– মোশারফ হোসেন মুন্না।
শুরুতে ভালোলাগা। এরপর প্রেম। প্রেম থেকে বিয়ে। তারপর সুখের সংসার। মধুর এই সংসারে থাকে অসংখ্য স্মৃতি। হাসি, খেলা, আনন্দ, উচ্ছ্বাস – সবকিছুর পরেও মাঝে মাঝে শুনতে হচ্ছে ‘বিচ্ছেদ’ নামের শব্দটি। এই ‘বিচ্ছেদ’ নামের বিষ বৃক্ষটি যখন সামনে উপস্থিত হয় তখন সব আবেগ হারিয়ে যায় মুহুর্তে। বিশেষ করে পছন্দের মানুষ, ভালোলাগার মানুষ, স্বপ্নের মানুষদের জীবনে এমন ঘটনা ঘটলে মেনে নেওয়া কঠিন হয়ে পরে।
সাধারণ মানুষের বিবাহবিচ্ছেদের খবর খুব একটা জানাজানি হয় না। কিন্তু তারকাদের বিচ্ছেদের খবর ছড়িয়ে যায় মুহুর্তের মধ্যে। তাঁদের বিচ্ছেদ নিয়ে কৌতুহলেও শেষ নেই। আলোচনা হয় অনেক। সমালোচনাও কম হয় না। তারকাদের প্রতি বাড়তি আগ্রহের কারণেই এমনটি ঘটে। কেউ কেউ তাঁদের বিচ্ছেদে দুঃখ প্রকাশ করে। কেউ কেউ শামিল হয় নানা রকম মুখরোচক সমালোচনায়। অনেকে উপহাস করে। তবে তারকাদের এই বিচ্ছেদের প্রভাব সাধারণ মানুষের উপরও পড়ে। বিবাহ বিচ্ছেদ এর মত এমন এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘঠনা যাদের জীবনে ঘটেছে তাদের নিয়ে সাজানো আজকের সঙ্গীতাঙ্গন।
বিজরী বরকত উল্লাহ-শওকত আলী ইমনঃ অভিনেত্রী বিজরী বরকত উল্লাহ ও সঙ্গীত পরিচালক শওকত আলী ইমন একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে ফুটফুটে সুন্দর এক কন্যা সন্তান জন্ম হয়। কিন্তু তাদের এ বিয়ে বেশিদিন টেকেনি। ডিভোর্স হয় তাদের। বিজরী পরে বিয়ে করেন অভিনেতা ইন্তেখাব দিনারকে। অন্যদিকে ইমন পরবর্তীতে একাধিক সম্পর্কে জড়ালেও নতুন করে এখনো আর কাউকে বিয়ে করেননি।
জেমস-রথিঃ
জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা জেমস ভালোবেসে বিয়ে করেন অভিনেত্রী রথিকে। কিন্তু তাদের এ সংসার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। জেমস প্রেমে মজে গিয়েছিলেন প্রবাসী বেনজির নামের এক তরুণীর প্রেমে। আর এতেই ভেঙে যায় তাদের সংসার।
রবি চৌধুরী-ডলি সায়ন্তনীঃ
সঙ্গীতশিল্পী রবি চৌধুরী ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সঙ্গীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনীকে। কিন্তু তাদের ভালোবাসার সংসার শেষ পর্যন্ত টেকেনি।
পার্থ বড়ুয়া-শ্রাবন্তীঃ ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন সোলসখ্যাত ব্যান্ড তারকা পার্থ বড়ুয়া এবং অভিনেত্রী শ্রাবন্তী। কিন্তু খুব বেশিদিন সেই প্রেম স্থায়ী হয়নি।
হৃদয় খান-সুজানাঃ হৃদয় খান প্রায় চার বছর ধরে প্রেম করে বিয়ে করেন সাত বছরের বড় সুজানাকে। পত্র-পত্রিকা আর টিভির সামনেও স্বগর্বে নিজের প্রেমের কথা, ভালোবাসার কথা বলেছেন হৃদয় খান। কিন্তু হৃদয় খানের অনেক সাধনার বিয়ে বছর ঘুরার আগেই ভাঙনের মুখে পড়েছে। কারণ, পারস্পরিক সমঝোতা না হওয়া। বিচ্ছেদ হয় হৃদয়-সুজানার।
সঙ্গীতশিল্পী মিলা-পারভেজঃ
বিয়ের মাত্র চার মাসের মাথায় সংসার ভেঙে যায় পপ গায়িকা মিলা ও বৈমানিক পারভেজ সানজারির। গত বছর ১৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে মিলা নিজেই মনোমালিন্যের কারণেই এই ডিভোর্স দেন। মিলা-পারভেজ ১০ বছর প্রেম করার পর বিয়ে করেছিলেন।
ন্যান্সি-সৌরভঃ ভালোবেসে ব্যবসায়ী সৌরভের সঙ্গে ২০০৬ সালে ঘর বেঁধেছিলেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ন্যান্সি। পরের বছরই ঘর আলো করে আসে কন্যা রোদেলা। তবে বছরখানেক ধরে সম্পর্কের টানাপড়েনের পর দুইজনের সম্মতিতেই বিচ্ছেদ ঘটে তাদের।
