প্রিয় পাঠক,
অভিনন্দন এবং ভালোবাসা নিবেদন করছি আপনাদের প্রতি। সঙ্গীতাঙ্গন এর উদ্দেশ্য সবসময়ই দেশের সকল সুরকার, গীতিকার, শিল্পী এবং সব ধরনের মিউজিসিয়ানদের পাশে থেকে আমাদের দেশীয় সঙ্গীতকে অনেক দুর এগিয়ে দুর নিয়ে যেতে। আমরা চাই সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে যেকোনো গানের আসল স্রষ্টা সম্পর্কে জানুক। এ জন্য আমরা সব সময় আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি।
কারণ দেশের একাধিক চ্যানেলে এ প্রজন্মের শিল্পীরা গানটির স্রষ্টাদের নাম না বলতে পেরে সংগ্রহ বলে থাকেন। এতে গানের মূল স্রষ্টা ব্যথিত হোন, এমন অনেক অভিযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই একটি গানের মূল স্রষ্টাকে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে আমরা বহুদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি, শুধুমাত্র সঙ্গীতকে ভালোবেসে। এবারের বিষয় ‘একটি গানের পিছনের গল্প’ আমাদের অনেক প্রিয় একজন সঙ্গীতপ্রেমী ভাই জনাব মীর শাহ্নেওয়াজ সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে জানাবেন আমাদের প্রিয় গানের পিছনের গল্প। এবং দেশের বরেণ্য সকল শ্রদ্ধাভাজন শিল্পীগন আপনারাও নিজ দায়িত্বে সঙ্গীতাঙ্গনের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনার নিজ সৃষ্টি অথবা আপনার প্রিয় গানের গল্প। এতে আর এ প্রজন্মের শিল্পীরা ভুল করবেন না গানের স্রষ্টাকে চিনতে।
আসুন সবাই গানের সঠিক ইতিহাস জানতে একতা গড়ি। – সম্পাদক
– মীর শাহ্নেওয়াজ…
নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ও বংশীবাদক বারী সিদ্দিকী রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মৃত্যুবরণ করেন।
বারী সিদ্দিকী গত দুই বছর ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর দুটি কিডনিই অকার্যকর ছিল। তিনি বহুমূত্র রোগেও ভুগছিলেন। গত ১৭ নভেম্বর রাতে তিনি হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, তখন তিনি অচেতন ছিলেন। তাঁকে দ্রুত নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আই. সি. ইউ.) ভর্তি করা হয়। সাত দিন আই. সি. ইউ.’তে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হলেও তার অবস্থার অবনতি ঠেকানো যায়নি।
১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিনে’ চলচ্চিত্রের জন্য তাঁর গাওয়া ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’ গানের পিছনের গল্প।
শিল্পীঃ বারী সিদ্দিকী
সুরকারঃ উকিল মুন্সী
গীতিকারঃ উকিল মুন্সী
চলচ্চিত্রঃ শ্রাবন মেঘের দিন
“নব্বইয়ের দশকের কোনো এক সময়। আমি তখন ঢাকার বিভিন্ন স্টুডিওতে বাঁশি বাজিয়ে বেড়াই। এ রকমই একটা সময়, খুব সম্ভবত ‘৯৩ সাল সেটা, হুমায়ূন স্যার লোক মারফত আমাকে তাঁর বাসায় আসতে বললেন। তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজাতে হবে। জন্মদিনের দিন তাঁর বাসায় গিয়ে দেখি এলাহি কাণ্ড। ঘরভর্তি লোকজন। নাটক ও চলচ্চিত্র জগতের বাঘা বাঘা লোকজন আছেন। আসাদুজ্জামান নূরসহ অনেক খ্যাতিমানের পাশাপাশি আছেন নেত্রকোনার একদল বাউল। সেই অনুষ্ঠানে আমি বাঁশি তো বাজালাম, কয়েকটি গানও গেয়ে শোনালাম। ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’…, ‘পুবালি বাতাসে’ -ইত্যাদি।
মজার বিষয় হচ্ছে, বাঁশির চেয়ে আমার গানই বেশি পছন্দ করলেন স্যার। গান শুনে মুগ্ধ হন হুমায়ূন আহমেদ স্যার। বললেন, ‘গানগুলো কার?’ বললাম রশিদ উদ্দিন বাউল আর উকিল মুন্সির। স্যার বললেন, ‘এই গানগুলো রেকর্ড করাতে চাই আমি।’ তারপর আচমকা একদিন স্যার আমাকে ডন স্টুডিওতে ডাকলেন। সেখানে গান রেকর্ড করা হলো। ছুটলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্মের কাছে। কর্ণধার ফরিদুর রেজা সাগর হুমায়ূন আহমেদের সব ইচ্ছেই পূরণ করতে চেষ্টা করেছেন। নাটক হয়েছে, সিনেমা হয়েছে। এবার ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান বানাবেন। ১৯৯৫ সালে বিটিভির জন্য ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে বানালেন ‘রঙের বাড়ই’। এই ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানেই ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’ গানটি ব্যবহার করলেন তিনি। এরও অনেক পরে ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিনে’ চলচ্চিত্রের জন্য ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’ সহ ছয়টি গান গাই আমি। এই ছবিতে গাওয়া ছয়টি গানই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এর মধ্যে দরদী কণ্ঠের আবেগমাখা গান ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়;, ‘শুয়াচান পাখি’, গান সবাইকে দারুনভাবে আকৃষ্ট করে ও জনপ্রিয় হয়।” -বারী সিদ্দিকী
বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর ভাটি অঞ্চলের নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মূলত গ্রামীণ লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক ধারার গানের শিল্পী ছিলেন। তবে একাধারে তিনি খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও বংশীবাদক। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সংগীত পরিচালক ও মুখ্য বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১৯৮০ সালের দিকে ঢাকায় শুদ্ধ সঙ্গীত প্রসারের একটি অনুষ্ঠানে বারী সিদ্দিকীর পরিচয় হয় ওস্তাদ আমিনুর রহমানের সাথে। তিনি বিমানের পাইলট ছিলেন। ওস্তাদ আমিনুর রহমান ভারতবর্ষের বিখ্যাত বংশীবাদক ওস্তাদ পান্নালাল ঘোষের শিষ্য ছিলেন। সেই আমিনুর রহমানের বাড়িতে থেকেই বাঁশিতে তালিম নিতে থাকেন দিনের পর দিন। সেখানে থেকেই ওস্তাদ তাগাল ব্রাদার্স, পণ্ডিত দেবেন্দ্র মুৎসুদ্দী, ওস্তাদ আয়েফ আলী খান মিনকারীর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন বারী সিদ্দিকী।
তিনি নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে লোকগানের সঙ্গে ধ্রুপদী সংগীতের মিশেলে গান শুরু করেন।
https://www.youtube.com/watch?v=gMUe30c0TSg