– মোশারফ হোসেন মুন্না।
সত্তরের দশক থেকে গানের জগতের সাথে যুক্ত রয়েছেন কাদেরী কিবরিয়া। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন তিনি। আধুনিক ও দেশাত্মবোধক গান গাইলেও তাঁর পরিচিতি মূলত রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়েই। বাবার কাছ থেকে গান শুনে শুনেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয় তাঁর।
নব্বই এর দশকে জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে চলে যান কাদেরী কিবরিয়া। প্রবাসী হলেও বাংলাদেশে তাঁর আসা হয় প্রায়শই। ২০১৩ সালের জন্য একুশে পদক পাবার পর আরও বেশি এদেশে থাকা হবে বলে আশা করছেন তিনি। কাদেরী কিবরিয়া বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত কণ্ঠ সঙ্গীত শিল্পী। কৃতিমান এ শিল্পী জন্মগ্রহন করেন পাবনার ফরিদপুর উপজেলায়। রবীন্দ্র সঙ্গীতের এই শিল্পী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সক্রিয়ভাবে দেশাত্ববোধক গানের শিল্পী হিসেবে গান করেছেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে কাদেরী কিবরিয়া রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রচন্ড জনপ্রিয় ছিলেন। বাংলাদেশী ও পশ্চিমবঙ্গে রবীন্দ্র সঙ্গীতপ্রেমী মানুষের কাছে অতি পরিচিত নাম – কাদেরী কিবরিয়া। মুক্তিযুদ্ধকালীণ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সুর ও ধ্বনীর আবহে যারা প্রাণচাঞ্চল্যপূর্ণ অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন, তাদেরও একজন তিনি। অন্যরা হচ্ছেন – আপেল মাহমুদ, আবদুল জব্বার ও সমর দাশ। এই চতুষ্ঠয়ের অনুরোধেই এই কেন্দ্রে যোগ দিয়েছেন সে সময় রবীন্দ্র সঙ্গীত পূজারী অজিত রায়। কাদের কিবরিয়া শিক্ষা গুরু রবীন্দ্র সঙ্গীতের দিকপাল শ্রী দেবব্রত বিশ্বাস ও চিন্ময় চট্রোপাধ্যায়।
পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বানিজ্য বিভাগে মাষ্টার্স অর্জনসহ সঙ্গীতে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী থেকে মাষ্টার্স লাভ। সম্ভবতঃ সে কারনে তার গায়কী কন্ঠ ও উপস্থাপনা অপরাপর শিল্পীর তুলনায় ভিন্ন ঢং ও মেজাজের।
এছাড়া সঙ্গীত ও পেশার ক্ষেত্রে তিনি সব সময়েই তার চিরায়ত ভারসাম্যটি রক্ষা করে চলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে একাউন্টিংয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনসহ রবীন্দ্র সঙ্গীতের ওপর বের করেছেন নিজের সিডি এ্যালবাম – ‘দিনের শেষে’ ও ‘হে নিরুপমা’। একই সাথে বের করেছেন আধুনিক বাংলা গানের সিডি – ‘মধুর আমার মায়ের হাসি’। নিঃসন্দেহে এ প্রেরণাগুলো তার চির সজীব একাগ্রতারই বহিঃপ্রকাশ। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত প্রায় ২,২৩০ টি রবীন্দ্র সঙ্গীত বাংলা সংস্কৃতির এক অমূল্য ভান্ডার। ভিন্ন মর্মার্থের এ গানগুলো বৈশিষ্ট্যের বিবেচনায় ইংরেজী সাহিত্য সম্রাট সেক্সপিয়ারকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটির প্রধান কারন হচ্ছে – রবীন্দ্র সঙ্গীত বাঙালী সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রায় ৫০০ বছরের সময়কালকে একটি মূল্যবান সূত্রবন্ধনে আবদ্ধ করেছে।
সঙ্গীত চর্চায় রবীন্দ্র সঙ্গীত এক স্বাতন্ত্র্যসূচক অবস্থানেরই পরিচাযক। আর এ সঙ্গীত চর্চায় নিবেদিত শিল্পীরা সনাতনী ধারারই অনুকূলে আছেন, এমন ধারনাটির পক্ষে-বিপক্ষে কিছুটা যুক্তি-তর্ক আছে বটে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে। তথাপি বেথহোভেনের সুর-মূর্চ্ছণা কিংবা ওস্তাদ বেলায়েত খানের সেতার বাদনের মতো রবীন্দ্র সঙ্গীত শিক্ষিত, বুদ্ধিদীপ্ত ও সংস্কৃতিপ্রবন শ্রোতাকেই কাছে টেনে নেয়। পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় কবি রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং তার রচিত অধিকাংশ গানের সুর করেছেন – কখনো পাশ্চাত্যের ক্ল্যাসিকাল অথবা স্বদেশী ঐতিহ্যের অনুকরণে। চলচ্চিত্রের যে নিজস্ব একটি ভাষা হতে পারে, সে ধারনাটিরও প্রবক্তা রবীন্দ্রনাথ। সে কারনে ব্রিটিশ, ইউরোপিয়ান ও অষ্ট্রেলিয়ান চলচ্চিত্রের পাশাপশি সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, নিতিন বোস, তপন সিনহা ও কুমার সাহানি-র চলচ্চিত্রে সে ধারাটি সৌন্দর্য ও ‘সিনেমেটিক মুড’-কে ধারন করেছেন। গুণী শিল্পী কাদের কিবরিয়ার
আজ শুভ জন্মদিন। সঙ্গীতাঙ্গন তার জন্মদিনে জানাই লাল গোলাপের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। শুভ হোক জীবনের প্রতিটি দিন। আনন্দে ভরে থাকুক প্রতিটি ক্ষণ।