আমাদের বাংলা গানের ইতিহাস -ঐতিহ্য শত বছরের। বাংলা গান আমাদের মাটির গান, আত্মার গান, শেকড়ের গান, এ আমাদের লোকসঙ্গীত। তখন বাংলা গানের কোন রেকর্ডিং বা ইন্ডাস্ট্রি ছিল না। গান পাগল মানুষগুলো একতারা-দোতারা হাতে নিয়ে গ্রামে গঞ্জে ঘুরে ঘুরে গান করতো। সেই প্রাচীন সভ্যতা থেকেই গানের জন্ম। মানুষ সুরপ্রিয় জম্মলগ্ন থেকেই। তাই সুরে সুরে মা তার শিশুকে ঘুম পাড়ায়। এই সুর সাধনায় মগ্ন হয়েই মানুষ সঙ্গীতকে আবিষ্কার করেন।
বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে বহু ধরনের গান। বাংলাদেশের মানুষ সবসময় নিজের গানের স্বীকৃতির স্বপ্ন দেখতেন। নিজের বাংলা ভাষায় যে গানটির পরিচয় হবে বাংলাদেশের গান। তাই ১৯৭১ সালে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গান পাগল মানুষ গুলোও যুদ্ধে নামে। স্বপ্ন একটাই দেশ স্বাধীন হবে আমরা স্বাধীন ভাবে বাংলা গান করবো, যে গানের পরিচয় হবে বাংলার মানুষের গান, বাংলাদেশের গান। যুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত অসংখ্য দেশাত্মবোধক গানের জন্ম হয়েছে যে গান ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা, যে গান এখন আমাদের প্রেরণা।
১৯৭১ সালের পরপর স্বাধীন দেশে বাংলাদেশের যুবক গুলো সঙ্গীতের স্বপ্ন নিয়ে নিজস্ব বাংলা ভাষায় আধুনিক গান সৃষ্টি করার সাধনা করতে থাকেন। এরই মাঝে বিদেশী গান গুলো বাংলাদেশি মানুষের মস্তিষ্কক্ষরণ করতে থাকে, বিশেষ করে হিন্দি গান।
বাংলাদেশের সঙ্গীতের স্বর্ণালী সময় বলতে আশির দশক এবং নব্বই দশক। বিদেশী গানকে বাংলাদেশের সঙ্গীতের মাধ্যমে যে কজন সঙ্গীতযোদ্ধা লড়াই করে বিদেশী গানের বুকে পেরেক মেরে তাড়িয়ে বাংলা গানের পতাকা উড়িয়েছেন তাদেরই একজন সাহসী তরুণ সহযোদ্ধা ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ ইথুন বাবু। দেশের মানুষ যখন বিদেশী গানে, বিদেশী ভাষার গানে মগ্ন তখন ইথুন বাবু ভাবেন এত কষ্টের এত ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাভাষা পেয়েছি অথচ মানুষ বিদেশী গানের পাগল তখন তিনি মানুষের পছন্দের বিদেশী ভাষার গান গুলোকে বাংলা ভাষায় রূপান্তরিত করেন। এবং শ্রোতারাও তা গ্রহণ করেন। শ্রোতাদের বাংলা ভাষায় ফিরিয়ে আনার জন্য এই পরিশ্রম করতে থাকেন ইথুন বাবু।
কিন্তু ইথুন বাবুর স্বপ্ন আশা ছিলো ভিন্ন, তিনি চেয়েছিলেন তার নিজস্ব মৌলিক গানের মাধ্যমে দেশের মানুষকে বাংলা গানে মুগ্ধ করা; ইথুন বাবু তাই বারবার প্রমাণ করেছেন এবং উপহার দিয়েছেন একাধিক জনপ্রিয় শিল্পী সহ জনপ্রিয় গান।
