প্রিয় পাঠক,
অভিনন্দন এবং ভালোবাসা নিবেদন করছি আপনাদের প্রতি। সঙ্গীতাঙ্গন এর উদ্দেশ্য সবসময়ই দেশের সকল সুরকার, গীতিকার, শিল্পী এবং সব ধরনের মিউজিসিয়ানদের পাশে থেকে আমাদের দেশীয় সঙ্গীতকে অনেক দুর এগিয়ে দুর নিয়ে যেতে। আমরা চাই সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে যেকোনো গানের আসল স্রষ্টা সম্পর্কে জানুক। এ জন্য আমরা সব সময় আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি।
কারণ দেশের একাধিক চ্যানেলে এ প্রজন্মের শিল্পীরা গানটির স্রষ্টাদের নাম না বলতে পেরে সংগ্রহ বলে থাকেন। এতে গানের মূল স্রষ্টা ব্যথিত হোন, এমন অনেক অভিযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই একটি গানের মূল স্রষ্টাকে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে আমরা বহুদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি, শুধুমাত্র সঙ্গীতকে ভালোবেসে। এবারের বিষয় ‘একটি গানের পিছনের গল্প’ আমাদের অনেক প্রিয় একজন সঙ্গীতপ্রেমী ভাই জনাব মীর শাহ্নেওয়াজ সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে জানাবেন আমাদের প্রিয় গানের পিছনের গল্প। এবং দেশের বরেণ্য সকল শ্রদ্ধাভাজন শিল্পীগন আপনারাও নিজ দায়িত্বে সঙ্গীতাঙ্গনের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনার নিজ সৃষ্টি অথবা আপনার প্রিয় গানের গল্প। এতে আর এ প্রজন্মের শিল্পীরা ভুল করবেন না গানের স্রষ্টাকে চিনতে।
আসুন সবাই গানের সঠিক ইতিহাস জানতে একতা গড়ি। – সম্পাদক
-তথ্য সংগ্রহে মীর শাহ্নেওয়াজ…
শিল্পীঃ মোহাম্মদ আবদুল জব্বার
সুরকারঃ মোহাম্মদ আবদুল জব্বার
গীতিকারঃ ফজল-এ-খোদা
গানটির শিল্পী মোহাম্মদ আবদুল জব্বার-এর জবানীতে শুনুন গানটি সৃষ্টির পিছনের গল্প।
“১৯৬৯ সাল। গণঅভ্যুত্থানের হাওয়ায় উত্তাল দেশ। এমনই প্রেক্ষাপটে কবিতা লেখার মানসে কবি ফজল-এ-খোদা হাতে কলম তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু কবিতার পরিবর্তে গানের কথা বেরিয়ে আসবে, তা হয়তো তিনি নিজেও বুঝতে পারেননি। একদিন হঠাৎ করেই তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। হাতে তুলে দিলেন অনবদ্য গীতিকথার টুকরো কাগজটি। টুকরো কাগজে লেখা কথাগুলো পড়েই শিহরিত হয়ে উঠলাম। মনে হলো, এটা তো আমারই কথা! মনের গহীনে সারাক্ষণ এ কথাগুলোই বেজে চলে! অথচ কখনও বলা হয়নি। এবার যখন বলার সুযোগ এলো, সে সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলাম না। দিনরাত ভাবতে থাকলাম কেমন হবে গানের সুর? কারণ গানটির সুর না করা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। এক সময় সুর করেও ফেললাম। অনেক ভেবে চিন্তেও যে সুর খুঁজে পাচ্ছিলাম না, তা হঠাৎ করেই চলে আসে মাথায়। কীভাবে কীভাবে যেন পুরো গানটারই সুর করে ফেলি। এরপর মনে হলো যে ভার বুকে চেপে ছিল তা থেকে মুক্তি মিলল। সুরটাও গানের সঙ্গে মাননসই বলে মনে হয়েছিল আমার। কিন্তু সমস্যা ছিল একটাই, গানটি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো পরিবেশ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রায় দুই বছর পর এলো সেই কাঙ্ক্ষিত দিন। সেটি ছিল ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ। রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে উজ্জীবিত হয়ে উঠলাম। ভাষণের পর চলল ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি গাইতে গাইতে ট্রাকে করে ঘুরে বেড়ানো। এই গানের কথা একদিন বঙ্গবন্ধুর কানেও পৌছেছিল। তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, তোর মতো এত পাতলাপুতলা একটা পোলা আইয়ুবের বিরুদ্ধে কথা কয়, ভয় করে না? তখন আমি তাকে বলেছিলাম, বাবা আপনে যদি ভয় না পান, তাহলে আমি পাব কেন? আমার মুখে এমন কথা শুনে সেদিন থেকে বঙ্গবন্ধু আমাকে ছেলে সম্বোধন করা শুরু করেছিলেন। তারপরও অনুমান করতে পারিনি, এই গানটি পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ী গান হয়ে উঠবে।” – মোহাম্মদ আবদুল জব্বার
সময় টেলিভিশনে এই গানের ওপর এক অনুষ্ঠানে ফজল-এ-খোদা বলেছিলেন, ‘আমি বশির আহমেদের জন্যই গানটি লিখেছিলাম।’ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত তাঁর ‘সঙ্গীতভাবনা’ নামে প্রবন্ধের বইতে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ শিরোনামের লেখা থেকে জানা যায়, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের পর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো যায় – এরকম একটি গানের কাঠামো এবং সুর নিয়ে বশির আহমেদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। তিনি গানটি লেখার পর বশির আহমেদকে দিয়েছিলেন কিন্তু তখন তা রেকর্ড করেননি। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালে মোহাম্মদ আবদুল জব্বার নিজের সুরে গানটি রেকর্ড করেন।
অলংকরন – গোলাম সাকলাইন…