকায় অভিনয় করেন। এছাড়াও তিনি ‘বুকের ভেতরে আগুন’ নামে একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
সঙ্গীতে তিনি প্রায় ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরষ্কার লাভ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, চীন ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সাবেক ডিজি মুস্তফা মনোয়ার সুফিয়ার গান শুনে তাঁকে ‘কাঙ্গালিনী’ উপাধি প্রদান করেন। তারপর থেকে তিনি সুফিয়া খাতুন থেকে দেশব্যাপী ‘কাঙ্গালিনী সুফিয়া’ নামে পরিচিতি লাভ করেন।
আজকে এই গুণী শিল্পীর বিপদের সময় সকল শিল্পী কলাকুশলীদের এগিয়ে আসা উচিৎ। আল্লাহ্ তাঁর ও তাঁর পরিবারের সহায় হউন। আমিন।