asd

গানের পিছনের গল্প – একটা ছিল সোনার কন্যা…

প্রিয় পাঠক,
অভিনন্দন এবং ভালোবাসা নিবেদন করছি আপনাদের প্রতি। সঙ্গীতাঙ্গন এর উদ্দেশ্য সবসময়ই দেশের সকল সুরকার, গীতিকার, শিল্পী এবং সব ধরনের মিউজিসিয়ানদের পাশে থেকে আমাদের দেশীয় সঙ্গীতকে অনেক দুর এগিয়ে দুর নিয়ে যেতে। আমরা চাই সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে যেকোনো গানের আসল স্রষ্টা সম্পর্কে জানুক। এ জন্য আমরা সব সময় আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি।
কারণ দেশের একাধিক চ্যানেলে এ প্রজন্মের শিল্পীরা গানটির স্রষ্টাদের নাম না বলতে পেরে সংগ্রহ বলে থাকেন। এতে গানের মূল স্রষ্টা ব্যথিত হোন, এমন অনেক অভিযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই একটি গানের মূল স্রষ্টাকে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে আমরা বহুদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি, শুধুমাত্র সঙ্গীতকে ভালোবেসে। এবারের বিষয় ‘একটি গানের পিছনের গল্প’ আমাদের অনেক প্রিয় একজন সঙ্গীতপ্রেমী ভাই জনাব মীর শাহ্‌নেওয়াজ সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে জানাবেন আমাদের প্রিয় গানের পিছনের গল্প। এবং দেশের বরেণ্য সকল শ্রদ্ধাভাজন শিল্পীগন আপনারাও নিজ দায়িত্বে সঙ্গীতাঙ্গনের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনার নিজ সৃষ্টি অথবা আপনার প্রিয় গানের গল্প। এতে আর এ প্রজন্মের শিল্পীরা ভুল করবেন না গানের স্রষ্টাকে চিনতে।
আসুন সবাই গানের সঠিক ইতিহাস জানতে একতা গড়ি। – সম্পাদক

– তথ্য সংগ্রহে মীর শাহ্‌নেওয়াজ…

শিল্পীঃ সুবীর নন্দী
সুরকারঃ মাকসুদ জামিল মিন্টু
গীতিকারঃ হুমায়ুন আহমেদ
ছবিঃ শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯)

প্রয়াত নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের অধিকাংশ গানের সুর করেছেন মাকসুদ জামিল মিন্টু। হুমায়ূনের সাথে তাঁর মানসিক বোঝাপড়া ছিল চমৎকার। জনাব মিন্টু বুঝতেন, স্যার কী আদায় করতে চাচ্ছেন। ফলে এই যুগলের কল্যাণে বাংলা গান কিছুটা হলেও ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে, সমৃদ্ধ হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ গানটি লিখে সুরকার মকসুদ জামিলকে বললেন, তিনি গানটি সুবীর নন্দীকে দিয়ে গাওয়াতে চান। হুমায়ূন আহমেদের কথামতো ‘সাসটেইন’ স্টুডিওতে গানের মুখটা সুর করার পর সুবীর নন্দীকে দিয়ে গাওয়ান সুরকার। পরে গানটি ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে ব্যবহার করা হয়।

‘কিছু শৈশব’ বইয়ে হুমায়ূন আহমেদ লেখেন, ‘এখন মনে হচ্ছে এই গানের বীজ বড় মামার রোপন করা। তাঁর ভাটি অঞ্চলের মেয়ে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে মূর্ত হয়ে উঠেছে। হুমায়ূন আহমেদের বড় মামার ভাটি অঞ্চলের এক রূপবতী মেয়ের সাথে আকদ হয়। সেই মেয়ে রুমালে ভরে বিশটা রুপার টাকা উপহার দেন কাজলকে (হুমায়ূন আহমেদকে)। কাজল রুপার টাকা প্যান্টের পকেটে রাখেন আর হাত দিয়ে ঝনঝন শব্দ করেন। আকদ হলেও কোনো এক কারণে বিয়ে ভেঙে যায়। কী কারণে ভেঙে যায় ক্লাস ফোরে পড়ুয়া কাজল অর্থাত্ হুমায়ূন আহমেদ বুঝতে পারেননি। তবে বহু বছর পর সেই মেয়েটিকে আবার হুমায়ূন আহমেদ খুঁজে পান শাওনের মাঝে। তিনি লেখেন – ‘আমি আরেকটি তথ্য বের করেছি। মেয়েটি দেখতে কার মতো। মেয়েটি অবিকল অভিনেত্রী শাওনের মতো’ (কিছু শৈশব, পৃ.-৫১)

মনে করিয়ে দিচ্ছি, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রের এই গানটিতে চিত্রায়ণে শাওনকেই ফোকাস করা হয়। গানটির প্রতিছত্রেই আবহমান গ্রামবাংলার শাশ্বত রূপটি চোখে পড়ে। হুমায়ূনের নাটক সিনেমা সব ক্ষেত্রেই নায়ক-নায়িকার প্রেমকে তিনি কোথাও সরাসরি উপস্থাপন করেননি। প্রেম বিষয়টি মনস্তাত্ত্বিকভাবে দেখাতে ভালোবাসতেন। এই গানেও ভাটি অঞ্চলের মেয়ের বিবরণ দিতে গিয়ে নানা প্রাকৃতিক উপমা ব্যবহার করেছেন, যেমনঃ জবা ফুল, দিঘল চুল, সবুজ বরণ লাউ ডগা, দুধ সাদা ফুল ইত্যাদি।

একটা ছিল সোনার কন্যা
মেঘ বরণ কেশ
ভাটি অঞ্চলে ছিল সেই কন্যার দেশ
দুই চোখে তার আহারে কি মায়া
নদীর জলে পড়ল কন্যার ছায়া।

তাহার কথা বলি
তাহার কথা বলতে বলতে নাও দৌঁড়াইয়া চলি।

কন্যার ছিল দীঘল চুল
তাহার কেশে জবা ফুল
সেই ফুল পানিতে ফেইলা
কন্যা করল ভুল
কন্যা ভুল করিস না
ও কন্যা ভুল করিস না
আমি ভুল করা কন্যার লগে কথা বলব না।

হাত খালি গলা খালি
কন্যার নাকে নাকফুল
সেই ফুল পানিতে ফেইলা
কন্যা করল ভুল।

এখন নিজের কথা বলি
নিজের কথা বলতে বলতে
নাও দৌঁড়াইয়া চলি
সবুজ বরণ লাও ডগায়
দুধসাদা ফুল ধরে
ভুল করা কন্যার লাগি
মন আনচান করে
আমার মন আনচান করে।

https://www.youtube.com/watch?v=r05YEJNJ97Q

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -

Latest Articles