আরফিন রুমি-প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীঃ
আমেরিকায় শো করতে গিয়ে ২০১২ সালে কামরুন্নেসার সঙ্গে পরিচয় হয় রুমির। এরপর প্রেম ও চটজলদি বিয়ে। কামরুন্নেসাকে বিয়ে করার কয়েক মাসের মাথায় প্রথম স্ত্রী অনন্যার করা নারী নির্যাতন মামলায় কারাগারেও যেতে হয়েছিলো রুমিকে। এরপর বিভিন্ন শর্ত মেনে বছর দেড়েক আগেই অনন্যার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ডিভোর্স হয়ে যায় রুমির। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রী কামরুন্নেসাকেও ডিভোর্স দেন এই সঙ্গীত তারকা।
কণ্ঠশিল্পী সালমা-শিবলী সাদিকঃ
২০১১ সালের ২৬ জানুয়ারি দিনাজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ও দিনাজপুরের পিকনিক স্পট স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী শিবলী সাদিকের সঙ্গে হঠাৎ করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সালমা। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি সালমার কোল জুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান। বিয়ের বছর দুয়েক আগে দিনাজপুরের স্বপ্নপুরীতে একটি অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করতে গেলে শিবলীর সাথে সালমার পরিচয় হয়। সেই সুত্র ধরেই দুই পরিবারের মধ্যস্থতায় সম্পূর্ণ ঘরোয়াভাবে তাদের বিয়ে হয়। গত বছর ২০ নভেম্বর একটি রেস্তোরাঁয় তাদের ডিভোর্সের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
তাহসান-মিথিলাঃ
দাম্পত্য জীবনের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটিয়েছেন সেলিব্রিটি জুটি তাহসান-মিথিলা। কিন্তু অফুরন্ত ভালোবাসার কাছে সেই বিচ্ছেদ একেবারেই নগণ্য। গল্পটা এক যুগ আগের। ২০০৪ সাল। ভালোবাসা দিবস এলেই বাড়ির দরজায় ফুল রেখে এসে মিথিলাকে ফোন করতেন তাহসান। তখন দু’জনই শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তাহসান। সে সময় মিথিলার সঙ্গে পরিচয়। মিথিলার এক বন্ধু তার ছোট ভাইয়ের জন্য তাহসানের অটোগ্রাফ নিতে যাওয়ার সময় মিথিলাকে সঙ্গে নিয়ে যান তাহসানের বাড়িতে। ওই সময় মিথিলা তাহসানের কিছু গান শুনলেও ভক্ত হননি। সেই প্রথম পরিচয় তাদের। সে থেকে প্রেম। এ সম্পর্কেই ২০০৪-০৬ সাল পর্যন্ত কেটে যায়। পরে মিথিলার জন্য গান লিখেন তাহসান। ২০০৬ সালের ৩ আগস্ট প্রেমের সম্পর্কের ইতি টেনে বিয়ে করেন তারা। সংসারে যোগ হয় আইরা তাহরিম নামে তাদের একমাত্র কন্যা।
মান-অভিমান ঝগড়া মানুষের জীবনেরই একটি অংশ। জীবনে ভালো কিংবা খারাপ সময় আসবে এটাই স্বাভাবিক। এমন মানসিকতায় বিশ্বাসী তাহসান। বিয়ের পর রিল ও রিয়েল লাইফের সফল জুটির উদাহরণ হয়েই কাজ করেন তাহসান-মিথিলা। তারপরও এর মাঝেই লুকিয়ে ছিল দূরত্বের বীজ। কয়েক মাস ধরে তেমনই ইঙ্গিত ভাসছিল মিডিয়ায়। তখন সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর না পাওয়া গেলেও অবশেষে দু’জনে একসঙ্গে জানালেন ডিভোর্সের খবর। এরপর কোটি ভক্তদের বিশ্বাস ভেঙে দীর্ঘ ১১ বছরের সংসারের ইতি টানেন তাহসান-মিথিলা। চলতি বছরের মে মাসে তাহসান ও মিথিলার বিবাহ বিচ্ছেদের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
এই ছিল আজকের সঙ্গীতাঙ্গন এর বিবাহ বিচ্ছেদের জানা অজানা কথা। সবার সুস্থ সুন্দর জীবন কামনায়।