– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।
মিল্টন খন্দকার একজন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। নিজে স্বপ্ন দেখেন, অন্যকে দেখান। সদাহাস্য, নিরহংকারী এই গুণী মানুষটি ১৯৮৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ৩৫০০ গান উপহার দিয়ে আমাদের টেলিভিশন, রেডিও, অডিও ও সিনেমা শিল্পর গানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। কয়েক’শ তুমুল শ্রোতাপ্রিয় গানের জননন্দিত এই গীতিকবি ও সুরস্রষ্টা ২০১৩ সালে ‘খোদার পরে মা’ ছবির গানের জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া ১৯৯৫ সালে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির দেওয়া সম্মাননাসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন তিনি।
মিল্টন খন্দকার ১৯৬৭ সালে কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ায় এক প্রগতিশীল, সংস্কৃতিমনা ও সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা খন্দকার আহমেদুল হক ছিলেন পেশায় পুলিশ কর্মকর্তা। আট ভাই এক বোনের মধ্যে মিল্টন খন্দকার ষষ্ঠ। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি স্ত্রী ও দুই কন্যাসন্তানের জনক।
ছাত্রাবস্থায় অভিনয়ের প্রতি অনুরক্ত হয়ে সম্পৃক্ত হন ‘বোধন কুষ্টিয়া নাট্যসম্প্রদায়’ এর সাথে। অভিনয় করেন অনেক মঞ্চনাটকে। তার অভিনীত মঞ্চনাটকের মধ্যে বন্দি ছেলে, ওরা কদম আলী, আলো একটু আলো, হীরক রাজার দেশে, মিছিল, হারাধনের দশটি ছেলে উল্লেখযোগ্য। নাট্যচর্চা করতে গিয়ে কণ্ঠসাধনার প্রয়োজন হওয়ায় ওস্তাদ খন্দকার মিজানুর রহমান বাবলুর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। তার উৎসাহে গানের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে পরে ঢাকায় এসে ভর্তি হন সংগীত মহাবিদ্যালয়ে।
১৯৮৭ সালে তিনি নিজের লেখা ও সুরে হাসান চৌধুরীর কণ্ঠে ‘সেই তুমি’ এ্যালবাম নিয়ে অডিও বাজারে প্রবেশ করেন। ‘বেতার জগত’ থেকে প্রকাশিত সেই প্রথম এ্যালবামই হিট হয়। তারপর ১৯৮৮ সালে দিলরুবা খান এবং ১৯৮৯ সালে ডলি সায়ন্তনীর গাওয়া ‘হে যুবক’ অডিওশিল্পে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করে। সুপার-ডুপার হিট হয় ‘হে যুবক’। ১৯৯৬ সালে অডিও বাজারে আরেক বিস্ময় হিসাবে নিয়ে আসেন মনির খান কে। ‘তোমার কোন দোষ নেই’ নামের মনির খানের গাওয়া সেই এ্যালবাম ও সুপার-ডুপার হিট হয়। তার পরের ইতিহাস কম বেশি সবার জানা। অঞ্জনা শিরোনামে ২৫টির মতো গান লিখে মনির খানকে নিয়ে ১৪টি একক এ্যালবাম করে দেশ মাতিয়েছেন।
তাকে শিল্পী তৈরির কারিগর বলা হয়ে থাকে। নতুনদের নিয়ে নিরীক্ষা করতে পছন্দ করেন তিনি। ডলি সায়ন্তিনী, মনির খান, মনি কিশোর, বাদশা বুলবুল, পলাশ, এস ডি রুবেল, পলি সায়ন্তিনী, সাজু, মহসিন খান, রোকসানা মমতাজ, সুমন বাপ্পী, শশী জাফর, দেবযানী, শান্তা শ্রাবন্তী, জাফর ইকবাল আকাশ প্রমুখ নবাগতর অডিও বাজারে এনে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া নতুন গীতিকবি তৈরির জন্য ১৯৯৭ সালের ১ ডিসেম্বর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘গীতি কাব্য চর্চা কেন্দ্র’। সারা দেশের বিভিন্ন এলাকার প্রায় দুই হাজার নবীন গীতিকবি হাতে কলমে গান লেখার কলাকৌশল চর্চা করে গেছেন গীতিকাব্য চর্চা কেন্দ্র থেকে। ১৯৯০ সাল থেকে ‘ঘেরাও’ সিনেমা দিয়ে শুরু করেন সিনেমায় গান লেখা। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ সিনেমায় গান লিখেছেন। সিনেমা ও অডিওতে তার জনপ্রিয় কিছু গানঃ
১. খুব কাছাকাছি তুমি আমি আছি
২. রঙচটা জিন্সের প্যান্ট পরা
৩. আমি পাথরে ফুল ফোটাবো
৪. ও সাথীরে যেও না কখনো দূরে
৫. আমি যে তোমার কে কাছে এসে
৬. তোমরা কাউকে বলো না
৭. আকাশেতে লক্ষ তারা চাঁদ কিন্তু
৮. তোমার কোন দোষ নেই
৯. খ্রিষ্টান হইলে কফিনে
১০. চাল নেই চুলো নেই
১১. জানি আর কোন দিনও আমার হবে না
১২. সুখে থাকা হলো না আমার
১৩. লাল বেনারসি
১৪. আজকে তোমার গায়ে হলুদ
১৫. ও প্রিয়জন বড় আয়োজন করে
১৬. মা তুমি আমার আগে যেও না গো মরে
১৭. আমি যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি মা
১৮. সবুজের বুকে লাল উড়বেই চিরকাল
১৯. চাঁদেরও ঈর্ষা হবে তোমায় দেখে
২০. চিন্তার চেয়ে চিতার আগুন ভালো
বর্তমানে তিনি গান লেখা ও সুরসৃষ্টির পাশাপাশি সঙ্গীত পরিচালনার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্প্রতি একটি সিনেমা বানানোর কাজে হাত দিয়েছেন। সিনেমার জন্য গল্প ও চিত্রনাট্য তৈরির প্রাথমিক কাজগুলো চলছে এখন। মিল্টন খন্দকার গানের মতো সিনেমার জগতও মাতাবেন- এমন প্রত্যাশা সকলের। আমরা তার দীর্ঘায়ু কামনা করি।