আজ বৈশাখের শেষ দিন। নববর্ষের মধ্য দিয়ে বাংলা নতুন বছরের আগমন ঘটে। নতুন দিনের সন্ধানে আমাদের ধরণি এবং জননীকে আলোকিত করে এলো ১৪২৩ সাল, উদযাপিত হলো বাংলা নববর্ষ।
এ বৈশাখের আনন্দে সবাই মুখরিত গ্রাম বাংলার সে কৃষাণ-কৃষাণী, সাধারণ মানুষ এবং শহরের ইটপাথরের আড়ালে থেকেও বৈশাখকে বরণ করে নিয়েছে সকল মানবসম্প্রদায়।
নববর্ষ উদযাপনে দেশবাসী মুখরিত হয়ে উঠে আনন্দ উৎসবে, বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চ করে অনুষ্ঠিত হয় নাচ গানের উৎসব। নববর্ষ উৎযাপনকে এক কথায় সঙ্গীত উৎসব বলা যেতে পারে।
কারন সেই দিনের উৎসবে নাচ গানকেই প্রাধান্য দেয়া হয় বা হয়ে আসছে সেই শুরু থেকে। উৎসবমুখর দিনটিতে দেশের ছোট বড় সব সঙ্গীত শিল্পীরা কমবেশী ব্যস্ত থাকেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। দেশের সবার মত আমাদের সঙ্গীত তারকারাও নববর্ষ উৎযাপন করলেন, কেমন করলেন তাঁরা আনন্দ উৎসব? আসুন জেনে নেই সঙ্গীতজ্ঞদের বৈশাখীর আনন্দ উদযাপনের বরণকথা-
রোমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা :-
নববর্ষ ভালোই কাটালাম, আলহামদুলিল্লাহ্। তবে আমি তো একজন কন্ঠ শ্রমিক তাই গান করতে দোড়ঝাঁপ ছিল। দুটো কর্পোরেট অনুষ্ঠান আর একটি চ্যানেল আর আমার এপার্টমেন্টেও গাইতে হয়েছে। মা ছিলেন কাছে আর মেয়ের বাসায় গেলাম এভাবেই কাটলো পহেলা বৈশাখের দিনটি। এই উদযাপনটা খুবই ভাল লাগে। তবে এটা পুরো বাংলায় ছড়িয়ে দিলে আরো ভাল লাগবে, কারণ এই নববর্ষের আসল মূল্যায়ন যারা বোঝেন তাদের অর্থাৎ কৃষকের ঘরে পহেলা বৈশাখের আনন্দ না থাকলে জাতিগত ভাবে এ
আনন্দ ভোগ স্বার্থপরতার সামিল।
ফাহমিদা নবী :-
অনেক ব্যস্ততা আর আনন্দে এবারের নববর্ষ উৎযাপন হলো। বাংলা নতুন বাছরের প্রথম দিনটি শুরুই হয় একটু বেশী আনন্দ নিয়ে সবারই আর আমাদের যারা এই সংস্কৃতি অঙ্গনের বাসিন্দা তাঁরাতো ব্যস্ত থাকি প্রিয় দর্শক শ্রোতাদের আনন্দ দেবার জন্য। খুব ভালো কেটেছে এবার ১লা বৈশাখ। নতুন শাড়ী পেয়েছি উপহার। মাছরাঙায় রাতে লাইভ শো ছিল। সন্ধ্যায় অফিসার্স ক্লাবে দুই বোনের একসাথে শো ছিল, বেঙ্গলের বর্ষবরণ উৎসব ছিল। ভীষণ ব্যস্ততায় কেটেছে।
দিনাত জাহান মুন্নি :-
নববর্ষতে ঢাকায় ছিলাম। সকাল থেকে পাঁচটি অনুষ্ঠান ছিল- ১. গুলশান পার্ক ২. পুলিশ কনভার্সন হল ৩. বনানী স্কুল ৪. কুরমিটোলা গল্ফ ক্লাব ৫. চ্যানেল আই
