– রবিউল আউয়াল।
বাংলা সঙ্গীত ভান্ডার সমৃদ্ধিতে যাদের অবদান অতুলনীয় তাদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্ররের কন্ঠযোদ্ধা আবদুল জব্বার অন্যতম একজন। আজ এই বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী তাঁর কিডনি ও হার্টের ভাল্ব অকেজো হয়ে যাওয়ায় তিনি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার উন্নত চিকিৎসা কাজ চালিয়ে যেতে প্রায় আনুমানিক ৮০ লক্ষ থেকে ১ (এক) কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু এতো টাকার যোগান দেয়া এই গুণী শিল্পীর পক্ষে সম্ভব নয়। আজ জীবন মরন সন্ধিক্ষনে এসে দেশ বরেণ্য এই শিল্পী দেশের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগীতা চেয়েছেন।
জীবন জীবনের জন্য, মানুষ মানুষের জন্য। আজ এই গুণী শিল্পীর জীবন প্রায় বিপন্ন। আমরা কি পারিনা তার জন্য একটু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে। আমাদের দেশের অনেক বিত্তবান রয়েছেন, তাদের সহযোগীতার হাতটুকু কি একটু বাড়িয়ে দিতে পারিনা।
এসো সবাই হাতটা বাড়াই,
যারা গুণী জন আমাদের দেশের সম্পদ।
মনটা খুলে করো যদি দান,
বেঁচে যাবে শোন মানবতা আর বিপদ-।।
দেশ বরেণ্য এই গুণী শিল্পীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের শীর্ষ স্থানীয় ইলেকট্রিকেল, ইলেকট্রনিকস, অটোমোবাইলস, হোম অ্যাপ্লায়েন্স ও টেলিকমিউনিকেশন পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন গ্রুপের কর্তপক্ষ গতকাল ৩রা জুন ২০১৭ পাঁচ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন কালজয়ী গানের সঙ্গীত শিল্পীকে। সঙ্গীত শিল্পী আবদুল জাব্বারের হাতে চেক তুলে দেন ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক (পলিসি, এইচআরএম অ্যান্ড এডমিন) এস এম জাহিদ হাসান, সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর (পিআর অ্যান্ড মিডিয়া) মোঃ ফিরোজ আলম ও রাইজিং বিডির ফিচার সম্পাদক তাপস রায়। তাঁরা এসময় আবদুল জাব্বারের শারীরিক অবস্থা সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। কথা বলার সময় আবদুল জাব্বারের মেয়ে জানান তার বাবার কিডনির অবস্থা খুবই খারাপ এবং হার্টের ভাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া তার কোমরে ভীষন যন্ত্রনা হচ্ছে বলে জানায় তার মেয়ে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবদুল জাব্বারের চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যেই ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন বলে জানা যায়। এছাড়াও তাঁর আহব্বানে সাড়া দিয়ে প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর বড় ছেলে সানোয়ার গ্রুপ অব কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবর রহমান অবদুল জাব্বারের চিকিৎসার জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন।
আবদুল জাব্বারের চিকিৎসার ব্যাপারে শিগগিরই একটি মেডিকেল বোর্ড বসবে। মেডিকেল বোর্ডর চিকিৎসকদের মতামত জানার পরে তাঁর চিকিৎসার পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানা য়ায়।
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই গুনী সঙ্গীত শিল্পী আবদুল জাব্বার হারমোনিয়ান গলায় ঝুলিয়ে কলকাতার বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মুক্তির চেতনা সৃষ্টি করেছেন। সেই দুঃসময়ে স্বাধীন বাংলার বেতার কেন্দ্রে গেয়েছেন অসংখ্য গান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর গাওয়া বিভিন্ন গান প্রচার করে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রেরণা ও মনোবল সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে গনসঙ্গীত গেয়ে প্রাপ্ত ১২ লক্ষ টাকা স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রান তহবিলে দান করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি মুম্বাইয়ে ভারতের প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী হেমন্ত মখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরী করতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। তাঁর সঙ্গীত জীবনে অর্জন করেছেন স্বাধীনতা পদক, একুশে পদকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পদকসমূহ। বরেণ্য এই সঙ্গীত শিল্পীর কন্ঠে গাওয়া তুমি কি দেখেছো কভূ জীবরনর পরাজয়, সালাম সালাম হাজার সালাম, জয় বাংলা বাংলার জয়, মানুষ মানুষের জন্যে জীবন জীবনের জন্যে ইত্যাদি কালজয়ী গান অনন্ত কাল ধারন করবে বাংলার মানুষ।