– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।
হায় কি হলো! আকাশ থেকে মাথায় বাজ পড়ার মতো বজ্র খবর। বিশ্বাষ করতে পারছি না কোন মতেই। এই তো দুদিন আগে শো করে এলো। যেই মানুষটা ছিল আমাদের পরম বন্ধু, অতি কাছের লোক। কত কি শেখা হলো তার কাছে গান সম্পর্কে। আরো কত কি শিখার আগ্রহ ছিল। ভাবছি এই গানটা করবো, ঐ শোটা করবো। এই ধরণের নানা কথার গুঞ্জনে মেতে ওঠেছে রাজধানীর স্কোয়ার হাসপাতালের চত্ত্বর। আর কেন হচ্ছে এই ধরণের গুঞ্জন শুণে হয়তো বিশ্বাষ করতে চাইবেনা মনটা। অবিশ্বাষ্য হলেও এটাই সত্যি যে আমাদের রক লিজেন্ডার ব্যান্ডগুরু ব্যান্ডের মাথার তাজ এলআরবি খ্যাত আইয়ুব বাচ্চু আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছেন চির শান্তির বাতাস পেতে ঘুমন্তপুরে। যেখানে আর কেউ কোনদিন ঘুম থেকে জেগে ওঠেনা। খবরটা যেন সব এলআরবি ভক্তদের অপ্রিয় বাক্য। আজ সকাল আনুমানিক ৮:৩০ মিনিটের সময় সকালের নাস্তা করে কেবল বসলো। তার বাড়ির কাজের ছেলেকে বললেন যে আমার পিঠে একটু ব্যাথা করছে। তুমি আমাকে একটা মুভ এনে মালিশ করে দাও। ছেলেটা জানান যে, আমি ঔষধটা এনেই দেখি স্যার বেহুঁশ হয়ে পরে আছেন। আমি ড্রাইভারকে বললে সে তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে স্যারকে হাসপাতালে নিয়ে যায় রাস্তায় ওনার মৃত্যু হয়। ছেলেটার দেয়া বিবৃতিতে বুঝা যায় তিনি স্ট্রোক করেছেন, উপযুক্ত সময়ের অভাবে হাসপাতালে নেবার আগেই তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় হয়ে যান। হাসপাতালে আনা হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকে দেখার জন্য সঙ্গীত জগৎ এর সব মিউজিশিয়ান, শিল্পী ও কলাকুশলীরা ছুটে আসেন অশ্রু ভেজা নয়নে। শিল্পী আখি আলমগীর জানায় কখনো কল্পনাই করতে পারিনি সে আমাদের ছেড়ে এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবে। তার লাশের দিকে তাকিয়ে মনে হলো যেন এখনো তিনি মরেননি। বিশ্বাষ হচ্ছিলো না কিছুতেই। কিন্তু মেনে নিতে হচ্ছে তার এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে।
সঙ্গীতের আরেক তারকা জনপ্রিয় শিল্পী কনা হাসপাতালে ছুটে আসেন আইয়ুব বাচ্চুকে দেখতে। কনা বলেন প্রথমেই আমি খবর পাই যে বাচ্চু ভাই বেচেঁ নেই , কিন্তু আমি আমলে নেইনি। বিশ্বাষ হচ্ছিলো না। কি করে বিশ্বাষ করবো ?
শুনে মনটা একদম খারাপ হয়ে গেলো। হাসপাতালের চারদিক শুধু বাচ্চু ভক্ত দর্শক। মন যেনো মানছে না কারো একটা নজর দেখার জন্য। কিন্তু দেখতে দেওয়া হচ্ছে না কাউকে। সেই সময়টায় নায়ক ফেরদৌস, শিল্পী আঁখি আলমগীর, শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ, সৈকত আলী ইমন এক নজরের মতো দেখে নেন চির বিদায়ি প্রিয় আইয়ুব বাচ্চুকে। আইয়ুব বাচ্চু সম্পর্কে শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। কিন্তু তাই বলে বাচ্চু যে এমন করে হঠাৎ চলে যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি। রফিকুল আলম স্কোয়ার হাসপাতালের গেটের ভেতর দাড়িয়ে বলেন, মানুষ মরণশীল। মরতে হবেই। এটাই চির সত্য। কিন্তু এই মৃত্যুটা আমাদের কাম্য ছিলনা। বিশ্বাষ হয়না, কি করে চলে গেলেন আমাদের বাচ্চু। সৈকত আলী ইমন বলেন, ভাই আমাদের সবাইকে একা করে চলে গেলেন। শিল্পী সামিনা চৌধুরী ও ফাহমিদা নবী বলেন, সবাইকে একদিন যেতে হবে। আমরাও কেউ থাকবো না। সবাই বাচ্চু ভাই এর জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। এভাবে সব শিল্পীরা তাদের নিজ নিজ মতামত জানান। এসময় আইয়ু্ব বাচ্চুর কাছের লোকেরা জানান আগামীকাল সকাল দশটার সময় শহিদ মিনারে হবে তার প্রথম জানাযা। তারপর ঈদগাহ্ ময়দানে দ্বিতীয় জানাজা। শেষে তার দেশের বাড়ি চট্রগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে, এবং ধারণা করা হয় যে, বাচ্চুকে তার মায়ের পাশে সমাহিত করা হবে। দেশবাসীর কাছে সঙ্গীতাঙ্গন পরিবার আইয়ুব বাচ্চুর জন্য দোয়াপ্রার্থী।