অনুষ্ঠান শেষ করে রাত ১১ টায় বাসায় ফিরেছি এবং ১২টায় গিয়েছি এয়ারপোর্টে। ২১ ঘণ্টা পর ১৫ তারিখ ০৩:৩০ এ পৌঁছিয়েছি ইউএসএ এবং রাতে বড় একটি শো করেছি আমেরিকাতে অবস্হিত গুনী কিংবদন্তীদের সামনে। তারপর ১৬ এবং ১৭ তারিখ টরেন্টোতে বৈশাখী অনুষ্ঠান করেছি। এই হল আমার নববর্ষ। ভাল কেটেছে আলহামদুলিল্লাহ্।
দিলশাদ নাহার কনা :- নববর্ষ খুব ভালো কেটেছে। সিলেটের জেলা শহরসহ দুইটি উপশহরে অনুষ্ঠান করেছি। প্রচুর মানুষের সমাগম হয়েছিলো জেলা শহরের এয়ারপোর্ট রোডে, এবং উপশহর দুইটিতে, কানায় কানায় লোক ভর্তি ছিল। সেখানে আমি আমার পরিচিত গানগুলো করেছি। একক সঙ্গীত সন্ধ্যা ছিল একটি আর বাকি দুটো ছিল লোকাল এবং সহশিল্পীদের সাথে।
ফিডব্যাক :-
‘মেলায় যাইরে
মেলায় যাইরে
বাসন্তী রঙ শাড়ী পরে
ললনারা হেটে যায়।
মেলায় যাইরে।’
বৈশাখী উদযাপনে খুব ব্যস্ত ছিলাম! এপ্রিলের ১৩ থেকেই আমরা বৈশাখীর অনুষ্ঠান শুরু করি। ১৩ তারিখে দুটি অনুষ্ঠান ছিল একটি ঢাকা সেনানিবাসে এবং অন্যটি বাংলাভিশনে লাইভ শো। নববর্ষের দিন তিনটি শো করেছি রমনা পার্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ধানমন্ডি আবাহনী মাঠে। ১৫ এপ্রিল আমরা ফ্যান্টাসি কিংডমে সুন্দর একটি শো করি। তারপর ১৬ই এপ্রিল ফাহমিদা নবী আপুর সাথে বাংলাভিসনে পারফর্ম করিছি। সঙ্গীত অনুষ্ঠান এবং স্টেজ শো নিয়ে আমরা খুব ব্যস্ত ছিলাম তাই আমরা এ বৈশাখীতে অন্য কোথাও সময় দিতে পারি নাই। নিজেদের পহেলা বৈশাখ উদযাপন কিছুটা মিস করেছি কিন্তু আমরা আমাদের দর্শকদের আনন্দ দিয়েছি প্রতিটি শোতে এটাই আমাদের বিশাল সাফল্য।
ধ্রুবতারা :- নববর্ষ ভালো কেটেছে তবে অসম্ভব গরম ছিল। নরসিংদীর ড্রিম হলিডে পার্কে কনসার্ট ছিল তাই ওখানেই সারাদিন চলে গেল। এশিয়ান টিভিতে ১৩ই এপ্রিল লাইভ ছিল এবং ১৭ই এপ্রিল মুজিব নগরে শো করেছি। সব মিলিয়ে খুব ভালো উদযাপন করেছে ধ্রুবতারা।
বাপ্পা এন্ড ফ্রেন্ডস :- খুবই ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে। তবে এবার বিকেলে নিজেদের পরিবারের সাথে থাকার সুযোগ পেয়েছি সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের জন্য। সকালে মাছরাঙার লাইভ করেছি আবাহনী মাঠে এরপর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (AIUB) শো করেছি। আরও দুটো শো ছিল তবে অসম্ভব গরমের কারনে করা সম্ভব হয়নি।
বৈশাখ আসে যেমন নতুন বছরের আগমন, আনন্দঘন পরিবেশ নিয়ে, ঠিক তেমনি অনেকের জীবনে নিয়ে আসে দুঃখ বেদনা। বৈশাখী ঝড় অনেক পরিবারকে করে দেয় ছিন্নবিন্ন।
নতুন বছর বয়ে আনুক সবার জন্য মঙ্গল এই শুভ কামনায় সঙ্গীতাঙ্গন।
অলংকরন – গোলাম সাকলাইন…