শ্রদ্ধেয় লালনফকির (বাউল লালন সাঁইজী) এমন কিছু গান লিখে গেছেন যা মানুষের ভিতরের মানুষটাকে জাগ্রত করে। সাঁইজীর লেখা জীবন দার্শনিক গান শুধু বাংলদেশের মানুষের জন্য নয়, সকল ভাষাভাষী, সকল দেশের মানুষের জানা প্রয়োজন লালন সাঁই কি লিখে গেছেন।
লালনের গানের আধ্যাত্মিকতা নিয়ে অনেক বড় বড় সাধক ভেবেছেন এখনো ভাবছেন।
কি লিখে গেছেন সাঁইজী ?
এই কি শুধুই গান, নাকি গানের ভিতর অন্য কিছু ?
লালনের গান ও দর্শনের দ্বারা অনেক বিশ্বখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক প্রভাবিত হয়েছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ লালনের মৃত্যুর ২ বছর পর তার আখড়া বাড়িতে যান এবং লালনের দর্শনে প্রভাবিত হয়ে ১৫০টি গান রচনা করেন। তার বিভিন্ন বক্তৃতা ও রচনায় তিনি লালনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। লালনের মানবতাবাদী দর্শনে প্রভাবিত হয়েছেন সাম্যবাদী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আমেরিকান কবি এলেন গিন্সবার্গ লালনের দর্শনে প্রভাবিত হন এবং তার রচনাবলীতেও লালনের রচনাশৈলীর অনুকরণ দেখা যায়। তিনি ‘After Lalon’ নামে একটি কবিতাও রচনা করেন।
লালনের সঙ্গীত ও ধর্ম-দর্শন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা গবেষণা হয়েছে ও হচ্ছে। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন মানুষ ছিলেন ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামে পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক, দার্শনিক, অসংখ্য অসাধারণ গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। লালনকে বাউল গানের একজন অগ্রদূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সমগ্র বিশ্বে, বিশেষ করে বাংলাদেশসহ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে লালনের গান বেশ জনপ্রিয়। আত্মতত্ত্ব, দেহতত্ত্ব, গুরু বা মুর্শিদতত্ত্ব, প্রেম-ভক্তিতত্ত্ব, সাধনতত্ত্ব, মানুষ-পরমতত্ত্ব, আল্লা-নবীতত্ত্ব, কৃষ্ণ-গৌরতত্ত্ব এবং আরও বিভিন্ন বিষয়ে লালনের গান রয়েছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে লালন সঙ্গীতের কথা উঠলেই যার নাম সবার আগে আসে তিনি হলেন ফরিদা পারভীন। নজরুলসঙ্গীত ও আধুনিক গান দিয়ে তাঁর সঙ্গীতের যাত্রা শুরু হলেও ফরিদা পারভীন ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন ফকির লালন শাহের গান গেয়ে। লালনের গানের কথা ও সুর দিয়ে গত কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষী মানুষের মন ছুঁয়েছেন ফরিদা পারভীন।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই লালন সঙ্গীত এবং ফরিদা পারভীন পরস্পর পরিপূরক এবং অবিচ্ছিন্ন দু’টি নাম। লালন সাঁইজির গানের প্রসঙ্গ এলেই বাঙ্গালীর মনে-কানে প্রথমেই যাঁর সুর বেজে ওঠে, তিনি ফরিদা পারভীন। লালন সঙ্গীতে অতুলনীয় এবং অদ্বিতীয় ফরিদা পারভিন।
এবার হিন্দি ভাষায় লালনগীতি পরিবেশন করলেন ফরিদা পারভিন। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিসহ এত সুধীজনের সামনে তিনি হিন্দিতে লালন এর গান গেয়েছেন, লালনের বানী তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এ আমাদের জন্য সত্যি বিস্ময়কর কিছু।
মুচকুন্দ দুবের অনুবাদে এ কঠিন কাজটি অনেক পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করেছেন ফরিদা পারভিন।
হিন্দিতে আরো অনেক লালনগীতি গাইবেন ফরিদা পারভিন।
লালনগীতি বাংলার ঐতিহ্য।
এই লালনগীতি শুধু হিন্দিতে নয় পৃথিবীর সকল ভাষায় সকল মানুষের কাছে পৌঁছে যাক এই কামনা করি আমরা। সবাই মুগ্ধ হোক বাংলা গানের সুরে।
শ্রদ্ধেয়া ফরিদা পারভিন এর জন্য শুভকামনা।