প্রিয় পাঠক,
অভিনন্দন এবং ভালোবাসা নিবেদন করছি আপনাদের প্রতি। সঙ্গীতাঙ্গন এর উদ্দেশ্য সবসময়ই দেশের সকল সুরকার, গীতিকার, শিল্পী এবং সব ধরনের মিউজিসিয়ানদের পাশে থেকে আমাদের দেশীয় সঙ্গীতকে অনেক দুর এগিয়ে দুর নিয়ে যেতে। আমরা চাই সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে যেকোনো গানের আসল স্রষ্টা সম্পর্কে জানুক। এ জন্য আমরা সব সময় আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি।
কারণ দেশের একাধিক চ্যানেলে এ প্রজন্মের শিল্পীরা গানটির স্রষ্টাদের নাম না বলতে পেরে সংগ্রহ বলে থাকেন। এতে গানের মূল স্রষ্টা ব্যথিত হোন, এমন অনেক অভিযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই একটি গানের মূল স্রষ্টাকে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে আমরা বহুদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি, শুধুমাত্র সঙ্গীতকে ভালোবেসে। এবারের বিষয় ‘একটি গানের পিছনের গল্প’ আমাদের অনেক প্রিয় একজন সঙ্গীতপ্রেমী ভাই জনাব মীর শাহ্নেওয়াজ সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে জানাবেন আমাদের প্রিয় গানের পিছনের গল্প। এবং দেশের বরেণ্য সকল শ্রদ্ধাভাজন শিল্পীগন আপনারাও নিজ দায়িত্বে সঙ্গীতাঙ্গনের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনার নিজ সৃষ্টি অথবা আপনার প্রিয় গানের গল্প। এতে আর এ প্রজন্মের শিল্পীরা ভুল করবেন না গানের স্রষ্টাকে চিনতে।
আসুন সবাই গানের সঠিক ইতিহাস জানতে একতা গড়ি। – সম্পাদক
– তথ্য সংগ্রহে – মীর শাহ্নেওয়াজ…
“দু’জনে থাকে দুটো দেশে
দুজনেই গান বেচে খায়…” – অঞ্জন দত্ত…
এই নীল মনিহার, আবার এলো যে সন্ধ্যা শুধু দু’জনে’ এই দুটি গান দিয়ে দীর্ঘ চার দশক ধরে এদেশের তরুণ-তরুণীদের মনে প্রেমের বীজ বপন করে দিয়েছেন কিংবদন্তি সদ্য প্রয়াত সুরস্রষ্টা লাকী আখন্দ।
লাকী আখন্দের সুরারোপে করা প্রতিটি গানের কথার উপর সুরের যে প্রভাব তা যে কাউকেই সহজে মুগ্ধ করবে। লাকী আখন্দকে তাই সুরের বরপুত্র হিসেবে আখ্যায়িত করলে ভুল হবে না। সুর ও সঙ্গীতায়োজনের নান্দনিক ও বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনে তিনি কিংবদন্তী। সফট্-মেলোডি, মেলো-রক, হার্ড-রক যেটাতেই হাত দিয়েছেন সেটাই হয়ে উঠেছে এক একটি মাষ্টারপিস।
সঙ্গীতের বরপুত্র লাকী আখন্দের মেধা ও গুণের কদর আমাদের বুঝতে সময় লাগলেও পাশের দেশ ভারতের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী অঞ্জন দত্তের বুঝতে মোটেও সময় লাগেনি। লাকী আখন্দের দেখা একবারই পেয়েছিলেন তিনি। আর তাই, তিনি ১৯৯৯ সালে জি-সিরিজ থেকে প্রকাশিত তার সপ্তম এ্যালবাম ‘হ্যালো বাংলাদেশ (১৯৯৯)’ -এ ‘লাকী আখন্দ’ শিরোনামে লাকী আখন্দকে নিয়ে সে স্মৃতি লিরিকে বন্দী করেন আবেগ-অনুভূতির এক অসাধারণ কথামালা ও সুরে ।
“দু’জনে থাকে দুটো দেশে
দুজনেই গান বেচে খায়
গানে গানে কোন এক মঞ্চে
হঠাৎ দেখা হয়ে যায়।
একজন বাজায় গীটার
আরেকজন কীবোর্ডস
একজন গান গেয়ে চলে
আরেকজন দেয় সঙ্গ।
মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় গান
সেদিনের সেই জলসায়
একাকার হয়ে যায় ঠিকানা
কলকাতা কিংবা ঢাকায়…….”
লাকী আখন্দকে নিয়ে অঞ্জন দত্তের সেই ‘লাকী আখন্দ’ গানের পিছনের গল্প।
১৯৯৮ সালের এপ্রিলের ঘটনা।
ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে প্রথমবার গাইতে এসেছেন অঞ্জন। শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর অডিটোরিয়ামের মঞ্চে গাইছেন তিনি। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে এই আয়োজনের উদ্যোক্তা নিমা রহমান অঞ্জনকে জানিয়েছিলেন যে, লাকী আখন্দ আছেন দর্শক সারিতে যিনি একসময় খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। ব্যস, অঞ্জন মঞ্চে আমন্ত্রণ জানালেন লাকীকে।
মজার ব্যাপার হল তখন পর্যন্ত দু’জনের কেউই কারো গান শোনেননি। অঞ্জন নিছক আসর জমানোর জন্যই লাকীকে মঞ্চে আহ্বান জানালেন। এরপর শুরু হয়ে গেল যুগলবন্দী। একসঙ্গে গান গাইলেন লাকী ও অঞ্জন।
অঞ্জন দত্তের স্মৃতিতে এই অভিজ্ঞতা স্মরনীয় হয়ে থাকল এই জন্য যে, অন্য কোনো শিল্পীর সঙ্গে গাইতে গিয়ে এত উপভোগ করেননি অঞ্জন। এ নিয়েই গল্প লিখলেন অঞ্জন, লাকী আখন্দ শিরোনামের গানে।
অলংকরন – গোলাম সাকলাইন…