প্রিয় পাঠক,
অভিনন্দন এবং ভালোবাসা নিবেদন করছি আপনাদের প্রতি। সঙ্গীতাঙ্গন এর উদ্দেশ্য সবসময়ই দেশের সকল সুরকার, গীতিকার, শিল্পী এবং সব ধরনের মিউজিসিয়ানদের পাশে থেকে আমাদের দেশীয় সঙ্গীতকে অনেক দুর এগিয়ে দুর নিয়ে যেতে। আমরা চাই সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে যেকোনো গানের আসল স্রষ্টা সম্পর্কে জানুক। এ জন্য আমরা সব সময় আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি।
কারণ দেশের একাধিক চ্যানেলে এ প্রজন্মের শিল্পীরা গানটির স্রষ্টাদের নাম না বলতে পেরে সংগ্রহ বলে থাকেন। এতে গানের মূল স্রষ্টা ব্যথিত হোন, এমন অনেক অভিযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই একটি গানের মূল স্রষ্টাকে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে আমরা বহুদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি, শুধুমাত্র সঙ্গীতকে ভালোবেসে। এবারের বিষয় ‘একটি গানের পিছনের গল্প’ আমাদের অনেক প্রিয় একজন সঙ্গীতপ্রেমী ভাই জনাব মীর শাহ্নেওয়াজ সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে জানাবেন আমাদের প্রিয় গানের পিছনের গল্প। এবং দেশের বরেণ্য সকল শ্রদ্ধাভাজন শিল্পীগন আপনারাও নিজ দায়িত্বে সঙ্গীতাঙ্গনের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনার নিজ সৃষ্টি অথবা আপনার প্রিয় গানের গল্প। এতে আর এ প্রজন্মের শিল্পীরা ভুল করবেন না গানের স্রষ্টাকে চিনতে।
আসুন সবাই গানের সঠিক ইতিহাস জানতে একতা গড়ি। – সম্পাদক
– তথ্য সংগ্রহে – মীর শাহ্নেওয়াজ…
“বিমূর্ত এই রাত্রি আমার”
শিল্পীঃ আবিদা সুলতানা
সুরকারঃ ভূপেন হাজারিকা
গীতিকারঃ ভূপেন হাজারিকা
ছবিঃ সীমানা পেরিয়ে ১৯৭৫
শিল্পী আবিদা সুলতানা বলছেন গানের পিছনের গল্প।
“স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় থেকে ভূপেন হাজারিকার গান শুনছি। তখন থেকেই তাঁর প্রচুর গান শোনা হতো। ১৯৭৫ সালের কথা। তখন আমি ইন্টারমিডিয়েটে পড়াশোনা করছি। আলমগীর কবির তখন ‘সীমানা পেরিয়ে’ ছবিটির নির্মাণকাজ নিয়ে ব্যস্ত। একদিন জানতে পারি, ছবিটির ‘বিমূর্ত এই রাত্রি আমার’ গানে কণ্ঠ দিতে তিনি আমাকে নির্বাচন করেছেন। তারপর উনি আমাদের বাসায় আসেন এবং আমার বাবাকে রাজি করান। তাও আবার ভূপেন হাজারিকার সুরে! এটা যে আমার জন্য কী আনন্দের ছিল, তা বলে বোঝাতে পারব না। আনন্দের পাশাপাশি প্রচণ্ড ভয়ও কাজ করছিল।
এরই মধ্যে ১৯৭৫ সালের একটা সময়ে বড় বোন রেবেকা সুলতানা, দুলাভাই মোহাম্মদ শফিউল্লাহ, আলমগীর কবিরসহ কলকাতায় গেলাম। উঠলাম লিটন হোটেলে। সেখানে গিয়ে দেখা হয় জয়শ্রী কবিরের সঙ্গে। বিশ্রাম শেষে হোটেলে প্রথম দেখি ভূপেনদাকে। বিষয়টা তখনো অবিশ্বাস্যই মনে হচ্ছিল। আমাদের গানের রেকর্ডিং ছিল কলকাতার টেকনিশিয়ানস স্টুডিওতে। গানটি গাইতে গেলাম স্টুডিওতে। এর সুরকার ভূপেন হাজারিকা কিশোরী বয়সী আমাকে দেখে খানিকটা অবাক হয়েছিলেন। ভূপেনদার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর কুশল বিনিময় করে তিনি আলমগীর কবিরের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, আমি ঠিকভাবে গাইতে পারব কি না। ভূপেনদা প্রথম দিন আমাকে বলেছিলেন, আজ আর তোমাকে গান শিখাবো না। এই গানটা নিয়ে যাও। এটি পড় আর বোঝার চেষ্টা করো।
গানটি অনেক বড় ছিলো। অবশ্য এটি একটি কবিতা ছিলো। শিবদাস ব্যানার্জির লেখা অসমিয়া এই কবিতাটি বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছিলো। তো গানটি নিয়ে সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত আমি তা পড়ার পর কিছুই বুঝিনি। আগে গানটার মানে বোঝার জন্য ভূপেনদা আমাকে উপদেশ দিয়েছিলেন। সত্যি বলতে, আমি তখন গানটার অর্থ না বুঝেই বলেছিলাম, গাইতে পারব। এরপর আমি সেদিন হোটেলে বসে গানটি শিখি এবং অর্থ বোঝার চেষ্টা করি।
পরদিন স্টুডিওতে প্রথমে দুবার মহড়া করলাম, একবার মাইক্রোফোনে প্র্যাকটিস করলাম। এরপর অবশ্য দুবারেই গানটার ঠিকভাবে রেকর্ডিং সম্পন্ন হয়। ওই সময়ে না বুঝেই গানটা করেছি। তখন অবশ্য আমাকে তেমন গানও শেখানো হয়নি। ওই যে কথায় বলে না যে, ফোঁড়া কাটা ডাক্তার। গিয়ে অপারেশন করে চলে আসলো। আমিও সেসময় গেলাম আর গান গেয়ে চলে আসলাম। কোনো ভয় লাগেনি। গানটি শোনার পর ভূপেনদা বেশ প্রশংসা করেছিলেন। এবং আমার গলায় একটি ফুলের মালা পরিয়ে দিয়েছিলেন। এটিই ছিল ভূপেনদার সঙ্গে আমার শেষ কথা।” – আবিদা সুলতানা।
https://www.youtube.com/watch?v=7LXMCUmCcSw