প্রিয় পাঠক,
অভিনন্দন এবং ভালোবাসা নিবেদন করছি আপনাদের প্রতি। সঙ্গীতাঙ্গন এর উদ্দেশ্য সবসময়ই দেশের সকল সুরকার, গীতিকার, শিল্পী এবং সব ধরনের মিউজিসিয়ানদের পাশে থেকে আমাদের দেশীয় সঙ্গীতকে অনেক দুর এগিয়ে দুর নিয়ে যেতে। আমরা চাই সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে যেকোনো গানের আসল স্রষ্টা সম্পর্কে জানুক। এ জন্য আমরা সব সময় আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি।
কারণ দেশের একাধিক চ্যানেলে এ প্রজন্মের শিল্পীরা গানটির স্রষ্টাদের নাম না বলতে পেরে সংগ্রহ বলে থাকেন। এতে গানের মূল স্রষ্টা ব্যথিত হোন, এমন অনেক অভিযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই একটি গানের মূল স্রষ্টাকে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে আমরা বহুদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি, শুধুমাত্র সঙ্গীতকে ভালোবেসে। এবারের বিষয় ‘একটি গানের পিছনের গল্প’ আমাদের অনেক প্রিয় একজন সঙ্গীতপ্রেমী ভাই জনাব মীর শাহ্নেওয়াজ সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে জানাবেন আমাদের প্রিয় গানের পিছনের গল্প। এবং দেশের বরেণ্য সকল শ্রদ্ধাভাজন শিল্পীগন আপনারাও নিজ দায়িত্বে সঙ্গীতাঙ্গনের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনার নিজ সৃষ্টি অথবা আপনার প্রিয় গানের গল্প। এতে আর এ প্রজন্মের শিল্পীরা ভুল করবেন না গানের স্রষ্টাকে চিনতে।
আসুন সবাই গানের সঠিক ইতিহাস জানতে একতা গড়ি। – সম্পাদক
– তথ্য সংগ্রহে মীর শাহ্নেওয়াজ…
শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় -এর শুভ জন্মদিনে তাঁরই গাওয়া জনপ্রিয় গানটির পিছনের না জানা অনেক কথা লিখে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি…
“আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি”
শিল্পীঃ মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়
সুরকারঃ মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়
গীতিকারঃ শ্যামল গুপ্ত
শ্যামল গুপ্তরই লেখা ‘আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি’। মানবেন্দ্র বলতেন, ও “আমার ভূতে পাওয়া গান।”
তখন রেডিওতে লাইভ ব্রডকাস্টের যুগ। ১ নম্বর গার্স্টিন প্লেস থেকে ইডেনে আসেনি আকাশবাণী। এক অনুষ্ঠান শেষে পরের অনুষ্ঠানের মাঝে অনেকটা ফাঁকা সময় থাকলে অফিসেই কাটিয়ে দিতেন অনেকেই। তেমনই এক দিনে ছাদে পায়চারি করতে করতে গুনগুন করে গান গাইছিলেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। নিঝুম সন্ধেবেলা। ঠিক নীচে কবরখানার দিকটা জমাট কালো। ও-বাড়ির সাহেব-ভূতের গল্প বহুশ্রুত। তাতে ভ্রুক্ষেপ ছিল না তাঁর।
হঠাৎ কেউ যেন ডেকে উঠল, “মানব, মানব।” চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখেন দুটো চোখ। জ্বলছে।
“কে?”
“আমি শ্যামল। একটা গান লিখে ফেলেছি। শুনবি?”
একটু ধাতস্থ হয়ে বললেন, “বল।”
অন্ধকারে দাঁড়িয়েই শুনতে লাগলেন গানের কলি— “…তোমার কাজল চোখে যে গভীর ছায়া কেঁপে ওঠে ওই/তোমার অধরে ওগো যে হাসির মধু মায়া ফোটে ওই/তারা এই অভিমান বোঝে না আমার…।”
সারা শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। শেষ হতেই এক হাতে বন্ধুকে পাকড়ে ধরে সোজা পাঁচ নম্বর স্টুডিও। ওখানে একটা গ্র্যান্ড পিয়ানো রাখা। সন্ধ্যে পাঁচটার পর সে-ঘরের দরজা তালাবন্ধ থাকে। পিয়ানোর ডালায় চাবি দেওয়া। কিন্তু সে দিন যে কী হল! দরজার ‘ল্যাচ’ ঘোরাতেই খুলে গেল! ডালায় হাত দিয়ে ওঠাতে উঠে গেল! তাতে বসেই গানের মুখড়াটা করে ফেলেছিলেন মানবেন্দ্র। পুরো ব্যাপারটা নিয়ে বিস্ময়ের ঘোর জীবনের শেষ দিন অবধি তাঁর কাটেনি। কেবলই বলতেন, “ও আমার ভূতে পাওয়া গান।”