নব্বই দশক এর পর যখন অডিও ইন্ডাস্ট্রিগুলো ভেঙ্গে যাওয়ার অবস্থা আবারো বিদেশী গান বন্যার পানির মতো দেশে ভাসছে তখন দেশের ভেঙ্গে যাওয়া অডিও ইন্ডাস্ট্রিকে আলোর পথ দেখিয়েছিলেন ইথুন বাবু ‘আসিফ আকবর’ এর ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, আতিক হাসানের ‘মাধবী কি ছিলো ভুল’, সুমন এর ‘১টি চাঁদর হবে’, মমতাজ এর ‘রিটার্ন টিকেট’, এর মতো সর্বাধিক এ্যালবাম বিক্রয় এর মাধ্যমে। পরবর্তীতে এই এ্যালবামগুলো অডিও ব্যবসায় সবচেয়ে বাণিজ্যিক সফলতার ইতিহাস।
নব্বই দশকে নিজেকে গায়ক হিসেবেই প্রকাশ করেন ইথুন বাবু ‘মনে রেখো, ঘুম আসেনা’ এ্যালবাম এর মাধ্যমে। এই এ্যালবাম ছাড়াও তার নিজের গাওয়া অনেক গান রয়েছে ।
ইথুন বাবু ১৯৬৩ সালে ১৬ই নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্ররহ করেন।
ওস্তাদ মোজাম্মেল হোসেন এর কাছে হাতেখড়ি, তারপর ওস্তাদ রবিউল হোসেন, ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চু কাছে গান শেখেন তিনি। আশির দশকের শেষের দিক থেকে ঢাকায় এসে সঙ্গীত নিয়ে কাজ শুরু করেন।
এখন সেই আগের মতো অডিও এ্যালবাম এর যুগ নেই। এখন সঙ্গীত সৃষ্টি এবং প্রকাশ সবই এখন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে।
ইথুন বাবু গানের মানুষ, গান নিয়েই আছেন। এই ঈদে চমক নিয়ে আসছেন ইথুন বাবু। তিনি সঙ্গীতাঙ্গনকে জানান, অনেকদিন পর একটা মনের মতো গান করলাম, আমারও শ্রোতাদের মনের খোরাক হিসাবে আসছে আতিক হাসানের গান।
আতিক হাসানের জন্য আমি সব সময় একটু আলাদা ধাচের গান করি যা দর্শক শ্রোতা লুফে নেয়।
‘ছোট কিছু ভুল
ভেঙ্গে দেয় কুল,
ভালবাসা কি শুধু
ধ্বংসের মুল।’
এটা আতিক হাসান এর সলো গান।
সুধার সাথে ডুয়েট গান আছে,
‘চোখ দুটো টানা টানা
মনে হয় চেনা চেনা।’
সুধা অনেক সুন্দর গান করে।
এছাড়া প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রো কিশোরের জন্য দুটি এবং তাওসীফ এর জন্য গান বেঁধেছি। এবার ঈদে গান গুলো আসবে অডিও ভিডিও হিসেবে। এ আমার গানের শ্রোতাদের জন্য সৃষ্টি, তাদের ভালোবাসার টানে আবার গানে ফিরে এলাম।
ইথুন বাবুর কথা-সুর ও সঙ্গীতে জনপ্রিয় এ্যালবাম গুলো:-
১. মনে রেখো – ইথুন বাবু
২. ঘুম আসেনা – ইথুন বাবু
৩. ও প্রিয়া তুমি কোথায় – আসিফ আকবর
৪. প্রিয়া কাছে নেই – মিক্সড
৫. মাধবী কি ছিল ভুল – আতিক হাসান
৬. চন্দনা – আতিক হাসান
৬. প্রিয়া তোমার মন বলে কিছু নেই- আতিক হাসান
৭. রিটার্ন টিকেট – মমতাজ
৮. ১টি চাদর হবে- সুমন
৯. ক্ষমা করে দিও – শাওন
১০. বড় ব্যথা দিলে অঞ্জনা – রানা
১১. মনে মনে মন – মিক্সড
১২. সে ছিল আমার প্রিয়তমা – বাদশ বুলবুল
১৩. বিরহের প্রেম – এন্ড্রোকিশোর, পলাশ
১৪. মন নদী – মিক্সড
১৫. সুখে থেকে ভাল থেকো – সনু নিগম, আতিক হাসান
১৬.মাধবী দু:খ দিবে কতো – শাহরুখ
১৭. পরাণ – পরাণ আহসান
১৮. এক ফালি রোদ – পরাণ আহসান।
এছাড়াও ইথুন বাবুর একাধিক গান রয়েছে। দেশের অনেক জনপ্রিয় শিল্পী ইথুন বাবুর সুরের গান করেছেন। ইথুন বাবুর সঙ্গীতে প্রত্যাবর্তনকে আমরা অভিনন্দন জানাই।