– মোশারফ হোসেন মুন্না।
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য। বাঙ্গালি মনীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন নজরুল। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি।
পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই “বিদ্রোহী কবি”, তাঁর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।
কিন্তু দুঃখ্যজনক হলেও সত্যি যে এমন একজন মহান কবিকে নিয়ে আমরা আছি নানা সংশয়ে। বাংলাদেশের কবি, যিনি বাংলার গর্ব ও অহংকার তার জন্ম ও মৃত্যু নিয়ে আমরা প্রতিবছর থাকি সংশয়ে। কিন্তু কেন ? এর কি কোন সমাধান নেই ? আমরা কি পারি না কবির জন্ম মৃত্যু নিয়ে সংশয়টা দুর করতে। এটা কি আমাদের দেশের জন্য দূর্ভাগ্য নয় ? কবি নজরুলকে নিয়ে কথা হয় নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সুজিত মোস্তফার সাথে।
সঙ্গীতাঙ্গনঃ কেমন আছেন ভাইয়া?
সুজিত মোস্তফাঃ এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
সঙ্গীতাঙ্গনঃ কবি নজরুলকে নিয়ে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে কি করবেন ভাবছেন?
সুজিত মোস্তফাঃ আসলে কি বলবো! এখনো আমায় কোন টেলিভিশন কিংবা রেডিওতে ডাকেনি। হয়তো আমার ব্যার্থতা, নয়তো তাদের ব্যার্থতা যারা এটা নিয়ে কাজ করেন। কেন ? ডাকেনি তারাই ভালো বলতে পারে। তবে আমরা নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ ৮ সেপ্টেম্বর ছায়ানটে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। সেখানে তাকে স্মরণ করে গান করবো। তবে সারা বছরই আমরা নজরুল নিয়ে প্রোগ্রাম করে থাকি। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গলবার আমরা অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। আমরা নতুন ছেলেমেয়েদের প্রোমট করি। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে যারা আছেন, তাদেরকে বেশি উৎসাহ দিয়ে থাকি। ঢাকার ভেতরে যারা আছেন তাদেরতো সুযোগ আছেই। বিভিন্ন ভাবে তাদের শিক্ষা দিতে চেষ্ঠা করছি। নজরুল পরিষদ থেকেও আবার আমার এক্সট্রা ক্যাপাসিটি থেকেও। আমরা ছাড়াও দেশে আরো অনেক সংঘটন আছেন তারাও কবি নজরুল নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন, করবেন। কবি নজরুলের জন্মদিনে মৃত্যুবার্ষিকীতে সব সময়ই অনুষ্ঠান হয়।
সঙ্গীতাঙ্গনঃ এবার আপনার কাছে জানার ইচ্ছা, আপনারা কোন দিন কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেন ?
সুজিত মোস্তফাঃ এই প্রশ্নের জবাবটা আসলেই লজ্জাজনক। বাংলাদেশে একেক দিন একক জন পালন করেন। এর সঠিক ভিত এখনো চুড়ান্ত হইনি। উনার মৃত্যুবার্ষিকী বাংলামতে ধরা হয় ১২ই ভাদ্র। তবে পরবর্তী সময়ে বাংলা পুঞ্জিকা পরিবর্তন হয়। ভারতের বাংলা পুঞ্জিকা আর বাংলাদেশের বাংলা পুঞ্জিকা এক নয়। যেহেতু ইংরেজি মাস গণনা সারা বিশ্বে সমাদৃত সেহেতু আমাদের প্রয়োজন ছিল ইংরেজী মাস গণনা করা। তাহলে এই সমস্যাটা থাকতো না। তবে এই সমধান আমাদের হাতে নেই। যেহেতু সরকারী ভাবে নজরুল ইন্সটিটিউট আছে এর সমধান তাদের দ্বারাই সম্ভব।
সঙ্গীতাঙ্গনঃ দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে আমাদের দেশ কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে আসছে। এখনো মৃত্যুর তারিখটি শূন্যে ভাসছে, কেন এই সংশয় ?
সুজিত মস্তফাঃ আমি বলবো এর প্রধান কারণ হলো অনৈক্য। নজরুল সঙ্গীত শিল্পীদের মাঝে কোন একতা না থাকার কারণেই এমনটা হয়েছে। আমি অনেক চেয়েছিলাম সবাইকে একসাথে করতে, অনেকেই চায় না তাই এখনো এই সমস্যাটা রয়ে গেছে। সবাই একতা হয়ে সরকারের কাছে আবেদন করলে হয়তো এই সমস্যা সমাধান করা যেতো। তবে আমি একজন নজরুল সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে বলবো ২৯শে আগষ্টই তার মৃত্যুবার্ষিকী।
সঙ্গীতাঙ্গনঃ আপনার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন ?
সুজিত মোস্তফাঃ এই তো গান করছি। নিয়মিতই প্রোগ্রাম হচ্ছে। গান ছাড়া আমি কিছু বুজিনা। সব সময়ই গানের সাথে থাকি। গান ভালোবেসেই জীবনের সাথে জড়িয়ে নিয়েছি নিজেকে।
সঙ্গীতাঙ্গনঃ ভালো থাকবেন ভাইয়া, সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ।
সুজিত মোস্তফাঃ সঙ্গীতাঙ্গনকেও ধন্যবাদ।
সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে কবি নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাই।